মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৭ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
নুরুজ্জামান লিটন, নওগাঁঃ
নওগাঁর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ৯ শতক সরকারি সম্পত্তি বেহাত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ইতিমধ্যে ওই সম্পত্তির খাজনা খারিজও সম্পন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে আলাদা দু’টি অভিযোগ থেকে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
অভিযোগকারী নওগাঁ শহরের বাসিন্দা মৃত শেখ আব্দুল কুদ্দুসের নাতনী সাহানা হক ও আরজি-নওগাঁর মহল্লার বাসিন্দা সঞ্জয় কুমার দাস। তাদের দাবি, এসব অভিযোগ সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হলে ভূমি অফিসের আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে পড়বে।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, নওগাঁ সদর উপজেলার সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আওতাধীন নওগাঁ মৌজার ১৫৪৮ নম্বর হাল দাগে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাবেক মাছ বাজারের ৫ শতক জমি সরকারের ১ নম্বর খাঁস খতিয়ানভুক্ত ও শ্রেণী হিসাবে ‘হাটখলা’ দেখানো আছে । প্রায় ২ কোটি টাকা মুল্যের সরকারি ওই সম্পত্তিটি ব্যাক্তি মালিকানায় মৃত শেখ আব্দুল কুদ্দুসের নামে খারিজের আদেশে ৫ হাজার ৮৩৫ টাকার খাজনা আদায় করা হয় মৃত ব্যক্তির নাতনী সাহানা হকের নিকট থেকে।
অভিযোগকারী সাহানা হক বলেন, দাদা শেখ আব্দুল কুদ্দুস ২০১২ সালে মৃত্যুর পর আমি ওয়ারিশ সূত্রে দলিল মূলে ওই সম্পত্তির খারিজের জন্য আবেদন করি। আবেদনের প্রেক্ষিতে ইউনিয়ন ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সালেহ উদ্দিন ও তৎকালীন সহকারী কমিশনার(ভূমি) নাহারুল ইসলাম ওই সম্পত্তি খারিজের আদেশ প্রদান করেন। ভূমি মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোন জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না, এমন নির্দেশনা থাকলেও ওই সম্পত্তিটি হাটখলার স্থানে দোকান ঘর উল্লেখ করে।এবং নতুন হোল্ডিং খুলে গত ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে খাজনা আদায় করা হয়।
সাহানা হক বলেন, হটাৎ করেই কাউকে কোন নোটিশ প্রদান না করে ব্যাপক জালিয়াতির মাধ্যমে ওই খারিজের আদেশ বাতিল করা হয়েছে। তবে এব্যাপারে ইউনিয়ন ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ সালেহ উদ্দিন বলেন, ভুলবশত সরকারের ১ নং খাঁস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তিটি খারিজের আদেশ দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি স্বীকার করেন। নওগাঁ সদর উপজেলার অন্তর্গত হাপানিয়া এর ডাফইল/৬১ মৌজার এসএ ১২৬ আরএস ৭০ নম্বর খতিয়ানভূক্ত এসএ ২২, আরএস ১৩ নম্বর দাগে প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের ২৭ শতক সম্পত্তি রয়েছে। যাহা ২০১২ সালের ৮ এপ্রিল প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, অর্পিত সম্পত্তির ‘ক’ তফশীলে ৯৯১৪ নম্বর পৃষ্ঠায় ৪৭৭ নম্বর ক্রমিকে ৮৮৪/১৯৭৮ নং ভিপি কেসে উক্ত ২৭ শতক সম্পত্তি ‘ক’ তফশীলে তালিকা ভূক্ত হয়েছে এবং ৮৮৪/৭৮ নম্বর ভিপি কেসে লীজ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে তা সরকারের পক্ষে লীজ গ্রহীতার দখলে আছে। উক্ত সম্পত্তির ৭০ নম্বর খতিয়ানের হোল্ডিংয়ে অর্পিত সম্পত্তি, ৮৮৪/৭৮ নম্বর ভিপি কেসে লীজ প্রদানের তথ্য ওঅর্পিত প্রত্যার্পন ট্রাইবুনালে ৬০৯/১২ মামলা চলমান আছে মর্মে লাল কালি দিয়ে নোট দেওয়া আছে। এছাড়া দীর্ঘকাল যাবত ওই হোল্ডিংয়ের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
অভিযোগকারী সঞ্জয় কুমার দাস জানান, প্রকাশিত ‘ক’ গেজেট ভূক্ত ভিপি লীজ কেস চলমান রয়েছে। সম্পত্তি লীজ গ্রহীতার মাধ্যমে সরকারের দখলে এবং সংশ্লিষ্ট হোল্ডিংয়ের কার্যক্রম বন্ধ থাকার সত্ত্বেও অবৈধ ভাবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সম্পূর্ন বেআইনী ভাবে ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর তারিখে ২২৪৩/২০-২১ নম্বর খারিজ কেসের আদেশ দেওয়ার মাধ্যমে সরকারের ক্ষতি সাধন করা হয়েছে।
অভিযোগের সাথে সংযুক্ত কাগজপত্রে দেখা যায়, ডাফইল মৌজার ২৮০ নম্বর খতিয়ানে ১৩ নম্বর দাগে মোট ২৭ এর মধ্যে ৪ শতাংশ জমি হাট নওগাঁর বাসিন্দা মোমতাজ হোসেনের নামে খারিজ করে দিয়েছেন কর্মকর্তারা। উক্ত উপজেলা ভূমি অফিসের তৎকালীন এসিল্যান্ড নাহারুল ইসলাম আদেশটি দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা হিসেবে দ্বায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া অবৈধ ভাবে খারিজ করার জন্য তৎকালীন সার্ভেয়ার মো: মিজানুর রহমান ও হাপানিয়া-বক্তারপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো: নাজিম উদ্দিনকে দায়ী করেছেন অভিযোগকারী সঞ্জয় কুমার দাস। খারিজের বিষয়ে জানতে চাইলে মোমতাজ হোসেন পরে জানাবেন বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
হাপানিয়া-বক্তারপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো: নাজিম উদ্দিন জানান, ভূল বশত প্রস্তাবের মাধ্যমে সরকারি জমিটি খারিজ হয়ে গেছে। সামান্য জমি তাই খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তবে বিনিময়ে টাকা গ্রহনের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।
এ ব্যপারে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মিজানূর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ্যাসিল্যান্ডের সাথে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহের পরামর্শ দেন।
নওগাঁ সদর উপজেলা ভূমি অফিসে বর্তমান কর্মরত এ্যাসিল্যান্ড রফিকুল ইসলাম অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জানান, ইতোপূর্বে হয়তো ভূলক্রমে তৎকালীন কর্মকর্তা খারিজটির আদেশ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, অতি সম্প্রতি সঞ্জয় কুমার দাসের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। খারিজটি বাতিল করা হবে। নিয়োগ প্রদানকারী কর্মকর্তা উক্ত অভিযোগের তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান তিনি।
নওগাঁ জেলা বাসদ নেতা জয়নাল আবেদীন মুকুল বলেন, ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা,স্বচ্ছতা না থাকার কারনে অনিয়ম-দূর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন স্থানীয় সরকারকে জোরদার ও শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে দূর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তৎকালীন এসিল্যান্ড এবং বর্তমানে নওগাঁ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা নাহারুল ইসলাম বলেন, নওগাঁ সদর ‘এসিল্যান্ড অফিসে ৮ মাস আগে কর্মরত ছিলাম। ওখানে প্রতিদিন অনেক শুনানি হয়েছে, অনেক কেস হয়েছে। এতোদিন পর এই ধরনের কোন ঘটনার কথা আমার মনে পরছে না, জানাও নেই। কোন অভিযোগও পাইনি।