বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪০ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মো: কামরুল হাসান, মহম্মদপুর মাগুরা :
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের ৯নং ওয়ার্ডের নৈহাটি গ্রামটি বছরের প্রায় অর্ধেক সময় বর্ষার পানিতে তলিয়ে থাকে। জুলাই মাস থেবে ডিসেম্বর মাস প্রর্যন্ত পানিতে থৈ থৈ করে ছোট্র এই জনপদটি। স্কুল-কলেজ, বাজার-ঘাট এমনকি মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে হয় ডিঙ্গি নৌকা অথবা কলার ভেলায়। কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে এই গ্রামের মানুষ কে পড়তে হয় চরম ভোগান্তি তে। চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে ওই গ্রামের ৪০ টি পরিবারে ২ শতাধিক বাসিন্দা ৫ মাসের অধিক সময় ধরে পানি বন্দি হয়ে থাকলেও সমস্য নিরসনে কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ চোঁখে পড়েনি কখনো। এ নিয়ে ক্ষেভের সঞ্চার হয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে। মহম্মদপুর উপজেলা সদর থেকে থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দুরে নৈহাটি গ্রামটির অবস্থান।
মঙ্গলবার সকালে সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে নৈহাটি গ্রামটির সাথে রয়েছে একটি মাত্র কাঁচা সংযোগ সড়ক। রায়পাশা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর শহীদ মোল্লার বাড়ি থেকে নৈহাটি আফতাব মাস্টারের বাড়ি পর্যন্তু কাঁচা সড়কটি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গ্রামের মধ্যে কোন স্কুল না থাকায় কোমলমতি শিশুরা পাশর্^বর্ত্তী রায়পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে যায় নৌকায় করে। জিবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা চলাচল করে। ওই গ্রামে একটি মসজিদ রয়েছে। মসজিদের মুসল্লিরা নৌকায় চড়ে নামাজ আদায় করতে যায়। হাট বাজার থেকে শুরু করে সব কাজকর্ম নৌকায় চড়ে করতে হয়। বাড়িতে বাড়িতে রয়েছে একটি করে ডিঙ্গি নৌকা। কারো আবার ২টি। নি¤œবিত্ত পরিবারের যারা টাকার অভাবে নৌকা গড়তে পারেনা তারা কলার ভেলায় করে যাতায়াত করে নিজেদের কাজ সম্পন্ন করতে হয়। জৈষ্টমাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্তু একমাত্র নৌকার উপর নির্ভর করেই তাদের জীবন-যাপন করতে হয়।
নিচু এলাকা হওয়ায় বছরের ৫ মাস নৈহাটি গ্রামের বাসিন্দরা পানি বন্দি হয়ে থাকেন। বর্ষায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এখানে। এসব পরিবারের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে তারা সীমাহীন দুর্ভোগে থাকলেও তাদের খবর কেউ রাখে না। এমনবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও তাদের দেখতে আসেনা। তবে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটি সংস্কার করে উচু করলে একটু হলেও তারা দুর্ভোগের কবল থেকে রক্ষা পাবেন বলে জানিয়েছে কেউ কেউ। এই এলকার অধিকাংশ মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। অকেকে আবার কৃষক পরিবার। কৃষির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বছরের অধিকাংশ সময় পানি জমে থাকায় ঠিকমত চাষাবাদ করতে পারেন না তারা। চার ফসলি জমিতে তারা বছরে মাত্র দুইবার চাষাবাদ করতে পারেন। এ কারনে অভাব তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাড়িয়েছে। এ গ্রামে স্কুল শিক্ষকসহ সরকারি চাকরিজীবিও রয়েছেন কেউ কেউ।
নৈহাটি গ্রামের উত্তরে বিশাল ঘোঁপবাওড়। দক্ষিণে আড়মাঝি- চরপাচুড়িয়া গ্রাম। পশ্চিমে নৈহাটি গ্রামের একাংশ তেলিপুকুর গ্রাম। পূর্ব দিকে রায়পাশা গ্রাম। স্থানীয় ছেলে মেয়েরা রায়পাশা সরকারি প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়া করে, মাধ্যমিক পর্যায়ে মহম্মদপুর আরএসকেএইচ বিদ্যালয়ে, বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে, বীরেন শিকদার স্কুলে, আমিনুর রহমান কলেজ এবং মহিলা কলেজে পড়েশোনা ওই গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা। যাতায়াতের কোন রাস্তা না থাকায় বছরের অধিকাংশ সময় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় এই গ্রাম বসবাসকারী এসব মানুষদের।
স্থানীয় সহকারী শিক্ষক তাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, নৈহাটি গ্রামে ৪০ টি পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন করে। ‘কোমলমতি ছেলে মেয়েরা স্কুলে যায় নৌকায় করে। তাদের যাতায়াতের জন্য কোন রাস্তা নেই। বন্যার বন্যার সময় মতো স্কুলে পৌঁছাতে পারে না ছাত্রছাত্রীরা। নৈহাটি বাসীর জন্য একটি রাস্তা এ জনপদের মানুসের কষ্ট লাঘব করতে পারবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর সালাম টুটুল শেখ জানান,’আমরা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত, বিশেষ করে একটি উচু রাস্তা আমাদের খুবই দরকার। জরুরী সেবা, হাসপাতাল ও স্কুলে কলেজে ঝুঁকি নিয়ে ছেলে মেয়েরা নৌকায় পারাপার হয়।
মহম্মদপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাবেয়া ওহাব বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে ওই এলাকার মানুষের নৌকা ছাড়া চলাচল অসম্ভব। ওই এলাকায় উচু রাস্তা নির্মাণ করা ব্যয়বহুল। এ কাজ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে করা সম্ভব না। তবে বিষয়টি আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড কে অবহিত করবো। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল বলেন, গ্রামটির দুর্দশার কথা আমি শুনেছি। পরিদর্শন করে যথাযত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবো।