রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩০ পূর্বাহ্ন

News Headline :
মিছিলে গিয়ে নিখোঁজ শাহীন এক মাসেও বাড়ি ফেরেনি, মর্গে থাকা লাশের দাবি পরিবারের পাবনায় নবাগত পুলিশ সুপারের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের এক মাস পূর্ণ হওয়ায় শহীদদের স্মরণে পাবনায় শহীদি মার্চ কর্মসূচি পালন টাংগাইলের মধুপুরে “শহীদি মার্চ পালন” কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে লুট হওয়া একটি গ্যাসগান উদ্ধার নওগাঁর মান্দায় লীজকৃত পুকুরের দখল পাচ্ছেন না যুবদলনেতা আব্দুল জলিল জুড়ীতে নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন সাংবাদিকদের সাথে খাগড়াছড়ি পৌর প্রশাসনের মতবিনিময় সভা ইবিতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন রাজশাহীতে শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ৪৪১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

নেত্রকোণায় বিতর্কিত ফসল ক্ষতিকর তামাক চাষ দিন দিন বেড়েই চলেছে

Reading Time: 3 minutes

কামরুল হাসান, ময়মনসিংহ :
নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় অধিক ফলন ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ায় কথা ভেবে দিন দিন বেড়েই চলেছে ক্ষতিকার তামাক চাষী। অনেক চাষীর তামাক চাষের কুফল সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই কেন্দুয়া উপজেলার ইকুরা ও চিরাং ইউনিয়নের ৭ গ্রামের প্রায় শতাধিক কৃষক তামাক চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
তামাক চাষ করে কৃষকরা নগদ বেশি অর্থ পেয়েও তারা স্বনিনির্ভর না হয়ে পরনির্ভর হয়ে যাচ্ছে, হয়ে যাচ্ছে কোম্পানি নির্ভর। তামাক চাষের সাথে দারিদ্রতার একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অনেকের ধারণা তামাক চাষ লাভজনক কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় তামাক চাষ লাভজনক নয়। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি, ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনাল,জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল (জেটিআই) তিনটি বড় কোম্পানির সঙ্গে কিছু দেশীয় কোম্পানি বাংলাদেশে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ করছে।
ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ বাংলাদেশ। বিগত দিনে বাংলাদেশ সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। কিন্তু এফসিটিসির বিভিন্ন আর্টিকেল সম্পর্কে সাধারণ জনগনের মাঝে কোন ধারনাই নেই, যার ফলে ধূর্ত তামাক কোম্পানীগুলো খুব সহজেই মানুষকে বোকা বানাতে সক্ষম হচ্ছে। তামাক কোম্পানিগুলো তামাক চাষকে আর্থিকভাবে লাভজনক ব্যাখ্যা প্রদান করে সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছে।
চিকিৎসকগণ, কৃষি কর্মকর্তা, তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মী, উন্নয়ন কর্মী, মিডিয়া কর্মীগণ তামাক চাষের পরিবর্তে বিকল্প ফসল উৎপাদনে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য সরকারকে বারবার আহবান জানিয়ে আসলেও কোম্পানিগুলো কৃষকদের আগাম লোন, বীজ, সার, কীটনাশক, কৃষি উপকরণ, প্রশিক্ষণ প্রদান ও তামাক পাতা ক্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কৃষকদের কোম্পানির সিদ্ধান্ত অনুসারে “সবুজের সমারোহ” বলে আখ্যায়িত করে তামাক চাষে উৎসাহিত করছে। আবার, তামাক পাতা বিক্রয়ের মূল্য নির্ধারণ সরকার থেকে হয় না, কোম্পানির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়। নিজেদের জমি অথচ কোম্পানি বলে দিচ্ছে কখন জমিতে কিভাবে আবাদ করবে। কৃষকের স্বাধীনতা নেই। আবার কোম্পানি কর্তৃক নিবন্ধিত না হলে সঠিক দামও পাওয়া যায় না।
তামাক চাষে প্রায় ৭ মাস ( অক্টোবর থেকে এপ্রিল ) সময় লাগে। ফলে রবি মৌসুমের ফসল, অনেক সময় তিনটি কৃষি মৌসুমেই কোন ফসল করা সম্ভব হয় না। রবি মৌসুম ( ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫মার্চ ), খরিফ ১ ( ১৬ মার্চ থেকে ১৫ জুলাই ),খরিফ ২ ( ১৬ জুলাই থেকে ১৫ অক্টোবর )।
একদিকে কৃষি সম্প্রসারণের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতি উন্নয়ণ ও শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে কৃষি শিক্ষা, গবেষণা, বিপণন ও সম্প্রসারণের সেবার সঙ্গে তথ্য-প্রযুক্তির সম্পৃক্তকরণ, কৃষির সাথে সরাসরি যুক্ত কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের পারষ্পরিক মত বিনিময়ের মাধ্যমে চাহিদাভিত্তিক গবেষণার বিষয়বস্তু নির্ধারণ এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের উদ্যেশ্যে নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
একদিকে সরকার শস্য বহুমুখীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ। অন্যদিকে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের খপ্পরে পড়ে খাদ্য ফসলের জমিতে ধান, গম, ভুট্টা, দানাদার ফসল, ডাল ও তেল জাতীয় ফসল, মসলা ও সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্য চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। অতিরিক্ত সার, কীটনাশক প্রদানের ফলে জমির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।পুকুরের মাছ, হাঁস-মুরগী পশু-পাখির গাছ-পালারও অনেক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। বিঘ্নিত হচ্ছে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা। ফলে পুষ্টি নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। তামাক কোম্পানির এই আগ্রাসন প্রতিহত না করতে পারলে ক্ষুধামুক্ত স্বনির্ভর সোনার বাংলা গঠন কোন ভাবেই সম্ভব নয়।
তামাক চাষে অধিক শ্রম প্রয়োজন হয়। এতে পরিবারের শিশু সন্তান সহ পরিবারের সকলে এই কাজে নিয়োজিত থাকে । তামাক পাতায় নিকোটিন নামের উপক্ষারীয় উপাদান থাকে। ভোরে পাতায় কুয়াশা পড়া অবস্থায় পরিচর্যার সময় পাতার নিকোটিন চামড়ার মধ্যে দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। এতে শিশুরা মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। পড়াশুনা বিঘ্নিত হচ্ছে। তাদের শরীরে নানা রোগের এমনকি ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে। তামাক পাতা তোলার সময় তাদের হাত, মুখ ও শরীরের খোলা অংশ আঠালো এবং কালো হয়ে যায়।
নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার পাইকুরা, চিরাং, দুল্লী, বৈরাটী, ছিলিমপুর সহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষি জমিতে ধানসহ বিভিন্ন সব্জির পাশাপাশি এইক্ষতিকর তামাক চাষ করছেন চাষিরা। তামাক চাষ প্রথম দিকে কম থাকলেও এখানের কৃষকরা অন্য ফসলের চেয়ে লাভজনক মনে করায় দিন দিন এর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে উপজেলার অনেক চাষীই ক্ষতিকর তামাক চাষের সাথে জড়িত হয়ে পড়ছে। এতে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে।
চিকিৎসকদের মতে তামাক চাষ মানবদেহের জন্য মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ। এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছে, এই ক্ষতিকর তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে নানাভাবে কাজ করছেন তারা।
তামাক চাষের সাথে জড়িত কৃষকরা বলছেন জমিতে তামাক চাষ করতে গিয়ে তারা কোনো ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন না। এমনকি কৃষি অফিস থেকেও তামাক চাষের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে তা আবাদ করতে নিষেধ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে ডা. রুহুল আম্বিয়া পলাশ, আনসারী মেডিকেল অফিসার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ তিনি বলছেন যেসব এলাকায় তামাক চাষ হচ্ছে সেসব এলাকার শিশু ও বৃদ্ধ সহ স্থানীয়রা অত্যন্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে। তাই তামাক চাষ বন্ধ করার পরার্মশ দেন তিনি।
এ বিষয়ে এফ এম মোবারক আলী, উপপরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলেন, নেত্রকোণায় তামাকের আবাদ হচ্ছে এটি তার জানা নেই। তামাকের আবাদ ধীরে ধীরে উঠিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের নীতিমালা রয়েছে। এই লক্ষ্যেই কৃষি বিভাগ কাজ করছে। তামাক চাষ বন্ধে তারা নানামুখি উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন। কৃষকরা যাতে এই চাষের বিকল্প ফসল উৎপাদনে মনোযোগী হয় এবং কৃষকদের সচেতন করতে প্রতিটি প্রশিক্ষনে তামাকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হয়।
এ বছর নেত্রকোণায় কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী কেন্দুয়া উপজেলায় তামাক চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে যা বেসরকারী হিসেবে দ্বিগুণ বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তামাক পাতা কোনো ভাবেই দেশের এবং দেশের মানুষের উপকার করছে না, বরং যে ক্ষতি করছে তার প্রভাব সুদূর প্রসারী। স্থানীয় জনগণ মানুষের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তাসহ, বহুদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে। তাই তাদের দাবি যেন সরকারী উদ্যোগে মানুষের জীবন মান উন্নয়নের স্বার্থে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com