মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩১ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
ডেক্স নিউজ :
ইয়াস আরও ঘনীভূত ও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার (২৬ মে) দুপুর নাগাদ উত্তর উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ মে) বিকেলে ইয়াস সম্পর্কিত ১২ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
বুলেটিনে বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাগুলোয় এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিসহ ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
পূর্ণিমার প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট অধিক উচ্চতর জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০০ আশ্রয় কেন্দ্র ও যে কোনো সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি ও আশ্রয় কেন্দ্রে আনয়ন, সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন,এনজিওসমূহ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও করোনায় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার কারণে দীর্ঘদিন ধরে অপরিষ্কার ও জরাজীর্ণ আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে করা হয়েছে। এদিকে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মাইকিং করা হচ্ছে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠন করা হয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ টিম ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেডিকেল টিম। মজুদ করা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণের শুকনো খাবার। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ০২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়াও উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরও ঘূর্ণিঝড় ইয়াস সবরকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তবে পণ্য উঠা নামা এখনো স্বাভাবিক। পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের গতি প্রকৃতি। সংকেত বাড়লেই জেটি থেকে জাহাজ সরানো সহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছে বন্দর কতৃপক্ষ।
বিকেল পৌনে ৪টার দিকে আবহাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ বিকেল ৩টায় (২৫ মে) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকট সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলালকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে বলেও বিশেষ বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী এলাকার নিচু এলাকা এবং চরাঞ্চলগুলোতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ টপকে ওই পানি প্রবেশ করছে। সুন্দরবনের দুবলার চরসহ জেলে পল্লিগুলোর বেশির ভাগ এলাকা এরই মধ্যে ডুবে গেছে।
ভারতের কলকাতার আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মঙ্গলবারই ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আরও শক্তি বাড়িয়ে ‘অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ রূপ নেবে, যা বুধবার ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে পৌঁছাবে। তখন বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। ঘূর্ণিঝড়টি কিছুটা দুর্বল হয়ে বুধবার দুপুর নাগাদ পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ ও ওড়িশার পারাদ্বীপের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল পেরিয়ে স্থলভাগে উঠে আসতে পারে। তখন বাতাসের বেগ ঘণ্টায় ১৬৫ কিলোমিটারে উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।