বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
দেশের রাজনীতিতে চলছে অবরোধের উত্তাপ। একের পর এক অগ্নি-সন্ত্রাস ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। রাজশাহীতেও অবরোধকে কেন্দ্র করে সহিংসতা বাড়ছে। তবে সন্ত্রাসী অপতৎপরতা রুখতে সর্বাত্মক প্রস্তুতির কথা বলছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীলরা। গত ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশ পÐ হয়ে যাওয়ার পর রোববার (২৯ অক্টোবর) সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছিলো দলটি। এদিন রাতেই হরতালের ডাক দেয় জামায়াতে ইসলামও। এর পরপরই রাজশাহীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়তে থাকে। মোড়ে মোড়ে পুলিশের অবস্থানসহ সড়কে টহল বাড়ানো হয়। নিরাপত্তা বলয়ে ঢেকে ফেলা হয় পুরো নগরী। তবে ২৯ তারিখের সকাল-সন্ধ্যা হরতালে রাজশাহী নগরীতে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটলেও বাঘায় একটি প্রাইভেট কারে আগুন দিয়েছিলো দুর্বৃত্তরা। প্রাইভেটকারে থাকা কেউ হতাহত না হলেও গাড়িটি সম্পূর্ণ ভস্মিভুত হয়। হরতালের পর ৭২ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি-জামায়াত। প্রথম দফায় ৩১ অক্টোবর, ১ নভেম্বর ও ২ নভেম্বর অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। ৩১ অক্টোবর প্রথম দফার প্রথম দিনের অবরোধে রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ এলাকাগুলোতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছিলো। এদিন ভোরে কাদিরগঞ্জ গ্রেটার রোড এলাকায় টায়ার জ্বালানো হয়েছিলো। নগরীর লিলি সিনেমা হলের মোড়, কাটাখালী ও কাশিয়াডাঙ্গায় বিক্ষোভ মিছিল করেছিলো বিএনপি। তবে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। ১ নভেম্বর প্রথম দফার দ্বিতীয় দিনের অবরোধে রাজশাহীতে সবকিছুই স্বাভাবিক ছিলো। অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটে নি। ২ নভেম্বর প্রথম দফার তৃতীয় দিন সকালে রাজশাহী নগরীর বিনোদপুর বাজারে অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল বের করে ছাত্রদল। ছাত্রদলের সেই মিছিল থেকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই অবরোধ সমর্থনকারীরা সড়ক থেকে চলে যায়। প্রথম দফার অবরোধের শেষে আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের ঘোষণা দেয় বিএনপি-জামায়াত। দ্বিতীয় দফার প্রথম দিন ৫ নভেম্বর রোববার নগরীর বুধপাড়া বাইপাসে ইট ভেঙে সড়কে অবরোধের চেষ্টাও করা হয়।
চারঘাটে সরদহ রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে রেললাইনে আগুন দিয়েছিলো দুর্বৃত্তরা। তবে ট্রেন চলাচলে বিঘœ ঘটে নি। এছাড়া এদিন রাতে নগরীর রেলওয়ে স্টেশনের মেইন গেটে দুর্বৃত্তরা দুটি ককটেল রেখে যায়। এরপরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পুরো স্টেশনে অভিযান চালায়। পরে ককটেল দুটি নিস্ক্রিয় করেছে বোম ডিস্পোজাল ইউনিট।
অবরোধের দ্বিতীয় দিনে ৬ নভেম্বর সোমবার মোহনপুরে একটি পণ্যবাহী ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে পুরো ট্রাকটি পুড়ে যায়। স্থানীয়রা আগুন নেভানোর পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে যায়। এদিকে, সারাদেশে আবারও আগামী বুধবার ভোর ৬টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি। সোমবার বিকেলে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচির ঘোষণা করেন। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা ও পÐ করা, নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হয়। অবরোধকে কেন্দ্র করে রাজশাহীতে সহিংসতা ঠেকাতে মাঠে তৎপর থাকার কথা জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র্যাব-৫ এর লে.কর্নেল (অধিনায়ক) রিয়াজ শাহরিয়ার পিএসসি, জি জানান, অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে প্রথম থেকেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছেন তারা। রাজশাহী নগরীতে এখন পর্যন্ত অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটে নি। দুই উপজেলায় অগ্নি-সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
রাজশাহীর পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুর রহমান পিপিএম বলেন, অবরোধকে সামনে রেখে অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে রুটিন অনুযায়ী তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছি। এরমধ্যেও দুইটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ৫ জনকে এরইমধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বাকিদেরও দ্রæত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে আমরা সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোঃ জামিরুল ইসলাম জানান, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ কাজ করছে।