admin
- ৩১ জানুয়ারী, ২০২৩ / ১১৬ Time View
Reading Time: 2 minutes
মোঃ হেলাল উদ্দিন সরকার, ধুনট বগুড়া :
বগুড়া ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে রাস্তার পাশে মোঃ আলামিনের (৩৫) আটা রুটির দোকান। ফজর নামাজের পর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে রুটি ভেজে বেচা। একাজে তাকে সহযোগিতা করে স্ত্রী মালেকা খাতুন, মাঝেমাঝে মেঝো ছেলে। সকালে খালি পেটে তেল জাতীয় খাদ্য খেলে পেটের সমস্যা হবে বলে খুজতে খুজতে আলামিনের দোকান নজরে আসে। সকাল বেলা, অনেক ডায়াবেটিস রোগীরা তাদের ভোরের হাটাহাটি করে দাড়িয়ে আছে আলামিনের দোকানের সামনে। শুধু তারাই নয়, ফজর নামাজ শেষ করে অনেকেই বাড়ি ফেরার পথে দাঁড়িয়ে আছে রুটি নেবার আসায়। আলামিন ও তার স্ত্রী প্রানপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে সকলকেই যথাসময়ে বিদায় করতে। কথা বলার সময় নেই। রুটি প্রতি পিছ কতো টাকা সামনে দাড়ানো এক ক্রেতাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম দশ টাকা। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কোনে রাখা বেঞ্চিতে বসে পরলাম। আলামিন আটা বেলে তাওয়ার উপরে দিচ্ছে আর স্ত্রী মালেকা একটি কাপড় দিয়ে চেপে চেপে রুটি ভেজে একজন একজন করে ক্রেতা বিদায় করছেন। মন দিয়ে রুটি ভাজা আর বিদায় করা দেখতে ভালোই লাগছে। হটাৎ একটা জিনিস নজরে এলো! রুটির সাথে প্যাকেটে কি যেনো দেয়া হচ্ছে। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম ভিতরে ওগুলো কি দেয়া হচ্ছে?জানতে পারলাম, কাউকে শুটকি ভর্তা, কাউকে সবজি, কাউকে আলু ভর্তা কেউবা গুড়। যে যেটা পছন্দ করে। এগুলো কি ফ্রী! কৌতূহল বসতঃ জানতে চেয়ে জানলাম, হ্যাঁ। শুনে ভালোই লাগলো। ইতিমধ্যে জিভে জল এসে গেছে। আর তর সইছে না। বেশির ভাগ ক্রেতাই এক রুটিতে তাদের সকালের নাস্তা সেরে নিলো। ভাবলাম আমারও একটা তেই চলে যাবে। সময় পার হয়ে গেলোআধাঘন্টা। একটু ভীর কমে এসেছে। সুযোগ বুঝে একটা রুটি চাইলাম। আলামিন সযত্নে একটা রুটি ভেজে জিজ্ঞেস করলো সাথে কি দেবে! উত্তরে বললাম সবজি ও শুটকি ভর্তা মিক্স করে দেয়ার জন্য। আলামিন একটা প্লেট টানতেই বললাম, প্লেটে না দিয়ে ছোট বেলায় মা যেমন করে রুটির ভিতর হালুয়া বা চিনি দিয়ে মুড়িয়ে রোল বানিয়ে দিত – সেভাবে দিতে। আলামিন আমার মুখের দিকে একবার তাকালো, মিটমিট করে একটু হেসে রোল বানিয়ে কাগজ দিয়ে পেচিয়ে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। রুটি একটুকরো কামড় দিয়েই বুঝলাম অসাধারণ কিছু একটা খাচ্ছি। এরপর একটু খাচ্ছি আর আলামিনের সাথে কথা বলছি। জানলাম, ওর তিন ছেলে স্ত্রী নিয়েই সংসার। জমি বলতে কিছুই নেই। বাড়িটার জায়গা তার মায়ের দেয়া। বড় ছেলে কাঠ মিস্তিরির কাজ করে। মেজোটা কিছুই করেনা, বয়স বারো তেরো। ছোটটা মাদ্রাসায় পড়ে। স্ত্রীর সাথে কথা বলে ভেবে চিন্তে স্ত্রীর পরামর্শেই এই রুটি বিক্রির কাজ শুরু। দোকানঘর ভাড়া নিতে গেলে অনেক টাকার দরকার। তাই গোসাঁইবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল হক বাচ্চুকে বিস্তারিত বলে, অনুরোধ করে রাস্তার পাশে ইউনিয়ন পরিষদের দেয়াল ঘেঁষে এই জায়গাটা পেয়েছে। রোদ-বৃষ্টিতে কামলার কাজ করতে পারে না বলেই এ পেশায় আসা। সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত বেচা বিক্রি প্রায় দুইহাজার টাকার মতন হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে সাত আটশো টাকা প্রতিদিন থাকে। একাজে তার স্ত্রী তাকে খুব সাহায্য সহযোগিতা করেন। আলামিন বলে সে নিজে আটা বেলে দেয়, স্ত্রী ভেজে দেয় বলে কাজ করতে খুব সহজ হয়। এভাবে চললে সে কিছু দিনের মধ্যেই স্বাবলম্বী হয়ে যাবে। মায়ের দেয়া জমিটা নিজের নামে রেজিষ্ট্রেশন করে নিতে পারবে। ছেলেটাকে ভালোভাবে হাফেজি পড়াতে পারবে। সে নিজেও একটা বড়ো দোকান নিতে পারবে, রাস্তা ছেড়ে ভালোভাবে ভালো পরিবেশে এ ব্যাবসাটা নিয়ে যেতে পারবে।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান মাসুদুল হক বাচ্চু বলেন, ছেলেটি বেশ সৎ এবং গরিব। জমিজমা নাই। তাই স্বাবলম্বী করতে এই জায়গায় কিছু দিনের জন্য একাজ করতে দিয়েছি। সে আরোও বলেন, আলামিন যে রুটি ভর্তা ভাজি বিক্রি করে সে নিজেও এগুলো অনেকবার খেয়েছে। বেশ ভালোই লেগেছে। শারীরিক কোনো সমস্যা হয় নাই। তাছাড়া হোটেলে তেলের খাবার শারীরিকভাবে ক্ষতিকর – এমতাবস্থায় আলামিনের রুটি বেশ উপকারী। গোসাঁইবাড়ি বাজারে আগত ব্যাবসায়ী, মরিচ তলার সুমন, ডিলার বক্কর চাচা, বিশিষ্ট আলেম সুইম প্রমুখ আলামিনের রুটির এব্যাবসার ব্যপারে বলেন – আলামিনকে দেখে আরোও কেউ এই ব্যাবসায় আসুক। গরম গরম এই রুটি খেতে ভর্তা দিয়ে বেশ সুস্বাদু। পরিশেষে আলামিন বলেন, এখানে আরোও রুটির দোকান হলে ভালোই হবে। যথেষ্ট চাহিদা আছে রুটির।