admin
- ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ / ১৪০ Time View
Reading Time: 3 minutes
আব্দুল্লাহ আল মামুন, খাগড়াছড়ি :
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার ২নং তবলছড়ি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সওদাগর পাড়া গ্রামে মামলার রেশ ধরে মেয়ে জামাই কামরুল ইসলাম পূর্ব পরিকল্পনায় শশুড়কে খুন করলেও নিরপরাধ লোকজনকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে সোমবার(২৬ সেপ্টম্বর) গিয়ে দেখা গেছে, এ ঘটনায় আসামীদের নাম নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। নিরপরাধ ব্যাক্তিদের আসামী করা হয়েছে যারা জড়িত নয়। মামলার পর পুলিশের ভয়ে বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে অনেকে। প্রকৃত খুনির নাম প্রকাশ পাওয়ার পরেও অন্যদের ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। মো. জিয়ারুল নামে সমাজের সর্দারকেও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলার পর থেকে সমাজের ওই সর্দার পালিয়ে থাকায় তার স্ত্রী হালিমা বেগম ২ছেলে ও ১মেয়েকে নিয়ে অর্ধহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ ব্যাপারে সওদাগর পাড়া গ্রামের মৃত হাছেন আলীর(৫৬) বাড়ির পার্শ্ববর্তী বসবাসরত তার আপন বোন নুরজাহান বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যাকান্ডের ঘটনায় জিয়ারুলকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রায় ১বছর আগে আমার ভাবি ও ভাবির মেয়ের জামাই কামরুল ইসলামের মধ্যে অনৈতিক কার্যকলাপ আমার ভাই হাছেন আলী সরাসরি দেখে ফেলেন ও তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে সমাজের সর্দার জিয়ারুলের নিকট বিচার দেন। এ নিয়ে জিয়ারুল শাশুড়ি মঞ্জু আরাকে গালিগালাজ করে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দেন ও মেয়ে জামাই কামরুলকে কয়েকটি চর-থাপ্পর দিয়ে ব্যাপারটি সুরাহার চেষ্টা করেন। আমার ভাইয়ের অনুরোধে পারিবারিক শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে ঘটনাটি আমরা অল্প কয়েকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছি। ঢালাওভাবে জানাজানি হয়নি। ওই ক্ষোভে জামাই-শাশুড়ি মিলে হাছেন আলীকে হত্যা করে জিয়ারুলকে ফাঁসাতে হত্যা মামলার আসামি করে নাটক সাজানো হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে আধা কিলোঃ দূরত্বে চৌমুহনী বাজারের চা দোকানদার শাহ আলম, চা দোকানদার রুস্তম, কচুর ব্যাবসায়ী দেলোয়ার, বারেক এ প্রতিবেদককে জানান, ঘটনার দিন জিয়ারুল বাড়িতে ছিলনা। কচুর ব্যাবসায় দেলোয়ারের সাথে শেয়ারদারের বিষয়ে হিসেব-নিকেশ নিয়ে বিকেল থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত তারা চৌমুহনী বাজারে একসাথেই ছিলো। উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে অনর্থক তাকে আসামি করা হয়েছে। মৃত হাছেন আলীর স্ত্রী মঞ্জু আরা বেগমের নিকট মামলার আরজি অনুযায়ী রাতে কে বা কারা বাহির থেকে দরজায় টোকা মারার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ বাইরে থেকে দরজায় টোকা মারেনি এটা মিথ্যা কথা, ঘরের ভিতরের পার্টিশন দরজা খুলে আমার স্বামীকে মূল দরজা দিয়ে বের করে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসময় আমি অস্বাভাবিকভাবে ঘুমে ছিলাম। ওই দিন বিকেলে তাদের বাড়ির পার্শ্বে মামলায় উল্লেখিত আসামীগণকে ঘুরাঘুরি করতে তিনি দেখেছেন বললেও পার্শ্ববর্তী সুরুজ জামাল, আবু বকর, শামছুল হকের স্ত্রী সুফিয়াসহ প্রতিবেশীরা জানান তারা ও তাদের পরিবারের কেউ ঘটনার দিন বিকেলে কাউকেই এ এলাকায় ঘুরাঘুরি করতে দেখেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, পর্দার আড়ালে থাকা গডফাদারের পরামর্শে, নিরীহদের আসামী করে ওই খুনের সাথে জড়িয়ে দেওয়া হয়। মার্ডার বাণিজ্য করার জন্য এলাকার নিরপরাধ কয়েকজনের নামে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। প্রতিবেশী মমিনুর জানান, হাছেনকে রাত্রে খুন করে টয়লেটে ফেলে রাখা হয়। পরদিন সকালে এলাকাবাসী খোঁজাখুঁজি করে ওই টয়লেটে নিহতের লাশ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে। এসময় পুলিশ, পানছড়ির বাসিন্দা হাছিনার চাচাত ভাই আনোয়ারসহ সকলের সামনে হাছিনা বলে আমি ঘটনার সবকিছুই জানি কিন্তু কাউকে বলতে পারছিনা। এলাকাবাসী এ বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত খুনিদের চিহিৃত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তবলছড়ি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. শহিদুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের নিকট মঙ্গলবার(২৭ সেপ্টেম্বর’২২)বিকেল ৪টা ৪৯মিনিটে এ ব্যাপারে জানতে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবলছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরের নিকট ঘটনার বিষয়ে জানার চেষ্টা করলে তার মোবাইল নাম্বারটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার(১১ আগস্ট’২২) দিবাগত রাতে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার তবলছড়িতে ঘাতক জামাই কামরুল ইসলাম কর্তৃক শ্বশুর হাছেন আলী(৫৬) হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে বাড়ির পাশে টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে লাশ ফেলে দেওয়া হয়। এরপর দিন পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। শনিবার(১৩ আগস্ট’২২) নিহতের বড় ছেলে মো. ইউনুস বাদী হয়ে মাটিরাঙ্গা থানায় ৩০২, ৩০১ ও ৩৪ পেনাল কোডে একটি মামলা দায়ের করেন।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে দুই আসামিকে গ্রেফতার করার পর মূল পরিকল্পনাকারী ঘাতক জামাই কামরুল ইসলাম ১৬৪ধারায় জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। রবিবার(১৪ আগস্ট’২২) দুপুর ১২টায় খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. আব্দুল আজিজ।