সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৩ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফরাসি লেখক ও দার্শনিক ভলতেয়ার ১৭৯৪ সালে লিখেছিলেন, ‘তুমি যদি একজন সুইস ব্যাংকারকে জানালা দিয়ে ঝাঁপ দিতে দেখো, তাহলেও তাকে অনুসরণ করো, নিশ্চিত জেনো সেখানে অবশ্যই মুনাফা করার মতো কিছু আছে।’
সুইজারল্যান্ডের অনেক সুনাম আছে। সুইস চকলেট পৃথিবীসেরা। ভারী শিল্পেও দেশটির সুনাম আছে। পনির খেতে হলে যেতে হবে সুইজারল্যান্ডে। দেশটিকে বিশ্বের ব্যাংক খাতের রাজধানী বলা হয়। এবার একটু দুর্নামও করা যাক। কালোটাকা গোপন রাখার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জায়গা কিন্তু সুইজারল্যান্ড। সুইস ব্যাংকের সুখ্যাতি বা কুখ্যাতি বিশ্বজোড়া।
ব্যাংক গ্রাহকদের তথ্য গোপন রাখাটাই এ দেশের আইন। এ কারণেই আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়াসহ তৃতীয় বিশ্বের দুর্নীতিবাজ সামরিক-বেসামরিক শাসক-স্বৈরশাসক, রাজনীতিবিদ এবং উন্নত বিশ্বের অসাধু ব্যবসায়ীদের অর্থ লুকিয়ে রাখার বড় জায়গা এই সুইস ব্যাংক। অর্থ বা সম্পদ লুকিয়ে রাখার জন্য এর চেয়ে বড় জায়গা পৃথিবীতে নেই।
ইদানীং অবশ্য প্রশ্ন উঠছে, চাপও বাড়ছে সুইস ব্যাংক ব্যবস্থার ওপরে। ফলে গোপনীয়তা আইন থেকেও খানিকটা সরে আসতে হয়েছে সুইজারল্যান্ডকে। বছর শেষে গচ্ছিত অর্থের হিসাব প্রকাশ করে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে বাংলাদেশের নাগরিকদের রাখা ব্যাংক হিসাবের তথ্যও পাওয়া যায়। এটাও এক ধরনের অগ্রগতি। তবে এখন অনেক দেশই গ্রাহকের তথ্য পাওয়ার চুক্তিও করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে তবে কি সুইস ব্যাংক তার জৌলুশ হারাচ্ছে? সুইজারল্যান্ড কি আর অর্থ গোপন রাখার নিরাপদ জায়গা নয়?
সুইস ব্যাংক: যেভাবে শুরু
সুইস ব্যাংকব্যবস্থার ইতিহাস বেশ পুরোনো। সুইস ব্যাংক, গোপন অর্থ আর গোপনীয়তা—এই তিন বিষয়ও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আর এই গোপনীয়তার শুরু সপ্তদশ শতকের শুরু থেকেই। মূলত তখন ইউরোপের অভিজাত শ্রেণিকে রক্ষা করার জন্যই ১৭১৩ সালে গ্রেট কাউন্সিল অব জেনেভা ব্যাংক গোপনীয়তা আইন প্রণয়ন করেছিল। এখানে অবশ্য ধর্মেরও একটা ভূমিকা ছিল। পাশের দেশ ফ্রান্সের ব্যাংকগুলো ছিল মূলত খ্রিষ্টীয় ধর্মের প্রোটেস্ট্যান্টদের দখলে। ক্যাথলিকেরা এসব ব্যাংকে অর্থ রাখতে আগ্রহী ছিলেন না। ফ্রান্সের সে সময়ের ক্যাথলিক রাজাও তখন সুইস ব্যাংকগুলোতে অর্থ রাখা শুরু করেন। ১৭৮০ সালের দিকে সুইস ব্যাংকে রাখা অর্থ বিমার আওতায় নিয়ে এলে আর্থিক নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার হয়। ১৮১৫ সালে সুইজারল্যান্ড একটি নিরপেক্ষ দেশের মর্যাদা পেলে সুইস ব্যাংকে অর্থপ্রবাহ অনেক বেড়ে যায়।
ছোটখাটো এক গৃহযুদ্ধের পরে ১৮৪৮ সালে গঠিত হয় সুইস ফেডারেশন। শুরু থেকেই গণতান্ত্রিক কাঠামো দেশটিকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেয়, যা ব্যাংকের গোপনীয়তা নীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে মনে করা হয়। নিরপেক্ষ দেশ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে আছে ব্যাংক গ্রাহকদের তথ্য গোপন করার নীতি, ফলে সুইস ব্যাংকগুলোর ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠে।