বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৬ অপরাহ্ন

News Headline :
ঐতিহ্যবাহী পাবনা প্রেস ক্লাবের অনিয়ম রংপুরে হারাগাছে ভূয়া আত্মীয় পরিচয় দিয়ে মামলাকারীর মামলা প্রত্যাহার ও জড়িতকে গ্রেফতারের দাবি প্রবাসী যুবকের সাথে প্রতারণা করে অর্ধযুগের কষ্টার্জিত আয় আত্মসাতের অভিযোগ এক নারীর বিরুদ্ধে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলো যমুনা রেলওয়ে সেতু পোষ্য কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে নয়-ছয়; রাবিতে ফের আন্দোলনের প্রস্তুতি রাজশাহীতে পারিবারিক পুষ্টি বাগানে স্বাবলম্বী হচ্ছে গ্রামীণ প্রান্তিক নারীরা পাবনা প্রেসক্লাবের অনিয়ম তদন্তে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠন মহানগরীতে স্বর্ণের দোকানে চুরির অভিযোগে জনতার হাতে আটক নারীকে পুলিশে সোপর্দ পাঁচ শতাধিক নবীন শিক্ষার্থীকে বরণ করলো হাবিপ্রবি ছাত্রশিবির মানুষকে যারা কষ্ট দেয় তাদেরকে পরিহার করুন : এ.কে.এম. আমিনুল হক

আবারও কৃষকদের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে পাট

Reading Time: 3 minutes

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:

আবারও নতুন করে কৃষকদের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে সোনালি আঁশ’ খ্যাত পাট।
ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার যে লড়াইটা এতদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা তার সুফল আসতে শুরু করেছে। আবারও রঙিন হয়ে উঠেছে কৃষকের লালিত স্বপ্ন। প্রতিবছর এক বুক আশা নিয়ে পাটের আবাদ করেন গ্রামের সাধারণ কৃষক। রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাটি থেকে সবুজ পাটকে রূপান্তরিত করেন সোনালি বর্ণে। এরপরও কষ্টার্জিত ফসল হাটে বিক্রি করতে গিয়ে পড়েন কৃষকরা। কখনও ভালো দাম পান; আবার কখনও একেবারেই পান না! তারপরও লাভের আশায় প্রতি বছরই পাটের আবাদ করছিলেন কৃষকরা। তবে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। গেল দুই বছরের ধারাবাহিকতায় পাটের সোনালি অতীত ফেরার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে আবারও।এ বছর বর্ষা শেষে বৃষ্টির দেখা মিলেছে ভাদ্রে। আর শরতের শুরু থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। সেই বৃষ্টির পানিতে খাল-বিল, ডোবা-নালা ভরে উঠেছে। তাই কেউ কষ্টার্জিত সোনালি আঁশ ঘরে তুলছেন আবার কেউ জাগ দিয়ে, শুকিয়ে উপযোগী করে বিক্রির জন্য তুলছেন হাট-বাজারে। তাই সোনালি পাট নিয়ে এখন ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষকের। সরেজমিনে রাজশাহীর পবা ও পুঠিয়া উপজেলার হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে পাটের দাম বেশ ভালো। গুণগতমান অনুযায়ী ২ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ পাট। রাজশাহীর পবা উপজেলার ঘোলহাড়িয়া গ্রামের কৃষক মোঃ বাবু বলেন, গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এই বছর তিন বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছিলেন। এবারও দাম ভালো। তার প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয়েছে ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। আর ফলনও ভালো হয়েছে। এক বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ মণ পাট পাওয়া যাচ্ছে। খালে-বিলে পানি পাওয়ায় এবার শেষ মুহূর্তে পাট জাগ দেওয়ায় খুবই সুবিধা হয়েছে। তার মত অনেক কৃষক এরই মধ্যে বাজারে নতুন পাট তুলতে শুরু করেছেন। আর এখন কৃষকরা পাটের দামও ভালো পাচ্ছেন।পবার পাট চাষি জামাল জানান, ন্যায্য মূল্য পাওয়ার আশায় সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। এ বছর পাটের দাম ভালো পেয়েছেন। বৈরী আবহাওয়ার পরও এ বছর তিনি বিঘা প্রতি সাড়ে ১২ মণ করে পাট পেয়েছেন। প্রতি মণ পাট ৩ হাজার টাকা দরে ৩২ মণ পাট বিক্রি করেছেন এবং ভালো দামের আশায় আরও সাড়ে ৩০ মণ পাট মজুদ করেছেন বলেও জানান এই কৃষক।পবার নওহাটা বাজারের পাট ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকেই হাট-বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। এখনও উঠছে। তবুও দাম কমেনি। গত বছর এই সময় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে প্রতি মণ পাট কিনেছিলেন। বর্তমানে বাজারে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা দরে পাট কিনছেন। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু বেশি দামে পাট কিনে তার মত ব্যবসায়ীরা আবার একটু আশঙ্কার মধ্যেও আছেন। কারণ পাট রপ্তানি যদি কোনো কিছুর জন্য কমে যায় তাহলে হঠাৎ করেই পাটের দামও কমে যাবে। বিশেষ করে ভারতে পাট রপ্তানি কমে গেলে দেশের পাট চাষিরা ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাবেন। এতে পাট ব্যবসায়ীদের ব্যাপক লোকসানের শিকার হতে হবে।
পুঠিয়া উপজেলার ভাল্লুকগাছি গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। দুই বিঘা জমি থেকে ২৮ মণ পাট পেয়েছেন। গত হাটে দাম ভালো পেয়ে ২০ মণ পাট ৩ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।পাটের চাষাবাদ ও ফলন প্রশ্নে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. মোজদার হোসেন বলেন, প্রায় ১৫/২০ দিন থেকে রাজশাহী জেলার হাটে-বাজারে নতুন পাট আসতে শুরু করেছে। আর বাজারে পাটের এখন দাম বেশ ভালো। দাম পাওয়ায় কৃষকরাও খুশি। আশা করা যায় আগামী মৌসুমে পাটের আবাদ আরও বাড়বে।
তিনি আরও জানান ২০২২-২৩ অর্থ বছরে রাজশাহী জেলায় পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজার ৭৬০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ১৫৮ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন হয়েছে ৪১ হাজার ৯৯৮ মেট্রিক টন। গত পাঁচ বছর কৃষকরা পাট চাষে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তারপরও এলাকার কৃষকরা সোনালি আঁশের সুদিনের আশায় প্রতি বছর কিছু জমিতে পাট চাষ করে আসছেন। আগামী দিনেও পাটের ভালো দাম পেতে থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন এবং পাট চাষে আরও আগ্রহী হয়ে উঠবেন।রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পরিচালক কাজী মোঃ সাইদুর রহমান জানান, গত বছর রাজশাহী অঞ্চলে এক কোটি ডলারের ওপরে পাট রপ্তানি করা হয়েছিল। ডলারের মূল্য বাড়ার কারণে এবছর ভারতীয় ব্যবসায়ীরা পাট আমদানি কম করছেন। তা সত্ত্বেও প্রতিদিনই কমবেশি শুল্কমুক্তভাবে পাট রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com