বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
আল এহসান হক মাসুক, পাবনা :
পাবনা শহরের চাঞ্চল্যকর দস্যুতা ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৭২ ঘন্টার মধ্যে ঘটনার সাথে জড়িত পাবিপ্রবি ও এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থীকে নগদ টাকা ও চার ভরি স্বর্ণালংকার সহ গ্রেফতার করেছে পাবনা জেলা পুলিশ। এ ঘটনায় তাদের নিকট থেকে নগদ ৩১ হাজার টাকা , চার ভরি স্বর্ণ ও তাদের ব্যবহৃত তিনটি মোবইল উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার বেলা ১২ টায় পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদে সম্মেলনে উপরোক্ত তথ্য ও প্রেস বিফিং করেন পাবনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মাসুদ আলম।
ঘটনার বিবরণে পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে জানায় , গত ১০ই জানুয়ারী শহরের জহির ডাক্তারের বাড়িতে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিভ পরিচয়ে প্রবেশ করে ছিনতাই কারী চক্রের সদস্যরা। এ সময় জহির ডাক্তারের স্ত্রীর সন্দেহ হলে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা দ্রুত দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে মোবাইলে তাদের পালানোর দৃশ্য ধারণ করেন তিনি। ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমোলচনা ও সাধারণ মানুষের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাটি ঘটার একদিনের মাথায় চক্রটি কৌশল পাল্টিয়ে প্রাইভেট টিচার পরিচয়ে শহরের বড় বাজারের মোঃ আরিফ চৌধুরীর বাড়িতে প্রবেশ করে। বাড়িতে প্রবেশ করে আরিফ চৌধুরীরর অনুপস্থিতে তার স্ত্রীকে হাত পা বেধে ধাড়ালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাড়িতে থাকা নগদ ৭২ হাজার টাকা ও ৪ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার ছিনতাই করে নিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় পাবনা সদর থানায় আরিফ চৌধুরী একটি দস্যুতার মামলা করলে জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নড়ে চরে বসে এবং আসামীদের ধরতে মাঠে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও জেলা পুলিশের একটি চৌকস দল মাঠে নামে আসামীদের গ্রেফতার করতে। দীর্ঘ ৪-৫ দিন তথ্য প্রযুক্তি সাহায্যে ও বিভিন্ন এলাকার সিসি টিভি ফুটেজ দেখে তদন্ত করে অতি দ্রুত ঘটনার সাথে জড়িত ছিনতাই কারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় আটককৃত ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা হলেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ঈশ্বরদী থানার দীঘা গ্রামের মৃত জমশের আলীর ছেলে মোঃ লিখন হাসান (২৪) , সরকারী এডওয়ার্ড কলেজের ইংরেজী বিভাগের দ্বিত্বীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাজশাহী জেলার কাশিয়াডাঙ্গা থানার মিয়াপুর সুতাহাটি গ্রামের মোঃ আব্দুল্লাহিল কাফির ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহিল বাকী অনিক (২২) ও সদর থানার চরতারাপুর ইউনিয়নের ভাদুরিয়া ডাংগী গ্রামের মোঃ হাতেম আলী মন্ডলের ছেলে মোঃ আবুল বাশার (২১) । এ ব্যাপারে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ সকল অপকর্মে কীভাবে জড়িয়েছে জানাতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম আমার সংবাদকে জানায় , ভারতীয় সিরিয়াল ক্রাইম প্রেট্রোল দেখে তারা এই নেক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়েছে । তারা ভারতীয় সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল থেকে ছিনতাইয়ের কৌশল শিখেছে এবং ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে তারা সেই কৌশলটি ব্যবহার করেছে। তারা সকলেই অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও আইটি বিষয়ে অভিজ্ঞ। তারা হোয়াটস এ্যাপ ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেম ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতো। তারা সে বাসাগুলো টার্গেট করতো তা আগে থেকেই সে বাসার মালিক ও পরিবারের সদস্যদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা ও কৌশল খাটিয়ে একেক বাড়িতে একেক নাম পরিচয় ব্যবহার করতো। যেহুতু তারা তিনজনই শিক্ষার্থী এ জন্য আমরা সকল অভিভাবকদের অনুরোধ করবো আপনারা আপনার সন্তানদের সাথে সম্পর্ক ভালো ভাবে তৈরি কুরন এবং নজর রাখুন আপনার সন্তানেরা কোথায় কি করছে। তাদের কখন কি দরকার , কি প্রয়োজন আপনারা জানুন বুঝার চেষ্টা করুন ও সন্তানদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করুন। তাহলে আপনাদের সন্তানেরা খারাপ পথে যাবেনা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। শুধু পুলিশ একা অপরাধ নিমূল করতে পারেনা তার জন্য আপনাদের সকলের সহযোগীতা দরকার বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মাসুম আলম জানান ।
অপরদিকে গত (১২ ই জানুয়ারী ২০২৩) সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের পশ্চিম জামুয়া গ্রামে গভীর রাতে বসত বাড়িতে ঢুকে পূর্বশত্রুতার জেরে হত্যার উদ্দেশে গুলি করার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ঘড়ে থাকা নাজমা খাতুন নামে এক মহিলা গুলি করলে গুলির নিশানা মিস হয়ে পায়ে লাগলে সে গুরুত্বর আহত হয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পরদিন পাবনা সদর থানায় মামলা করলে আসামীদের ধরতে পুলিশ তদন্তে নামে ।
এ ঘটনায় পুলিশি ব্যাপক তৎপরতায় ও অভিযানে সদর থানার গয়েশপুর থেকে অস্ত্রধারী আসামী ভাড়ারা মধ্য জাতুয়া গ্রামের মৃত ভেগু সর্দারের ছেলে মোঃ ইয়াছিন সরদারকে (৫০) গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে জড়িত আরেক আসামীকে ভাড়ারা ইউনিয়নের আওরডাঙ্গা পূর্বপাড়া থেকে মৃত রহিম শেখের ছেলে মোঃ আওকাত আলী শেখকে (৫০) গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় পুলিশ জানায় দীর্ঘদিন ধরে ভিক্টিম নাজমা খাতুনের পরিবারের সাথে তার দেবর মোঃ ইয়াছিন সরদারের শত্রুতা ও পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। এরই জেরে আসামী ইয়াছিন ১২ তারিখ গভীর রাতে নাজমা খাতুনের ঘড়ে ঢুকে তাকের মারার জন্য তাকে উদ্দেশ্য করে গুলি করে। এতে নাজমা খাতুন প্রাণে বেচে গেলে তার বাম পায়ে গুলি লেগে সে মারাত্মক আহত হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে । ঘটনার কারণ হিসেবে আমরা পূর্বশত্রুতাকে মনে করছি। উক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে সদর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে।