রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৪ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
এম এ লিতু, ঝিনাইদহ :
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা হতে পূর্বে ৮নং মালিঘাট ইউনিয়নের বেথুলী মৌজায় সুইতলা মল্লিকপুরে রয়েছে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটগাছ। ১১ একর জমি জুড়ে রয়েছে এর অস্তিত্ব।এর উচ্চতা আনুমানিক ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট। বর্তমানে বটগাছটি খন্ড খন্ড হয়ে ৫২টি বট গাছে রূপ নিয়েছে। বিবিসির জরিপে ১৯৮৪ সালে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম খ্যাত এই বটগাছ নিয়ে প্রতিবেদন করা হয়। এর পর থেকে দেশ-বিদেশে পরিচিত পেতে থাকে গাছটি। তবে অবস্থান ও নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা জটিলতা এবং কাহিনী। প্রায় তিন’শ বছর আগের এ গাছের উৎপত্তি সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য জানাতে পারেননি এলাকাবাসী। এলাকার বয়োবৃদ্ধদের কাছে জানা যায়, একটি কুয়ার পাড়ে ছিল এই গাছের মূল অংশ। তখন জনবসতি ছিল খুবই কম। বাস্তবে এই এলাকায় সুইতলা নামক কোন স্থানের অস্তিত্ব নেই বলে জানা গেছে।মল্লিকপুর গ্রামের কতিপয় ব্যক্তি বটগাছের পাশে দোকান বসিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।মল্লিকপুরের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা কেন্দ্র করেই মল্লিকপুরের বটগাছ হিসাবে এটি পরিচিত লাভ করেছে।এই বাজারের প্রথম দোকানদার ছিলেন মল্লিকপুর গ্রামের বেলায়েত আলী,বেথুলী গ্রামের স্বরজিত কুমার সাহা,মমতাজ ডাক্তার, মল্লিকপুরের মুনছুর বিশ্বাস,মথুরাপুর গ্রামের হামিদুল। ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট উচ্চতায় ফাঁকা মাঠের মধ্যে দীর্ঘদিনের এ বটগাছটি একের পর এক ঝুরি ছেড়ে বিরাট আকার ধারণ করে। এই বটগাছের জন্ম যে কুয়ার পাড়ে সেই কুয়া কে বা কারা খনন করেছিলেন তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি। মল্লিকপুর গ্রামের অনেকে জানান, যে জায়গায় কুয়া ছিল ওই জায়গায়টি ১৯২৬ সালে রেকর্ডের পূর্বে বেথুলী গ্রামের ভূষণ সাহাদের পরিবারের কারো নামে ছিল। বর্তমানে পুরোটাই সরকারের খাস জমির অন্তুর্ভূক্ত হয়েছে।কুয়ার পাড়ের সেই বটগাছটি কালক্রমে ডালপালা নেমে পার্শ্ববর্তী এলাকা সমূহ দখল করে নিয়েছে। মূল গাছ এখন আর নেই। বর্তমানে প্রায় ২-৩’শ ডালপালা নেমে প্রায় ১১ একর জমি দখল করে নিয়েছে এই বৃহত্তম গাছটি।বটতলায় কালীপূজার জন্য একটি স্থায়ী পিড়ি তৈরি করা হয়েছে।চাপরাইল গ্রামের গৌর পদ অধিকারী এবং হাজারী লাল অধিকারীর,আর্থিক সহায়তায় এট নির্মিত হয়।এলাকাবাসী জানিয়েছে, অযত্ন অবহেলা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও নানামুখী অত্যাচারের কারণে এই ঐতিহ্যবাহী বটগাছের অস্তিত্ব আজ নষ্ট হতে চলেছে। মল্লিকপুর গ্রামের বেলায়েত মিয়া বেঁচে থাকা পর্যন্ত তিনি এসব দেখাশুনা করতেন। তিনি নিজ সন্তানের মত ভালবাসতেন এই বটবৃক্ষকে।যে কারণে তিনি এই বটগাছের কাছে সর্বপ্রথম দোকান দেন এবং বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। উল্লেখ্য ১৯৮২ সালের পূর্ব পর্যন্ত এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বৃহত্তম বটগাছ বলে পরিচিতি ছিল কলকাতার বোটানিক্যাল গার্ডেনের একটি বটগাছ।পরবর্তীতে বিবিসির এক তথ্যানুষ্ঠানে প্রতিবেদনে প্রচার হয়,কালীগঞ্জ উপজেলার বেথুলী মৌজার সুইতলা মল্লিকপুরের বটগাছই এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটগাছ। ১৯৯৮ সালের দিকে কালীগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা সুশেন চন্দ্র রায় এর সহযোগিতায় সেখানে একটি ফুলের বাগান তৈরি করা হয়। বটগাছের চারপাশ ঘিরে প্রাচীর নির্মাণের ব্যবস্থাও করেন তিনি।
এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তর বটগাছের ঐতিহাসিক দিক বিবেচনা করে অনেক স্থান থেকে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীরা আসেন। এর গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৯০ সালেই বটগাছের পাশেই প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি রেষ্ট হাউজ নির্মাণ করা হয়।
এর জন্য মল্লিকপুরের মৃত জহর আলীর স্ত্রী মোছা: কুন্টি বিবি ৩২ শতক জমি জেলা পরিষদের নামে দানপত্ররুপে লিখে দেন। তবে নানা জটিলতায় আজো সে রেষ্ট হাউজটি চালু হয়নি। অযন্ত আর অবহেলায় রেস্ট হাউজটি এখন পরিত্যক্ত প্রায়।বটগাছটির আয়তন বৃদ্ধির জন্য নতুন করে দুই একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ২০০৯সালে।
ইতিহাস খ্যাত এই বটগাছটি সংরক্ষণ এবং স্থানটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হলে সরকারের ঘরে রাজস্ব আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।