রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৫৫ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
মোঃ সবুজ মোল্লা, ঈশ্বরদী পাবনা:
পাবনার ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের আরামবাড়িয়া থেকে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পর্যন্ত নদীর তীরের আট কিলোমিটারের ভিতরে সাত কিলোমিটার রয়েছে নদী রক্ষা বাঁধ। শুধুমাত্র সাঁড়া ৫নং ঘাট এলাকার প্রায় ১ কিলোমিটারে বাঁধ নেই। গত বছর সাঁড়া ঘাটের প্রায় ৫০ ফুট এলাকা ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলছেন এই নদী ভাঙনের মূল কারন অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন। সাঁড়া ঘাটের পাশেই বসবাস করে জেলেরা। ভয়াবহ এই নদী ভাঙনে জেলে পল্লীতে আতংক বিরাজ করতে দেখে গেছে। এই ভাঙনের কারনে জেলে পল্লীর অধিবাসীদের কারো চোখে ঘুম নেই। কারন যে কোনো সময় তাদের ঘরবাড়ি নদীতে বিলিন হয়ে যেতে পারে। আর ঘরবাড়ি নদীতে বিলিন হয়ে গেলে তাদের মাথা গুজার কোনো যায়গা নেই। সরকারিভাবে নির্মিত মৎস্য সমিতির ঘড়টির এক ভাগ ভাঙনের কবলে পড়ে নদীর মধ্য চলে যেতে দেখা গিয়েছে। এমনকি আশেপাশের দোকানপাট গুলো যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে নদী হতে বসত বাড়ির দুরত্ব মাত্র ১৫-১৬ ফুট। অতি দ্রত ভাঙনের প্রতিরোধে পদক্ষেপ না নিলে বাড়িঘড় নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। ঘাটের মৎস্য সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম হোসেন সাংবাদিকদের জনান, ৫নং সাঁড়া ঘাটের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে সাত কিলোমিটার ব্যাপী নদী রক্ষা বাঁধ আছে । বর্ষাকাল আসলেই আমাদের ভাঙনের আতংকের মধ্য থাকতে হয় । এবারে অবস্থা খুবই ভয়াবহ। পদ্মা ভাঙতে ভাঙতে বসতবাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। যে কোনো সময় বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। খুবই উৎকণ্ঠায় দিন কটাচ্ছি। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি । সরকারের দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ আশা করছি।
এই ব্যাপারে ব্যবসায়ী মিলন হোসেন সাংবাদিকদের জানান , এলাকার অধিকাংশ মানুষ অতি দরিদ্র। জেলে পল্লীসহ এলাকায় প্রায় তিন হাজার বাসিন্দা খুব আতংকের মধ্যে রয়েছে। বাপ-দাদার বসতভিটা পদ্মায় বিলীন হলে পথে বসতে হবে। রাতে কারও চোখে ঘুম নেই। বাঁধ নির্মাণের জন্য এলাকার জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডেন কর্মকর্তাদের কাছে আমরা ধর্ণা দিয়েছি বারংবার। মানববন্ধনও করেছি, কিন্তু বাঁধ নির্মাণের কোনো উদ্যোগ আমাদের কারো চোখে পড়েনি। তারা আমাদের এই দুর্দিনে দেখতেও আসেনা। সংবাদপত্রে লিখালিখি হলে তারা এসে ঘুড়ে যায় বাধ নির্মানের প্রতিশ্রুতি দেয়। জেলে পল্লীর মোড়ল অসিত হালদার সাংবাদিকদের বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বাররা প্রায়ই ভাঙন দেখে যায়, কিন্তু ভাঙন ঠেকাতে উদ্যোগ নেয় না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা মাপামাপি করে চলে যায়। আমাদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হওয়ার পর কী তারা বাঁধ নির্মাণ হবে ? কার কাছে আমাদের কষ্টের কথা বলবো। কে শুনবে আমাদের কথা।
আপনারা সাংবাদিকরা পাশে আসেন আমাদের দুক্ষ দূর্দশা দেখেন এবং লিখালিখি করেন। আপনাদের মাধ্যমে উপরের সকল কর্মকর্তাদের চোখে পড়লে হয়তো আমাদের এই দূর্দশা শেষ হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা আপার দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানাতে চাই আপনি আমাদের পাশে থাকবেন বলে আমরা আশা করি। সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মোহাম্মদ রফিক বলেন, ৫নং ঘাট এলাকার মানুষজন খুবই আতংকে রয়েছে। খুব কস্টেই দিন পার করছে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে এখানে ভাঙন শুরু হয়েছে। মাত্র দেড় কিলোমিটার অদূরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু পূর্বে ৫০০ মিটার দূরে ঈশ্বরদী ইপিজেড। নদীর গতিপথ পরিবর্তনে এসব স্থাপনাও হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, তারা ব্যবস্থা যদি ব্যাবস্থা না নেয় তাহলে আমরা কি করবো। এ বেপারে সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন , ৫নং ঘাটের বসতবাড়ি, দোকানপাট চরম হুমকির মুখে। বাড়িঘর যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । শুধুমাত্র ৫নং ঘাট এলাকার এক কিলোমিটার বাঁধ নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষ কেন যে বাঁধ নির্মাণ করছে না তা আমার বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে বারবার ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষ বাঁধ নির্মাণের জন্য নদীর তীর পরিমাপ করেছে, এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এখানকার প্রায় ৩ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা সংকটের মুখে পড়েছে। তাদের জন্য আমারও অনেক খারাপ লাগছে। এ বেপারে ঈশ্বরদীর ইউএনও পি এম ইমরুল কায়েসের সাথে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, নদীর মূল চ্যানেলের মুখে পলিমাটি জমে যাওয়ায় নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে ওই এলাকায় ভাঙন হচ্ছে। তাছাড়া স্রোতের তীব্রতাও অনেক বেশী। । বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান বলেন, ঈশ্বরদীর সাঁড়ার ৫নং ঘাট এলাকায় আমি নিজে গিয়েছিলাম। গতবছর নদী ভাঙন শুরু হলে সেখানে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন রোধ করা হয়েছে। বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।