বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা:
পেটে ছিলো সন্তান, আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে। শরীরে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে নবজাতক। ডাক্তারের পরামর্শে পাবনায় বে-সরকারী মডেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগণষ্টিক এ ভর্তি। এরপর অপারেশন থিয়েটারে সিজার করা হয়। সিজার শেষে প্রসূতীর স্বজনদের জানানো হয় প্রসূতীর গর্ভে কোন সন্তান নেই। তাহলে কি ছিলো প্রসূতীর পেটে প্রশ্ন স্বজনদের। দীর্ঘ ৯ মাসে প্রসূতীর পেটে তাহলে কি বেড়ে উঠেছিল? এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে পাবনা জেলায়। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ঘটনাটি টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে। সবার একই প্রশ্ন পেটে যদি প্রসূতীর পেটে বাচ্চা না থাকবে, তাহলে সিজারের জন্য কেন ভর্তি করা হলো? সিজার বা কেন করা হলো? সদুত্তর কি আছে ? প্রসূতীর স্বামী কাজি নজরুল ইসলাম জোরালো কন্ঠে বলেন, তার স্ত্রীর পেটে কি ছিলো সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান। প্রয়োজনে তদন্তে যদি তিনিও দোষি সাবস্থ্য হন, তাও তিনি মাথা পেতে নিবেন। কিন্তু তার দাবি তার স্ত্রী পেটে কি ছিলো?
ঘটনার বিবরণে জানা যায় প্রসূতি আখি খাতুন চিকিৎসকের পরামর্শে গত শুক্রবার সন্ধায় সিজারের জন্য পাবনায় বে-সরকারী মডেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগণষ্টিক এ ভর্তি হন। গত শুক্রবার রাত ১০টায় পাবনা সদর উপজেলার পৌর শালগাড়িয়া হাসপাতাল রোডে শাপলা প্লাস্টিক মোড়ে অবস্থিত ওই হাসপাতালে সিজারের পর নবজাতক নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। মোছা: আখি খাতুন পাবনা জেলার আমিনপুর থানার মাসুমদিয়া ইউনিয়নের রতনগঞ্জ গ্রামের কাজি নজরুল ইসলামের স্ত্রী।
প্রসূতি মোছা: আখি খাতুন জানায়, তিনি ডা: শাহিন ফেরদৌস শানুর পরামর্শে তার স্বজনদের সাথে নিয়ে পাবনা মডেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগণষ্টিক এ গত শুক্রবার সন্ধায় ভর্তি হন। সকল প্রক্রিয়া শেষে রাত ১০টায় তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে অজ্ঞান করে সিজারের অপারেশন করেন। তিনি একপর্যায়ে তার নবজাতক সন্তানের কান্নাও শুনতে পান।
প্রসূতির স্বামী কাজি নজরুল ইসলাম জানান, গত ৮/৯ মাস পুর্ব থেকে ডা: শানুর তত্বাবধানে তার স্ত্রী আখি খাতুনের চিকিৎসা সেবা গ্রহন করছেন। গত দেড় মাস পুর্বে ডা: শানুর চেম্বারে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হলে তার স্ত্রী’র গর্ভে পুত্র সন্তান রয়েছে বলে জানান। এর পর ডা: শানুর নির্দেশে গত শুক্রবার সন্ধায় তার স্ত্রী আখি খাতুনকে পাবনা মডেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগণষ্টিক এ ভর্তি করেন। অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার ৩০ মিনিট পর ডা শানু তাকে জানায়, তার স্ত্রীর গর্ভে কোন সন্তান নেই এবং রোগীর অবস্থা খারাপ, তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। এই বলে ডা: শানু ও অপারেশন টিম অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এরপর রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে রেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নানা রকম তথ্য দিতে থাকে। এক পর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অসংলগ্ন কথা বার্তায় প্রসূতীর স্বামী নজরুল ইসলাম শুক্রবার রাতেই পাবনা সদর থানায় মৌখিকভাবে অবগত করে সহযোগিতা কামনা করেন। থানা পুলিশ প্রসূতীর স্বামীকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলে। এরপর প্রসূতীর স্বামী থানা থেকে মডেল হাসপাতালে ফিরে এলে তাকে নানাভাবে হয়রানি ও বিভিন্ন প্রলোভন দিতে থাকে। পরে প্রসূতির স্বামী বিষয়টি তার আত্বিয় স্বজনকে জানালে শনিবার বিকালে তারা মডেল হাসপাতালে আসেন। সন্ধায় ঘটনাটি ব্যাপকভাবে জানাজানি হলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন, ডা: শাহিন ফেরদৌস সানুর পরামর্শে প্রসূতি রোগী আখি তাদের হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর রাত ১০টায় তার সিজারের অপারেশন শুরু হয়। ডা শানু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানায়, প্রসূতির গর্ভে কোন বাচ্চা নেই। এই বলে ডা: শানু ও তার সহযোগীরা হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
আখির স্বজনদের অভিযোগ সিজারের সময় নবজাতকের কোন দুর্ঘটনা ঘটেছে অথবা তাদের নবজাতককে ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চুরি করে অন্যাত্র সরিয়ে ফেলেছে। তারা ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে দোষিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেন। হাসপাতালে ভর্তির সময় সকল কাগজপত্র সরিয়ে ফেলার অভিযোগ করেন রোগীর স্বজনেরা। হাসপাতালের রাখা কাগজপত্র তারিখ কাটকাটি করা।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি কৃপা সিন্ধু বালা জানান, তারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ ব্যাপারে ডা শানুর মোবাইলে ফোন করা হলে, তা বন্ধ পাওয়া যায়।