শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:১৭ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা,রংপুর:
রংপুরে প্রতারণার ফাঁদ পেতে গ্রাহকের বিনিয়োগের প্রায় তিন কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এমটিএফই নামের কথিত এমএলএম কোম্পানী। এর পরেই গা ঢাকা দিয়েছে সিইও সহ অন্যকর্মীরা। এতে আসল ও লাভের কোনোটাই ফেরত না পেয়ে নিঃস্ব হয়েছে পড়েছেন ৫ শতাধিক নারী-পুরুষ। এই বিনিয়োগের পিছনে পীরগাছা উপজেলার প্রগতি নামের একটি সমবায় সমিতির লোকজন জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।ভুক্তভোগীরা, এমটিএফই’র প্রতারকদের চিহিৃত পূর্বক গ্রেফতারসহ আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছেন।খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, রংপুরের প্রত্যন্ত এলাকা পীরগাছা উপজেলার নেকমামুদ, তাম্বুলপুর, কান্দি, ছাওলাসহ পীরগাছা, কাউনিয়া ও রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবি, ব্যবসায়ী, তরুন উদ্যাক্তা, শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষদের টার্গেট করে এইসব এলাকায় প্রতারণার ফাঁদ পাতে মাল্টিন্যাশনাল ক্রেডিট এমএলএম কোম্পানি এমটিএফই। তারা মাত্র ৬১ হাজার টাকা বিনিয়োগে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা করে লাভ দেয়ার কথা বলে। যা ছিল পুরো মিথ্যা। এতে করে ৫ শতাধিকের মতো অসহায় নারী-পুরুষ লাভের আশায় বিনিয়োগ করেছেন এমটিএফইতে। কেউ বিক্রি করেছেন শখের মোটরসাইকেল, কেউ নিয়েছেন ব্যাংক থেকে ঋণ। কেউ আবার রেখেছেন জমি বন্দক নয়তো গরু-ছাগল বিক্রির করেছেন। এখন সুদ-আসল কোনোটাই ফেরত না পেয়ে নিঃস্ব তারা। এতে অনেকের পরিবারে দেখা দিয়েছে অশান্তি। প্রতারণার শিকার হয়ে কেউ হয়েছেন অসুস্থ, কারো চলে গেছে ঘরের বউ। তবে এই প্রতারণার নেপথ্যে পীরগাছা উপজেলার প্রগতি নামের একটি সমবায় সমিতির কর্মীরা ইন্ধন দিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। প্রগতি সমিতির আমিনুল, সুজা, হজরত আলী ও সিরাজুলসহ কয়েকজন ফুসলিয়ে ফুসলিয়ে ইন্টারনেটে (অনলাইনে) টাকা ইনভেস্ট করিয়েছে।এদিকে শুধু এমটিএফই নয়, এসপিজি ও কাটলিসহ নানা অ্যাপস- এ টাকা ইনভেস্ট করে প্রতারিত হয়েছেন বলে জানান অনেক ভুক্তভোগী।পীরগাছা উপজেলার নেকমামুদ এলাকার ভ্যান চালক সুরুজ জামান জানান, পঁচিশ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইনভেস্ট করেছেন এমটিএফইতে। লাভ-আসল কোনটাই না পাওয়ায় ছেড়ে চলে ছেছেন তার নতুন বউ। এ কারণে মানসিক ও শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি।একই এলাকার সুলতান হোসেন ও শহিদুল হকসহ কয়েকজন জানান, লাভের আশায় প্রগতি সমিতির লোকজনের কথায় বিশ্বাস করে এমটিএফই’তে বিনোয়োগ করেছি। এখন শুনতেছি এমটিএফই’র লোকেরা নাকি পালিয়ে গেছে। আমাদের টাকার বিষয়ে কেউ কিছু বলছেও না। আমরা এখন কি করব? ধারদেনা কওে এতগুলা টাকা দিলাম সেই টাকার কি হবে? আমরা আমার টাকা ফেরত চাই।হোসনে আরা নামের এক গৃহবধু বলেন, এমটিএফইতে ৬১ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে হয়েছেন সর্বস্বান্ত। স্বামী দিনমজুর, ছেলে মেয়ে পাঁচজন। সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে এমন উদ্যোগ নেয়াই কাল হল তার। জানেন না এখন কি করবেন তিনি। মেনে নেবেন কি তার স্বামী। আমি গরীব মানুষ, কিভাবে কি করব ভেবে পাচ্ছি না।স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, গ্রামের মানুষ এমটিএফই সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। প্রগতি সমিতির কর্মীরা তাদেরকে প্রলোভন দেখিয়েছে। একেক জনের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা, উর্ধ্বে পাঁচ-ছয় লাখ টাকা করে নিয়েছে। বর্তমানে অফিসে তালা ঝুলিয়ে পলাতক প্রগতির কর্মীরা।এদিকে প্রগতি সমিতির সদস্য অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে অবশ্য দোষ চাপান সমিতির সিও আমিনুলসহ আরো দুজনের ওপর। তিনি বলেন, আমার মাধ্যমে কোনো লেনদেন হয়নি। এখানে মূল ব্যক্তি তিনজন সিইও আমিনুল, কামিং সিইও সুজা আর হযরত আলী। এরাই টাকা নেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু করেছে। আমরা সেমিনারের মাধ্যমে এমটিএফই সম্পর্কে জানতে পারি।এব্যাপারে পীরগাছা থানা পুলিশের ওসি মাসুমুর রহমান জানান, এমএলএম কোম্পানী এমটিএফই’র প্রতারণার শিকার হয়েছে এমন কেউ কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। তবে এমন অভিযোগ পেলেই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা বলে তিনি জানান।