রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৩ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
মাসুদ রানা রাব্বানী,রাজশাহী:
দেশে অপার সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে ভিনদেশি ‘ড্রাগন ফল’। ড্রাগন ফল এখন কৃষক বা কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছে একটি আশাজাগানিয়া ফল ও ফসল। যদিও সব মহলে খুব বেশি একটা পরিচিত হয়ে ওঠেনি এ সুস্বাদু রসাল ফল। এরপরও ইউটিউব দেখে নিতান্তই শখের বসে ড্রাগন ফল চাষ করে অবিশ্বাস্য সফলতা পেয়েছেন একজন মাদ্রাসা শিক্ষক।কৃষি কর্মকর্তাদের ভাষ্যানুয়ায়ী দেশে ড্রাগন ফলের চাষ এখন আধুনিক কৃষির আশীর্বাদ হিসেবেই ধরা হচ্ছে। দেশের মাটিতে স্ট্রবেরি, মাল্টা, কমলা ও রাম্বুটানের মতই স্বাদ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এ ফল চাষ হচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চলে। বলা যায় এগুলোর অনেক আগেই দেশের মাটিতে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু হয়। আশানুরূপ সফলতা পাওয়া দ্রæতই ড্রাগন ফলের প্রচার ও প্রসার ঘটে।যদিও এটি কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এখনও সেভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে ব্যক্তিগতভাবে রাজশাহী অঞ্চলে এ ফল চাষ শুরু করেছিলেন কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তৎকালীন অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক। মূলত তার হাত ধরেই রাজশাহী অঞ্চলে ড্রাগন ফল চাষের সূচনা হয়।কৃষকদের উৎসাহিত করতে নিজে ‘কৃষক’ হয়ে ২০১৬ সালে ২১ কাঠা জমিতে মেক্সিক্যান ফল ‘ড্রাগন’ চাষ করে সবাইকে অনেকটা চমকে দিয়েছিলেন তিনি। এরপর অনেকেই এখন তার কাছ থেকে ড্রাগনের চারা সংগ্রহ করে নিজেরাই চাষাবাদ শুরু করেন। অনেকটা এভাবেই ড্রাগন ফল বাগান ছড়িয়ে পড়ে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।আর ইউটিউব দেখে ড্রাগন ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হন রাজশাহীর আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী মাদ্রাসার শিক্ষক মোফাক্কার হোসেন। এক রকম শখের বসেই কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হকের কাছ থেকে ড্রাগন ফলের চারা সংগ্রহ করে রাজশাহীর পবা উপজেলার বারনই নদীর তীরে থাকা পূর্ব পুঠিয়াপাড়া গ্রামের তিন বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন স্বপ্নের ড্রাগন ফল বাগান।পবা উপজেলার বারনই নদীর তীরবর্তী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার প্রায় জমিতেই ড্রাগন চাষের পাশাপাশি শাক-সবজি চাষের কৌশল অবলম্বন করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। প্রথমে একজন করছেন। এরপর তার সফলতা দেখে অন্যজন আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এভাবে চক্রাকারে বাড়ছে দুই ফসলি আবাদ। আর তাদের সবার জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন শিক্ষক মোফাক্কার হোসেন।তার বাগান ঘুরে দেখা যায়, সবুজ ক্যাকটাসের মতো কাঁটাযুক্ত প্রতিটি গাছেই ঝুলে আছে অসংখ্য ফুল ও ফল। কিছু ফল পেকে লাল টুকটুকে। আর কিছু ফল পাকার অপেক্ষায়। এছাড়া একই সঙ্গে গাছে হলদে রঙের ফুলও শোভা ছড়াচ্ছে।শিক্ষক মোফাক্কার হোসেন বলেন, ক্যাকটাস প্রজাতির গাছ হওয়ায় এর জন্য বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি খুবই উপযোগী।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বারনই নদীর তীরে থাকা পূর্ব পুঠিয়াপাড়া গ্রামের তিন বিঘা জমিতে তাই ড্রাগন ফলের চাষ করে এরই মধ্যে পেয়েছেন সফলতা। এরই মধ্যে তিনি অন্য কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছে হয়ে উঠেছেন মডেল। পেশায় মাদ্রাসা শিক্ষক হয়েও ড্রাগন ফল চাষে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এ অঞ্চলে। পেয়েছেন নতুন পরিচিতিও।বর্তমানে তার বাগানে লাল ও সাদা দুই প্রকারে ড্রাগন ফল রয়েছে। প্রতিটা গাছেই ড্রাগন ফল ধরেছে। যত দিন যাবে ততই বাড়বে ফলন। এরই মধ্যে তার বাগানের ড্রাগন ফল বাজারজাত করা শুরু করেছেন। বাজারে এখন মৌসুমে ফল ভরপুর থাকায় প্রতি কেজি ড্রাগন পাইকারি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ড্রাগন চাষের প্রথমে পরিচর্যাজনিত সমস্যার কারণে অল্প ফল পেলেও এবার গোটা ড্রাগনের বাগানজুড়ে মন জুড়ানো ফুল আর ফুল এসেছে। ফুল ফোটার ৩০ দিন পরই ফল তোলার উপযুক্ত হয়। শিক্ষক মোফাক্কার হোসেন বলেন, তিন বিঘা জমিতে আগে পেঁপে বাগান ছিল। ওই পেঁপে বাগান থেকে পাওয়া পুঁজি দিয়েই তৈরি করেছিলেন ড্রাগন ফলের এ বিশাল বাগান। তবে বাণিজ্যিকভাবে নয়, ইউটিউব দেখে শখের বসেই এ ড্রাগন ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। আর শুরুর গল্পটি রাজশাহী কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মঞ্জুরুল হকের হাত ধরেই। বর্তমানে তার বাগানে ৪৬০টি খুঁটি রয়েছে। প্রতিটি খুঁটিতে চারটি করে ড্রাগন ফলের গাছ রয়েছে। দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ১০/৮ ফুট দূরত্বে এ ড্রাগন ফলের গাছগুলো লাগাতে হয়। এ গাছ যে কোনো মাটিতেই জন্মায়। তবে উঁচু জমি হতে হবে। পানি জমে থাকে এমন জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করা যায় না। আর একেকটি মাতৃ গাছ থেকে এক বছরের মাথাই ফল পাওয়া যায়।শিক্ষক মোফাক্কার হোসেন জানালেন এর চাষপদ্ধতি খুবই সহজ। জৈব সার ছাড়া আর অন্য তেমন কিছুই লাগে না। বিভিন্ন ভাগে এর ফল আসে এবং সংগ্রহ করা যায়। একবার ফল সংগ্রহ করলে তার কিছু দিনের মধ্যেই আবারও ফুল চল আসে। এভাবে প্রায় বছরজুড়েই ফল উৎপাদন ও সংগ্রহের কাজ চলে। আর তিনি ড্রাগন ফলের বাগানে সাথী ফসল হিসেবে এর আগে পর পর দুই বছর বাঁধাকপি চাষ করেছেন। এবার রোপণ করেছেন পেয়ারার চারা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তারা এরই মধ্যে তার ড্রাগন বাগান পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান এ শিক্ষক।রাজশাহী কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মোজদার হোসেন বলেন, পবার কৃষক মোফাক্কার হোসেন ড্রাগন ফল চাষে সফল হয়েছেন। তিনি একই জমিতে একই খরচে দুই-তিন জাতের ফসল উৎপাদন করার জন্য এখন ওই এলাকার বেকার যুবকদের কাছে উদাহরণ এবং অনুপ্রেরণার এক নাম। মোফাক্কার এ নতুন চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে স্থানীয়ভাবে তরুণ চাষিদের মনে শক্তি যুগীয়েছেন। তার দেখাদেখি এখন অন্যরাও সাথী ফসল চাষ শুরু করেছেন। তারা কৃষি বিভাগ থেকে এজন্য সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন।