মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
সরকার আরিফ,বেড়া পাবনা :
প্রত্যেক মানুষের স্বাভাবিক ভাবে চলাচলের জন্য প্রয়োজন দুটি পা, এটাই যদি না থাকে তাহলে পরিবারে কাছে হয়ে যায় বোঁঝা। তেমনি এক ব্যক্তি সিরাজুল ইসলাম (৬০) অজ্ঞাত এক রোগে দুটি পা হারিয়ে ছাব্বিশ বছর ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে কৈটোলা পাম্পিং স্টেশন এর পাশে কাগেশ্বরী নদীতে প্লাস্টিকের ড্রামের উপর ঘর বানিয়ে কষ্টের জীবনধারণ করছেন। সব থেকেও যেনো কিছু নেই। আছে শুধু বুক ভরা কষ্টের দীর্ঘশ্বাস। সব ছেড়ে নদীতে একাকী ভাসমান ঘর বানিয়ে বসবাস তার। মাছ শিকার করে চলছে জীবন জীবিকা। সিরাজ মিয়ার জীবনের গল্পটা সমাজের অন্য দু’চার জনের থেকে একেবারে আলাদা। জন্মের পর স্বাভাবিক ছিলো সব কিছু,ছিলো পরিবার সংসার পায়ে হেটে চলাচলের ক্ষমতা। তাইতো সহজে দু“হাত কাজে লাগিয়ে চলাচলের জন্য বেছে নিয়েছেন নৌকার জীবন । নদীতে মাছ শিকার করে স্থানীয়দের কাছে বিক্রয়, আত্মীয় স্বজন এলাকাবাসীর সহযোগীতায় টিকে আছে নদীতে নৌকার জীবন। পরিবারের কেউ তেমন খোঁজ খবর রাখেন না। সিরাজ মিয়া সকলের চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ইচ্ছাশক্তি থাকলে সকল প্রতিক‚লতা জয় করা যায়। শারীরিক কিছু সমস্যা ছাড়া সকল অসুবিধার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন তিনি।
কথা হয় সিরাজুল ইসলামের সাথে তিনি জানান তার জীবনের কথা, সাত সন্তান নিয়ে সুখেই দিন যাপন করতেন এক সময়। হঠাৎ তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। অজ্ঞাত এক রোগে পঁচন ধরে দু’পায়ে। বিভিন্ন ডাক্তার কবিরাজের দারস্ত হয়েও কিছুই হয়নি তার। পরে পা দুটি এলাকাবাসীর সাহায্য সহযোগীতায় কেটে ফেলতে হয়েছে। তখন ছেলে মেয়েরা ছোট ছোট ,অভাবের সংসারে এক সময় সবার কাছে বোঝা হয়ে ওঠেন তিনি। এলাকাবাসীর সামান্য সহযোগীতায় কষ্টে দিন যাপন শুরু হয়। পেটে ভাত জোটেনা এক বেলা খেয়ে দু”বেলা না খেয়ে দিন কাটান। এ ভাবেই কিছু দিন কেটে যায় তার। পরে জীবিকার তাগিদে বেছে নেন নৌকায় মাছ ধরার পেশা। বর্ষার সিজনে জাল দিয়ে মাছ ধরে সামান্য কিছু টাকা আসে। সেটাও নিয়মিত নয়। দু“পা বিহীন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিটি সরকারি সহায়তা হিসেবে পান শুধু প্রতিবন্ধী কার্ডের সামান্য কিছু টাকা। যে টাকা পান তাতে ওষুধও কেনা হয়না। যদি সরকারি সহায়তায় নদীতে ঘর পেতাম তাহলে থাকার জন্য সুবিধা হতো। পরিবারের অবহেলায় তেলের ড্রামের ওপর নদীর ধারে ঝুপড়ি ঘড় বানিয়ে থাকেন তিনি। কথার প্রসঙ্গে তিনি বলেন আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ, কেননা আল্লাহ শুধু আমার পা দুটোই নিয়েছেন হাত আর নেননি। হাত আছে বলেই আজ আপনাদের কাছে আসতে পারছি। এলাকার বিত্তবানের তাকে বিভিন্ন সময় আর্থিক সাহায্য করেন। এ ভাবেই বেঁচে আছেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আমরা প্রায় ছাব্বিশ বছর দেখছি সিরাজ এভাবে নদীতে বসবাস করছে। আমরা যখন গাছের নিচে ছায়ায় বসে কথা বলি সিরাজ মিয়া নৌকা নিয়ে এগিয়ে এসে কথা বলে। পরিবার থেকেও যেন নেই। ঈদে এলাকাবাসী সাহায্য-সহযোগিতা করে। এভাবে দেখতে দেখতে ছাব্বিশ টি বছর নদীতে কাটিয়ে দিলো সিরাজ। তার বয়স হচ্ছে এখন একটা স্থায়ী বসবাস আর কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা হলে ভালো হবে।
স্ত্রী জয়নব বেগম বলেন, অনেক কষ্টে দিনযাপন করছি আমরা। তাকে দেখভাল করতে আমর কষ্ট হয়। প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিলে শৌচাগারে নিতে পারিনা। সে আজ ২৬ বছর নদীতেই থাকেন। এখানে কয়েক জন মিলে প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে ঝুপড়ি ঘড় বানিয়ে দিয়েছে। সে এখানেই থাকেন, শৌচাগারে নিতে হয় না। বেড়া উপজেলা নির্বাহি অফিসার মোহাঃ সবুর আলী বলেন,বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। আপনার মাধ্যমে প্রথম শুনলাম। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।