শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৩ অপরাহ্ন

News Headline :
পাবনায় “তারুণ্যের উৎসব ২০২৫”: আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে নবাগত জেলা প্রশাসকের কর্মদিবস শুরু!! গোবিন্দগঞ্জে ত্যাগী নেতাদের মাঝে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ ১২০ শিক্ষার্থীদের পথচলা পুরাতন কাঠের তৈরি সাঁকো ভাঙ্গলেই সমস্যা হবে শেরপুরে নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকে দুর্বৃত্তদের আগুন লাগানোর চেষ্টা মাদক সমাজের ক্যান্সার এটা প্রতিরোধে প্রশাসনের অনিহা-শিমুল বিশ্বাস গণমাধ্যমে বিকৃত তথ্য প্রচার ইসলামপুরে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পক্ষ থেকে প্রতিবাদী ব্রিফিং কৃষি অফিসের সামনে থেকে প্রণোদনার সার-বীজ পাচার রাজনৈতিক দলের পদধারী কেউ প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির কোনো পদে থাকতে পারবে না-সারজিস আলম গাবতলীতে এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের দাবিতে শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধ এই জনপদকে যারাই পদদলিত করেছে বাঙ্গালি তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছে-শিমুল বিশ্বাস

ইসলামপুরে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প

Reading Time: 3 minutes

শরিফ মিয়া, জামালপুর :
বাঁশ আর বেতকেই জীবিকার প্রধান বাহক হিসাবে ধরে রেখেছেন ইসলামপুর পৌর শহরের মৌজাজাল্লা, দরিয়াবাদ, কাঁচারীপাড়া ও ভেংগুড়া গ্রামসহ অন্যান্য এলাকার বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র শিল্পীরা। দিন দিন বাঁশ আর বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় অভাব অনটনে দিন পার করছেন শিল্পীরা। কোন এক সময়ে মানুষ একটু অবসর পেলেই বাঁশের মাচা, মই, চাটাই, ডোল, গোলা, ওড়া, বাউনি, ঝুড়ি, ডুলা, মোড়া,মোরগী রাখা খাচা সহ বিভিন্ন ঘরের কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র বানাতে বসে পড়তো। গ্রাম বাংলায় এখন আর এমন দৃশ্য চোখে পড়ে না। বিলুপ্তির পথে এখন এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প। সাধারণত গ্রামের লোকেরাই বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত। তাই এ শিল্পকে গ্রামীণ লোকশিল্প বলা হয়। কালের বিবর্তন এবং নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে পুরনো এ শিল্পের ঐতিহ্য আজ আমাদের মাঝ থেকে হারাতে বসেছে। তার স্থানে দখল করে নিচ্ছে বিভিন্ন প্লাস্টিক ও কাঠের তৈরি জিনিসপত্র। যার মধ্যে মধ্যে প্লাস্টিক পণ্যের কদর এখন সবচেয়ে বেশি। উপজেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো যুগযুগ ধরে মানবেতর জীবনযাপন করলেও তাদের ভালোভাবে কেউই খোঁজ রাখে না। বাঁশের তৈরি গৃহস্থালী সামগ্রী বানিয়ে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোর একমাত্র পেশা। কিন্তু সা¤প্রতিক সময়ে তাদের তৈরি বাঁশের পণ্যের ন্যায় একই ধরনের প্লাস্টিক পণ্য বাজার দখল করে নেয়ায় সীমিত হয়ে পড়েছে তাদের রোজগারের পথ। বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে শত বছরের পুরনো বাপ-দাদার হস্তশিল্পের পেশা। ইসলামপুর পৌরসভার মৌজাজাল্লা (পাটনী পাড়া) গ্রামসহ আশপাশের বেশ কিছু পরিবার এ পেশায় নিয়োজিত থাকতে দেখা যায়। এছাড়াও পৌর শহরের দরিয়াবাদ, ভেংগুড়া, কাচারী পাড়া নাম কিছু স্থানে এ ধরণের বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের তৈরি করতে দেখা গেছে। মৌজাজাল্লা (পাটনী পাড়া) গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক হোসেন শাহ্ ফকির জানান, আমরা ছোট বেলায় দেখতাম ইসলামপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে সাধারণ মানুষ বাঁশের তৈরি কুলা, চালুন, মোরগী রাখার খাচা ক্রয় করার জন্য পাথর ঘাটা ব্রীজে নৌকা দিয়ে এসে ভিড় করত। মাঝে মাঝে আমাদের বাঁশের ঝাড় থেকে বাঁশ শিল্পীরা বাঁশ ক্রয় করে নিয়ে যেত। বর্তমানে প্লাস্টিকের নানা ধরণের পণ্য সামগ্রী বাজারে প্রবেশ করায় এবং বাঁশের তৈরি জিনিসের চেয়ে কম দামে পাওয়া যায় যার কারণে আগের মতো ভিড় দেখা যায় না। অনেকগুলো পরিবার এ পেশার সাথে জড়িত ছিল। অভাব অনটনের কারনে জায়গা-জমি স্থানীয়দের মাঝে বিক্রি করে, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে তারা বসবাস করছে। বাঁশ শিল্পী বরেন দাস বলেন, আমি এ পেশার সাথে প্রায় ৫০ বছর যাবৎ জড়িত। চোখের সামনে কত কিছু দেখলাম। আমাদের পূর্বপুরুষরা মৃত্যু বরণ করার পর অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। আবার অনেকেই ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টেসে চাকরি করছে। তিনি আরও জানান, এক সময় বাঁশ দিয়ে কুটির শিল্পের কাজ করার জন্য তাদের ব্যাপক পরিচিতি লাভ হয়েছিল। বর্তমানে সে পরিচিতি এখন বিলুপ্তির পথে। তাদের পরিবারের ছেলে-মেয়ে সবাই বাঁশ দিয়ে কুটিরশিল্পের কাজ করতে পারে। পুরুষেরা গ্রাম গঞ্জ থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে বাড়িতে আনে এবং বাড়িতে মেয়েরা সহ সবাই মিলে এই বাঁশ শিল্পের কাজ করে। তিনি নিজেও কিশোর বয়স থেকে বাঁশ দিয়ে ডালি, কুলা, টোঁপা, খলই, ঝাঁকা, ডুলি, চালা, চালুন সহবিভিন্ন গৃহস্থালী পণ্য তৈরি করে আসছেন। ননী গোপাল দাস বলেন, যুগযুগ ধরে চলে আসা তাদের পৈত্রিক এ পেশার এক সময় অনেক কদর ছিল। চাষাবাদের জমি না থাকলেও পৈত্রিক পেশায় তাদের দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জুটত। কিন্তু বেশ কয়েক বছর থেকে তাদের পৈত্রিক পেশা হুমকির মুখে পড়েছে প্লাস্টিক পণ্যের বাজার দখল করে নেয়ার কারণে। আগে এ শিল্প থেকে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। বর্তমানে সারা দিনে কোন রকমে ৪টি কুলা বানানো যায়। ৪টি কুলার মূল্য আর কত টাকা। ৪টি কুলা বিক্রি করলে সর্বোচ্চ বাজার মূল্য পাওয়া যায় ৩০০টাকা। এ নিয়ে কি আর আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব। কালের বিবর্তনে উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অনেকেই এ পেশা ছেড়েছেন বহু আগেই। মানুষ বাড়ার সাথে সাথে বন-জঙ্গল উজাড়, বাঁশ উৎপাদন, পুঁজি, উদ্যোগ ও পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় পেশা পরিবর্তন করছেন এ শিল্পের কারিগররা। স্থানীয় বাসিন্দা মুদি দোকানদার শাহজাহান,সোরহাব, আঃ রশিদ, শহিদ ফকির ও গেদা মিয়া জানান, ধাতব ও প্লাস্টিক পণ্যের কবলে পড়ে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এবং প্রাচীনতম এ শিল্পটি ক্রমশ মুখ থুবড়ে পড়ছে। যার ফলে ঐতিহ্যবাহী শিল্পটির চরম দুর্দিন চলছে। এ দুর্দিন কাটিয়ে এ শিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনতে নেই কোনো সরকারি উদ্যোগ। একদিকে বাঁশের সংকটের কারণ ও অভাবের তাড়নায় এই শিল্পের কারিগররা দীর্ঘদিনের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে আজ অনেকে অন্য পেশার দিকে ছুটে যাচ্ছে। শত অভাব-অনটনের মাঝেও এখনো ইসলামপুর পৌর শহরের মৌজজাল্লা (পাটনী পাড়া), দরিয়াবাদ ও ভেংগুড়া গ্রামের হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার আজও পৈতৃক এই পেশাটি ধরে রেখেছেন মৌজজাল্লা গ্রামের নরেন, বিরেন, বরেন, শিমু রানি ও দোলালী রানী দাসের মতো পরিবারের সদস্যরা। তারা জানান, এক সময় গ্রাম এলাকায় প্রচুর বাঁশ পাওয়া যেতো। যার ফলে তাদের এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় ও থানায় (জেলা ও উপজেলা) শত শত মানুষ বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন ধাতব ও প্লাস্টিক পণ্যের ব্যাপক ব্যবহার, প্রয়োজনীয় বাঁশ পাওয়া, পুঁজি এবং পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এ শিল্পের বেশিরভাগ মানুষ এ পেশাটি ছেড়ে দিয়েছেন। যারা এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন, তাদের অনেকেই সরকারি-বেসরকারি কোন রকমের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই টিকে আছেন। বিভিন্ন ধরনের দ্রব্যাদি উৎপাদন করেও তা ন্যায্যমূল্যে বাজারে বিক্রি করতে না পারায় তাদের ঘরে অভাব অনটন লেগেই আছে। এতে প্রয়োজনের তুলনায় দৈনিক আয় কম হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করে।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com