রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন

News Headline :
রাজশাহী মহানগরীতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে আ’লীগের সাবেক সভাপতিসহ গ্রেফতার ৯ নওগাঁর ১নং ভাঁরশো ইউনিয়নে কৃষক দলের উদ্যোগে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে ডাকাতি মামলার সাজাপ্রাপ্ত ১ আসামি গ্রেফতার রাজশাহীতে ফের বাস ও সিএনজি চালকের সংঘর্ষ আহত ২ রাজশাহীর পুঠিয়ায় ইটের মাপ কমিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ পাবনায় বালুবাহি ট্রলি চাঁপায় পুলিশ সদস্য নিহত ১জন আহত আটক ২জন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার সমিতি’র নতুন কমিটি গঠন রাজশাহীতে ভরা মৌসুমে সারের তীব্র সংকট! আলু বীজ রোপণ করতে পারছেন না চাষিরা! দৈনিক আজকালের খবর পত্রিকা’র সাংবাদিক না ফেরার দেশে চলে গেলেন আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা চেক বিতরণ ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান

মাদক আর নগ্নতায় ভরপুর পাবনার ঈশ্বরদীর স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট!

Reading Time: 3 minutes

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি:
মাদক, আর নগ্নতায় ভরপুর ঈশ্বরদীর জয়নগরের স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট। সম্প্রতি রিসোর্ট নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হলে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়। এর পরই সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে চালানো হয় গোপন অনুসন্ধান। সেইসব অনুসন্ধানেও এসব নেতিবাচক তথ্য উঠে এসেছে।
বিভিন্ন সুত্র ও স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, স¦প্নদ্বীপ রিসোর্টে প্রতিনিয়ত মদ, নারী ও মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন বিতর্কিত ব্যক্তিদের অসামাজিক কার্যকলাপ ও উচ্চ শব্দের ডিজে পার্টির কারণে এলাকার পরিবেশ চরমভাবে নষ্ট হচ্ছে। রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত দেশী-বিদেশী নাগরিক, শিক্ষার্থী ও উচ্চ বিত্তের তরুণ-তরুণীরা রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের খপ্পরে পরে বিপুল অঙ্কের টাকা খোয়ানোর ঘটনা এখন নিত্যদিনের। অভিযোগ রয়েছে, এই রিসোর্টির মালিক জামায়াত-বিএনপির একজন অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। বর্তমানে তিনি ভোল (ভূমিকা) পাল্টিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন। বিগত জোট সরকারের সময় তার ভুমিকা কি ছিল তা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের মালিক আলহাজ্ব খায়রুল ইসলাম বিগত কয়েক বছর আগেও জয়নগর শিমুলতলা এলাকার একজন ট্রাক বন্দবস্তকারী ছিলেন। পরবর্তীতে চাউল ব্যবসার কমিশন এজেন্ট হয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর টাকা মেরে শিল্পপতি বনে যান। বিপুল পরিমাণ ব্যাংক লোন আর ওই সমস্ত ব্যবসায়ীদের টাকায় তিনি একের পর এক গড়ে তোলেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ তিনি প্রতিষ্ঠা করেন স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট।
সুত্র জানায়, ফ্রিডম পার্টির এক নেতার পরিচয়ে খায়রুল ইসলাম ঈশ্বরদীসহ আশেপাশের এলাকায় নিটল-নিলয় গ্রুপের ট্রাক বিক্রয়, জমি ক্রয়সহ বিভিন্ন কাজের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের একাধিক সুত্র জানান, মদ বিক্রয়ের সরকারী বা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের নেই। তারপরও দেশী-বিদেশী মদ এই রিসোর্টে বিক্রয় করা হয়। জনশ্রুতি রয়েছে, পার্শ্ববর্তী নাটোর, কুষ্টিয়া, যশোর, ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কম বয়সী মেয়েদের (কল গার্লদের) রিসোর্টে এনে অসামাজিক ব্যবসা করানো হয়। সুত্র জানায়, এই রিসোর্টে একটি লাক্সারি ভবন রয়েছে। যেখানে ১০টি রুম রয়েছে। প্রতিটি রুমে এক রাতের জন্য কাস্টমারদের ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। এই ব্যয়বহুল রুমগুলো রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত উচ্চ শ্রেনীর রাশিয়ানসহ দেশের সরকারী, বেসরকারী হাইপ্রোফাইলের লোকজনের নামে বরাদ্দ থাকে। এতে প্রতিদিন রুমগুলো থেকে উপার্জন হয় দেড় লাখ টাকা। প্রতিদিন এতো টাকা উপার্জন হওয়ায় রিসোর্ট মালিক বর্তমানে তাঁর অন্যান্য ব্যবসার চেয়ে রিসোর্ট ব্যবসার দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছেন বলেও জানায় ওই সুত্রটি। তবে জনবসতি এলাকায় রিসোর্ট হওয়ায় এলাকাবাসীরা পড়েছেন চরম বেকায়দায়। সারারাত রিসোর্টে মদ পান আর উচ্চ শব্দের ডিজে পাটির নামে অর্ধ উলঙ্গ নৃত্য, হৈইহুল্লোড়। আর বিশেষ বিশেষ দিবসে উচ্চ শব্দের বাজি ফোটানোও মারাক্তক ঝুকি হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের। এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষ এভাবে উচ্চ শব্দে ডিজে পার্টি না করার জন্য রিসোর্টে এসে অভিযোগ করেন। কিন্তু রিসোর্ট মালিক অত্যান্ত প্রতাবশালী হওয়ায় সে সব অভিযোগ কর্নপাত করছেন না। আর এখানে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের লোকজনসহ প্রভাবশালীনেতাদের চলাফেরা থাকায় এলাকাবাসী বর্তমানে অভিযোগ করাও বন্ধ করে দিয়েছেন বলেও সুত্রগুলো দাবী করেন।
এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নড়াচড়া শুরু হয়। রিসোর্ট মালিক খায়রুল ইসলামের অতিত ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিচয় এবং কর্মকান্ড সম্পর্কে খোঁজ নিতে মাঠে নেমেছেন তারা। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সুত্র জানায়, খায়রুল ইসলাম আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন। তিনি এর আগে বিএনপির পদধারী নেতা ছিলেন। সুত্র জানায়, রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত রাশিয়ানদের টার্গেট করে খায়রুল ইসলাম নির্মান করেছেন স্বপ্নদ¦ীপ রিসোর্ট। স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট ও হোটেল উদ্বোধনের পর থেকেই সেখানে দেশী-বিদেশী নারী পুরুষের অশ্লীল নৃত্য, মদ সরবরাহ শুরু হয়। চালুর কিছুদিন পর গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি রিসোর্টি অনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে। সেই অনুষ্ঠানে খায়রুল ইসলাম মাইকে সকলের সামনে দম্ভের সাথে বলেন, “বাইরে সমালোচনা করে আমার কি করবেন? আমি রাশিয়ানদের পকেট থেকে টাকা বের করার জন্যই এই রিসোর্ট করেছি। টাকা নিয়ে তাদের রাশিয়া ফিরে যেতে দেব না”।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক সুত্র জানায়, রিসোর্টির মালিক প্রতিনিয়ত মদ সংগ্রহ করে পরিবেশন করে আসছে রাশিয়ানসহ রূপপুর প্রকল্পের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের কাছে। রিসোর্টে মদ ও নারী সরবরাহের জন্য রয়েছে তাঁদের একাধিক দালাল চক্র। এরা ঢাকা, চট্ট্গ্রাম, রাজশাহীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণীদের নিয়ে আসার পর হোটেলে রাতভর উন্মুক্ত নেশায় তাঁদের দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করানো হয়। তাঁদের মনোরঞ্জনের জন্য বিপুল অঙ্কের টাকা নেওয়া হয়। এছাড়াও কিছু দোভাষী রাশিয়ান শ্রমিক রিসোর্টের কক্ষ ভাড়া নিয়ে ওই সমস্ত পতিতাদের নিয়ে রাতভর আমোদ ফূর্তি করে। শুধু তাই নয়; রিসোর্টে রাশিয়ানদের হাত হয়ে বিভিন্ন ব্যান্ডের নামীদামী মদ চলে যাচ্ছে স্থানীয় লোকজনদের হাতে। এক শ্রেনীর অপরাধী রিসোর্টে এসে রাশিয়ান নাগরিকদের মাঝে সরবরাহ করছে ফেন্সিডিল, ইয়াবা ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। এতে চরমভাবে নষ্ট হচ্ছে এলাকার সামাজিক পরিবেশ। রিসোর্টটিতে অসামাজিক কার্যকলাপে চরম উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় রয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি রিসোর্ট মালিক খাইরুল ইসলামকে মৌখিক ভাবে সতর্ক করা হলেও সেখানে থেমে নেই অসামাজিক কার্যকলাপ। এলাকাবাসী জানতে চান, এত কিছুর পরও খায়রুল ইসলামের অবৈধ ও অসামাজিক কার্যকলাপের উৎস কি?
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঈশ^রদী সার্কেলের (খ) ইনচার্জ (পরিদর্শক) মোঃ সানোয়ার হোসেন জানান, খায়রুল ইসলামের স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টে মদ বিক্রয়ের কোন অনুমোদন নেই। সেখানে মদ বিক্রয় করার খবর পেয়েছি। অবৈধভাবে মদ বিক্রয়ের বিষয়ে নজর রাখা হয়েছে বলেও দাবী করেন এই কর্মকর্তা।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের বিষয়ে অনেক নেতিবাচক তথ্য তাদের কাছে এসেছে। সেই তথ্য বিশ্লেষণসহ সময়মত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ফিরোজ কবির জানান, স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। অনেক তথ্যও এসেছে তাদের কাছে। অবৈধ কোন কাজ সেখানে করতে দেওয়া হবে না। তিনি যত বড়ই ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হোক না কেন প্রমান সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com