মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) গত ডিসেম্বরে রাজধানী গুলিস্তান এলাকার বড় দুটি মার্কেটের নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদ করে। পর্যায়ক্রমে এ রকম অন্য সব মার্কেটেও উচ্ছেদ অভিযান শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘোষণার পাঁচ মাসেও সেই অভিযান শুরু হয়নি। এরই মধ্যে উচ্ছেদ হওয়া মার্কেট দুটির নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে নতুন দুটি চক্রের হাতে। এর মধ্যে একটি মার্কেটের অবরাদ্দকৃত দোকান অবৈধভাবে ভাড়া দিচ্ছে চক্রটি। আর অন্য মার্কেটিতে উচ্ছেদ হওয়া দোকানগুলো নতুন করে নির্মাণ করে অর্থের বিনিময়ে দোকানি তোলা হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট–২ তে তিনটি ভবন রয়েছে। করপোরেশনের নথিতে এগুলোকে এ, বি ও সি ব্লক হিসেবে উল্লেখ করা হলেও স্থানীয়দের কাছে এ ব্লক সিটি প্লাজা, বি ব্লক নগর প্লাজা এবং সি বক্ল জাকের সুপার মার্কেট নামে পরিচিত। এর মধ্যে এ ও বি ব্লক আটতলাবিশিষ্ট। এখন পর্যন্ত করপোরেশন এই দুটি ব্লকের পাঁচতলা পর্যন্ত বরাদ্দ দিয়েছে। বাকি তিনতলায় ৬৮৪টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। আর সি ব্লক তথা জাকের সুপার মার্কেটটি চারতলা। করপোরেশন আগেই চারতলা পর্যন্ত বরাদ্দ দিয়েছে। গত ডিসেম্বরে এই মার্কেটে অভিযান চালিয়ে নকশাবহির্ভূত প্রায় ১ হাজার ৪০০ দোকান উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন।
সিটি করপোরেশনের বাজার শাখার কর্মকর্তারা বলেছেন, সম্প্রতি তাঁরা ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট–২ পরিদর্শন করে দেখেছেন, অবরাদ্দকৃত ৬৮৪টি দোকানের মধ্যে ৬২৯টি দোকানে তালা ঝুলছে। খবর নিয়ে তাঁরা জেনেছেন, এসব দোকান ইতিমধ্যে অবৈধভাবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। দোকানপ্রতি মাসে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে মাসে অন্তত ৩১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা উঠছে। তবে কিছু কিছু দোকানের আয়তন বড় হওয়ায় সেখান থেকে ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
করপোরেশনের বাজার শাখার কর্মকর্তা ও মার্কেটের দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী নেতা ফিরোজ আহমেদ অবরাদ্দ দোকানগুলো তাঁর অনুসারীদের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ভাড়া দিয়েছেন। গত ডিসেম্বরের উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অনেকেই দোকানগুলো ভাড়া নিয়েছেন। উচ্ছেদ অভিযানের আগে এই মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ ছিল দেলোয়ার হোসেন নামের আরেক ব্যবসায়ীর হাতে। পুরো মার্কেট এখন ফিরোজ আহমেদের নিয়ন্ত্রণে।
অবৈধভাবে দোকান ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে জানতে ফিরোজ আহমেদের মুঠোফোনে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে মার্কেটের কয়েকজন দোকানি জানান, একটি মামলার তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। হঠাৎ তিনি উধাও হয়ে গেছেন। মুঠোফোনও বন্ধ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ সিটির একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে এক মাসও যদি দোকানগুলো ভাড়া দেওয়া যায়, তাহলে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। কাজটি কৌশলে করে নিচ্ছেন নতুন সিন্ডিকেটের নেতারা।
অবৈধভাবে দোকান ভাড়া প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরীন সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, দোকানিদের বারবার সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও যদি তাঁরা কাউকে টাকা দেন, এই দায় তাঁদের। দোকান থেকে দখলদারদের সরাতে করপোরেশনের নানা উদ্যোগ চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তথ্য পেয়েও নিশ্চুপ কর্মকর্তারা
অন্যদিকে সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটে ভেঙে ফেলা দোকানগুলো নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে—এমন তথ্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে দুই দফায় জানান সংস্থার প্রকৌশলীরা। কিন্তু এসব বন্ধে করপোরেশন থেকে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
দোকানি ও করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটে নকশাবহির্ভূত অন্তত ৭৫৭টি দোকান ভেঙে ফেলে সিটি করপোরেশন। যেসব দোকান ভাঙা হয়, সেগুলোর মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ একজন নেতার দোকান ছিল। তিনি নিজের দোকান পুনর্নির্মাণের পর বাকি দোকানিরাও তাঁদের দোকানগুলো তৈরি শুরু করেন। দোকান পুনর্নির্মাণের কাজ এখনো চলছে।
আগে এই মার্কেটের নিয়ন্ত্রণে ছিল দক্ষিণ সিটির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা সাহাবুদ্দীন এবং ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিদ আহমেদ ওরফে ম্যাজিক রতনের হাতে। এখন ভেঙে ফেলা দোকানে পুনর্নির্মাণের কাজে ফিরোজ আলম নামের এক ব্যবসায়ীসহ আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে। আগে উচ্ছেদ হওয়া দোকানিরাই নতুন করে নির্মাণ করা দোকান দখলে নিয়েছেন। নতুন এই চক্র করপোরেশনের নাম ভাঙিয়ে দোকানিদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ফিরোজ আলমের মুঠোফোনে এক সপ্তাহ ধরে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে রাসেল সাবরীন বলেন, সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটে নতুন করে দোকান নির্মাণের খবর পেয়ে সেখানে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে পাঠিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। এরপরও কেউ নকশাবহির্ভূত দোকান তৈরি করলে তা ভেঙে দেওয়া হবে।