মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২২ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
ন্যাশনাল ডেক্স :
দশ দিন হাসপাতালে থাকার পরে করোনামুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন মাঝবয়সি কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিক। সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় ফের জ্বর, সঙ্গে প্রবল কাশি। শ্বাসকষ্ট শুরু হতে ফের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এবার ভেন্টিলেশনে।করোনা থেকে সেরে দিব্যি বাড়ি যাওয়ার পরেও কিছু রোগী ফের অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। দেখা যাচ্ছে, কারও হৃদযন্ত্র তো কারও ফুসফুস কিংবা লিভার, কিডনি বা অগ্ন্যাশয়ে এমন গোলোযোগ বেঁধেছে যে, প্রাণসংশয় হওয়ার জোগাড়! চিকিৎসকরা বলছেন, নেপথ্যে খলনায়ক করোনাই। তাই করোনা থেকে সেরে উঠলেও পরবর্তী মাসখানেক অতি সাবধানী হতে হবে। অন্যথায় যে কোনও সময়ে অতর্কিতে প্রাণঘাতী অসুখ হামলা চালাতে পারে। কোভিডে প্রায় তিন সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সল্টলেকের গৃহবধূ। বাড়ি ফেরার পর প্রথম ১০ দিন ভালোই ছিলেন। তার পর হঠাৎ অসহ্য মাথা যন্ত্রণা আর বমি। পরের দিন হাসপাতালে নিয়ে গেলে দেখা যায়, ব্রেন স্ট্রোক। প্রাণে বাঁচলেও পক্ষাঘাতের শিকার হলেন। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন বর্ধমান ডেন্টাল কলেজের ছাত্রটিও। কিন্তু মাস ঘোরার আগেই বুক ধড়ফড়ানি শুরু। কিন্তু হাসপাতালে গিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। আচমকা থেমে যায় হৃদযন্ত্র। এমন নজির বিক্ষিপ্ত ভাবে নজরে আসছে চিকিৎসকদের। তবে শতাংশের হিসেবে এমন নজির খুবই অল্প। লং কোভিডের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে বড়জোর ৫% বা কিছুটা বেশি। কিন্তু এই বিপুল জনসংখ্যার মাঝে সংখ্যার বিচারে এমন রোগী নেহাত কম নয়। এঁদের অধিকাংশেরই বয়স ৫০-৫৫ বছরের কম। অথচ চিকিৎসকদের আক্ষেপ, করোনামুক্তির পর একটু সতর্ক থাকলেই অনেকাংশে এড়ানো যায় দ্বিতীয় ধাক্কার এই বিপদ। সময়ে চিকিৎসা পেলে দূরে রাখা যায় আইসিইউ-কে। কিন্তু অসতর্ক হয়ে পড়লে তার অনেক বড় মাসুল দিতে হতে পারে ভবিষ্যতে। যদিও তা অনেকাংশেই এড়ানো সম্ভব।
ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ বিশ্বাস বলেন, ‘সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও শরীরে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির এমন কিছু রেশ ছেড়ে যায় কোভিড যে, তা পরে যে কোনও সময়ে প্রকট হয়ে প্রাণসংশয় ডাকতে পারে। তাই অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ। কোনও উপসর্গকেই খাটো করে দেখা চলবে না।’ তিনি জানান, কোভিড থেকে সেরে উঠেও রোগী অনেক সময়ে পুরো সুস্থ হন না। অর্থাৎ, লং কোভিড তাড়া করে তাঁকে।
আইডি হাসপাতালের পোস্ট-কোভিড ক্লিনিকের প্রধান চিকিৎসক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘সাধারণ ফ্লু, জ্বর-সর্দি-কাশি থেকে সেরে ওঠা আর করোনা থেকে সেরে ওঠা যে এক ব্যাপার নয়, তা লোকে বুঝতে চায় না। মনে রাখতে হবে, করোনা থেকে সেরে ওঠার পর কিছু সমস্যা হোক বা না-হোক, নিয়মিত চেক-আপ জরুরি। কিছু রক্তপরীক্ষাও করা দরকার। তাতে আগাম আঁচ মেলে বিপদের।’ তিনি জানান, অধিকাংশ সময়েই করোনামুক্তির পরেও খুব ধীরে শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়। চেক-আপে থাকলে, সেটা সহজেই বুঝে যান চিকিৎসক।
সঞ্জীবের মতে, করোনা থেকে সেরে উঠলেও তাই অনেক সময়ে বেশ কয়েকটি ওষুধ চালিয়ে যেতে হয় যেগুলো অনেকে ‘এই তো ভালোই আছি’ ভেবে বন্ধ করে দিয়েই অনিবার্য বিপদ ডেকে আনে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূণ গিরি জানাচ্ছেন, মাল্টি সিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিন্ড্রোমের মোড়কে এই লং কোভিডের ছায়া শিশুদের উপরও পড়ে। এবং অনেক সময়েই তা একেবারে প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।