বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩১ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা:
পাবনায় বে-সরকারী স্বাস্থ্যখাতে কমিশন বাণিজ্য চরম আকার ধারন করছে। এছাড়া অপচিকিৎসা, ভুল চিকিৎসায় ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে সাধারন মানুষ। প্যাথলজিক্যাল টেষ্ট ও অপারেশন করার কারনে দালাল ও ডাক্তাররা ২০% থেকে ৫০% কমিশন গ্রহন করে থাকে। এছাড়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে রয়েছে টাকার বিনিময়ে নিম্নমানের ঔষুধ বা অপ্রয়োজনীয় ঔষুধ লেখার অভিযোগ। এসব নিম্নমানের কোম্পানীর রয়েছে মোবাইল রিপ্রেজেন্টটিটিভ। তাদের কাজ শুধু প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলা, ডাক্তারগণ সঠিকভাবে ঔষুধ লিখছে কিনা তা তদারকির জন্য। এতে চরমভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে সেবাগ্রহিতারা মুল্যবান সম্পদ বিক্রি করে চিকিৎসা সেবা গ্রহন করতে হবে। এমনকি অনেকে ভিটে-মাটি বিক্রি করে চিকিৎসা গ্রহন করে থাকে, অভিযোগ রোগী ও তার স্বজনদের। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা যদি শিঘ্রই এ কমিশন বাণিজ্য বা উচ্চমুল্যে পরিক্ষা-নিরিক্ষা বন্ধ না করেন, তাহলে আগামীতে রোগী ও তার স্বজনদের বড় ধরনের অর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে। এদিকে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কতিপয় দুর্নীতিবাজদের মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করেই অনুমোদন নিচ্ছে হাসপাতাল বা ডায়াগণস্টিক সেন্টার। পাবনা সদর হাসপাতাল রোডসহ শহরের আশে পাশে বাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে হাসপাতাল ও ডায়াগণস্টি সেন্টার। পাবনার একটি বেসরকারী হাসপাতালের কিছু তথ্য আমাদের হাতে এসেছে, যা দেখলে চমকে ওঠার মত।
পাবনার পিডিসি নামক একটি বেসরকারী স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের কিছু তথ্য দেখা যায়, যেখানে ডাঃ মুরাদ (ডিএইচএম) রেফার্ডকারী একজন রোগীর প্যাথলজিক্যাল পরিক্ষার ফি নেওয়া হয়েছে ৬হাজার ৮শত ৬০ টাকা। রেফার্ডকারী ডাক্তারের কমিশন দেওয়া হয়েছে ১হাজার ৮শত ৪১ টাকা। আখি নামে একজন স্বাস্থ্য কর্মী কিমিয়া থেকে প্রেরনকৃত রোগীর মোট প্যাথলজিক্যাল পরিক্ষা ফি ৩ হাজার টাকা। প্রেরকের নামে কমিশন কাটা হয়েছে ১হাজার ১শত ৯১ টাকা। রানা কিমিয়া থেকে প্রেরিত রোগীর মোট বিল ১হাজার৬শত ৬০টাকা, কমিশন কাটা হয়েছে ৪শ টাকা। আটঘরিয়ার মানিক ব্যাংকার নামে একজনের রেফারেন্সে রোগীর মোট বিল ৮হাজার৯শ ১০টাকা, কমিশন কাটা হয়েছে মাত্র ২হাজার টাকা। ডাঃ আলহাজ¦ তাহসিন আজিজ প্রেরিত রোগীর বিল ১২ হাজার৫শ ৫০টাকা, কমিশন দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩হাজার৩শ ২৯টাকা। ওই প্রতিষ্ঠানে ১৪ অক্টোবর-২০২২ আংশিক এক হিসাবে দেখা গেছে কমিশন বিল প্রদান করা হয়েছে ৮৭হাজার৩শ ৫০টাকা। পিডিসি হাসপাতালে অপচিকিৎসা বা ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর হার অন্যে যে কোন হাসপাতালের চেয়ে বেশি। এই তথ্য শুধু পিডিসি হাসপাতালে মনে করলে ভুল হবে। তথ্যনুসারে, বেসরকারী একটি হাসপাতালের একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ওই হাসপাতাল থেকে শুধু প্যাথলজিক্যাল টেস্টের কমিশন তুলতেন মাসে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। এভাবে রোগীদের গলা কেটে রেফারকারীকে উচ্চমুল্যে কমিশন প্রদান করার ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন রোগী ও তার স্বজনেরা। অনেকেই এখন বিভিন্ন ক্লিনিক বা হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসেন কমিশন লাভের আশায়। গ্রামগঞ্জের অনেকেই সমাজ সেবার নামে ক্লিনিক বা হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসেন কমিশন লাভের আশায়। এদিকে রোগীর সেবা প্রদান করায় এলাকায় তিনি সমাজ সেবক হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন।
তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, বিভিন্ন গ্রাম্য ডাক্তারগন সিজারসহ নরমাল ডেলিভারি বা বিভিন্ন জটিল অসুখ হলেই রোগীদের নিজের পছন্দের ক্লিনিক বা প্যাথলজিকাল চেম্বারে পাঠিয়ে দেন। এসব গ্রাম্য সহজ সরল রোগীরা গ্রাম্য ডাক্তারের উপদেশ মত ওই সব ক্লিনিক বা প্যাথলজিক্যাল ক্লিনিকে চলে আসেন। এই সুযোগে ওই সব প্রতিষ্ঠান বিনা প্রয়োজনে একাধিক প্যাথলজি পরিক্ষিা-নিরিক্ষা করে থাকেন। একদিকে যেমন নিজেরা লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে রোগীর পকেট কেটে গ্রাম্য ডাক্তার বা দালালদের পকেট ভারি করছেন। অনেক সময় চিকিৎসার বিপুল পরিমান আর্থিক ব্যায়ভার চালাতে না পেরে রোগীরা মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে। এছাড়া প্যাথলজিক্যাল ক্লিনিকগুলোর পরিক্ষার মান নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। গেল ডিসেম্বর মাসে সদর হাসপাতালের সামনে নদী ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে একটি পরিক্ষায় পজেটিভ রির্পোট দেওয়া হলেও শফিক হাসপাতাল সেই রির্পোট স্বাভাবিক হিসাবে দেখানো হয়। কয়েক বছর আগে ইউরো মেডিক্যাল সেন্টারের প্যাথলজিকাল পরিক্ষায় পজেটিভ রিপোর্ট দিলেও শিমলা হাসপাতালের রিপোর্টে স্বাভাবিক হিসাবে দেখানো হয়। ভুল চিকিৎসা, চিকিৎসা শেষে পেটে গজ-কাঁচি বা একটি অসুখে অপারেশনের জন্য অজ্ঞান করার পর একাধিক অসুখ দেখিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগের শেষ নেই পাবনার বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে। সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, ক্লিনিক বা হাসপাতালগুলো তাদের দালালদের জন্য রেখেছে সুন্দরী মেয়ে। দালালদের মনোরঞ্জনের জন্য এসব কিশোরী মেয়েদের ব্যবহার করে থাকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
পাবনায় স্বাস্থ্য বিভাগের উচ্চ পর্যায়ে দায়িত্বরত কর্তা ব্যাক্তি, পাবনার জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহল উদ্দোগ না নিলে এই খাতে চরম বিশৃংখলা দেখা দিতে পারে। স্ধাারণ মানুষ অপচিকিৎসার শিকার হয়ে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবে এমনকি মৃত্যুঝুকিত পতিত হতে পারে।
বিঃ দ্রঃ গোপনীয়তার জন্য সংবাদদাতাদের তথ্য গোপন রাখা হলো।