মোঃ ইকবাল হোসেন, কয়রা খুলনা :
জেলে-বাওয়ালিদের অভিযোগ বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে খুলনার পশ্চিম সুন্দরবনের কয়রা উপজেলায় কাশিয়াবাদ স্টেশনের আওতাধীন দুটি ফাঁড়ির ইনচার্জের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় জেলেরা। তারা অভিযোগ তুলে বলেন, বজবজা ফাঁড়ির ইনচার্জ তানজিরুল ইসলাম ও খাসিটানা ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলমকে চাঁদা না দিলে নিরীহ জেলে ও বাওয়ালিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তারা হয়রানি করেন। বৃহস্পতিবার (১৮ মে) বিকেল ৫টায় উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের বাজারে জোড়শিং, পাতাখালী, খাসিটানা গ্রামের দেড় শতাধিক মাছ ও কাঁকড়া ধরা জেলে এবং বাওয়ালিরা মানববন্ধনে নানা অভিযোগ তোলেন। সেই সঙ্গে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে অসাধু কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানান। তারা অভিযোগ তোলেন, বৈধ পাশ-পারমিটে সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে গেলেও টাকা না দিলে নানা হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের। এ ছাড়া টাকার বিনিময়ে হরিণ শিকারে সহায়তা করে তারা। সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মাছ ধরার সুযোগ করে দেন বন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি খুলনার কয়রা উপজেলায় সুন্দরবনের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা ফারুকুল ইসলামের বিরুদ্ধে চাঁদা না দেওয়ায় মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ এনে কয়রা উপজেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন দক্ষিণ বেদকাশী গ্রামের বিপুল কুমার সরকার।
স্থানীয় জেলে শফিকুল গাজি, দিদারুল শেখ, গোলাম রসুল, আকবার ফকির, বাবলু রহমান, আছাদুল গাজী, নজরুল গাজি, খায়রুল গাজী মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে বলেন, আমরা কখনো হরিণ শিকার ও বিষ দিয়ে মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত নই। কিন্তু হঠাৎ করে বজবজা বন ফাঁড়ি ইনচার্জ কয়রা উপজেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আমাদের নামে একাধিক মামলা দিয়েছেন। চাঁদা না দিলে এমন মিথ্যা মামলা বারবার দেওয়ার হুমকিও দেন ওই কর্মকর্তা। জোড়শিং বাজারের নুরুজ্জামান গাজী বলেন, তিনি গত ছয় মাস ধরে ঢাকার একটি ইটভাটায় কাজ করছেন। অথচ আমার নামে হরিণ শিকারের মামলা হয়েছে। রাকিব গাজি বলেন, চায়ের দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু আমার নামে বন আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। অথচ যারা প্রকৃত হরিণ শিকারি তারা বন বিভাগকে ‘ম্যানেজ’ করে চলে বলে তাদের কোনো মামলা হচ্ছে না। তারা সব সময় থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। মামলা দিচ্ছে আমাদের মতো নিরীহ মানুষের নামে। জেলে গোলাম রসুল ও আছাদুল গাজি বলেন, দীর্ঘদিন তারা সুন্দরবনে মাছ ধরতে যায় না। কী কারণে বজবজা ফাঁড়ির ইনচার্জ এক ডজনের বেশি মামলা দিয়েছেন এটা আমাদের জানা নেই। পরে আমাদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে মামলা প্রত্যাহারের কথাও বলেন তিনি। এটা তাদের নিজেদের স্বার্থে আমাদের হয়রানি করা ছাড়া আর কিছু নয়। উত্তর বেদকাশির আকবার হোসেন জানান, তিনি এখনো সুন্দরবনে প্রবেশ করেননি। তার নামে তিনটি হরিণ শিকারের মামলা হয়েছে। খাসিটানা গ্রামের বাসিন্দা লতিফ গাজী বলেন, খাসিটানা ফাঁড়ির বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম আমার নামে হরিণ শিকারের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। তার দাবি, তিনি কখনো সুন্দরবনে যাননি। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শতাধিক জেলে তাদের নামে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দ্রুত প্রত্যাহারসহ বন কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানান। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বজবজা ফাঁড়ির ইনচার্জ তানজিরুল ও খাসিটানা ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা বলেন, কাউকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলা দেওয়া হয়নি। প্রকৃত দোষী ও চিহ্নিত পেশাদার হরিণ শিকারিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ডা. আবু নাসের মোহসিন হোসেন অভয়ারণ্যে মাছ ধরার কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে বলেন, আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। মানববন্ধনের বিষয় সম্পর্কেও আমি অবগত নই। আমি অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় আমরা বদ্ধ পরিকর।