admin
- ৮ নভেম্বর, ২০২২ / ১৪২ Time View
Reading Time: 3 minutes
এম আর রাসেল হোসাইন, ঈশ্বরদী পাবনা:
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় গাজরের ফলন দিন দিন বাড়ছে। কৃষকরা লাভবানও হচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জমিতে আবাদ চলছে পুষ্টিকর গাজর । আবহাওয়া ভালো থাকায় ভালো ফলন ও দাম পাওয়ার আশা করছেন এখানকার গাজর চাষিরা। তবে সবজি-ফলমূল সংরক্ষণাগার থাকলে কৃষকেরা আরও বেশি লাভবান হতো বলছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা এবং কৃষকেরা । ঈশ্বরদীসহ উত্তরবঙ্গে সবজি সংরক্ষণাগার না থাকায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে সংরক্ষণাগার থাকলেও স্থানীয়দের পক্ষে দূরে সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। এলাকার কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি উদ্যোগে সবজি ও ফল সংরক্তেণাগার স্থাপনের দাবি জানালেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না । এক কেজি বীজের দাম এখন ২১,৫০০ টাকা, গত বছর এ বীজের মূল্য ছিল ১৭,৩০০ টাকা। প্রতি কেজি বীজ’র দাম বেড়েছে ৪০০০ টাকা । স্থানীয় শ্রমিক সংকটের কারণে দুপুরের খাবার এবং ৫০০-৭০০ টাকা হাজিরার নীচে এখন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। কোন কোন সময় এক হাজার টাকা পর্যন্তও হাজিরা দিতে হয়। এক বিঘা জমিতে গাজর চাষে খরচ প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা । স্থানীয় কৃষকরা জানান, মৌসুমে একই জমিতে দুই দফায় গাজরের আবাদ হয়ে থাকে। তবে কেউ একবার আবার কোনো কৃষক দুই দফায় গাজর আবাদ করে থাকেন। রবি মৌসুমের শুরুতে গাজরের আবাদ শুরু হয়। আবাদের তিন মাসের মাথায় গাজর পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। গাজর জমিতে থাকতেই বেপারীরা কিনে নেন। উঁচু জমি গাজর চাষে ঈশ্বরদীর অনুকূল আবহাওয়া রোগ বালাই কম স্বল্প শ্রম উৎপাদন বেশি এবং দাম ভালো পাওয়ায় গাজর চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। গাজর চাষ করেই অনেক কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। এখানকার গাজরের ভালো স্বাদ ও পানি কম থাকায় স্থায়িত্ব বেশী হওয়ায় চাহিদাও প্রচুর। এ কারণে ঈশ্বরদীর গাজরের সুনাম ও চাহিদা দেশব্যাপী রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায় ভোর হতে জমিতে গাজর’র জমিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কৃষক ও শ্রমিকরা। আর ৮/১০দিন পর থেকেই শুরু হবে গাজর ওঠা ।
এক বিঘা জমিতে ১০০ থেকে ১২০ মণ গাজর আবাদ হয়ে থাকে। বিঘা প্রতি গাজরের দাম এক লাখ থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে চাষীরা। শীতকালীন সবজি শিম, বেগুন, লাউ, বরবটি, শাক, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়স, চিচিংগা ও ধানের পাশাপাশি গাজর আবাদ করেও এখানকার চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। দেশের অধিকাংশ এলাকায় সবজির চাহিদা পূরণ হচ্ছে ঈশ্বরদী থেকে । লক্ষীকুন্ডা, সাহাপুর ও সলিমপুর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা গাজর কিনে নিয়ে যান ট্রাক বোঝাই করে । বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ঈশ্বরদীর কৃষক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, এবারে ১০০ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছি। গাজর চাষ গত বছরের তুলনায় এবারের খরচটা কিছুটা বেশি হয়েছে। এবারে বীজের দাম বেশি থাকাই বিঘা প্রতি গাজর চাষের খরচ হয়েছে ৪২ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। গাজর জমি থেকেই ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি হচ্ছে । এতে আমাকে উপজেলা কৃষি কর্মর্কতারা সহযোগীতা করেছে বিভিন্ন ভাবে। গাজর চাষী ভুট্রু আলী বলেন, এ বছর আমি ১৭ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছি । খাজনা, বীজ, সার, শ্রমিক খরচ দিয়ে ১৭ বিঘা জমিতে গাজর আবাদ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা। এবার বীজ কিনেছি ২১,৫০০ টাকা কেজি যা গত বছরে ছিল ১৭,৩০০ টাকা । গাজর উঠতে আর ১০/১৫ দিন সময় লাগবে । তিনি আরো বলেন কৃষি অফিসারদরে কোন পরামর্শ আমি পায়নি । গাজর চাষী সুলাইমান বলেন, এবার যদি আবহাওয়া ভালো থাকে তাহলে গাজরে লাভবান হবো । গাজরের ফলন এবার ভালো হয়েছে। এক লাখ বিশ হাজার থেকে এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে । আমি বিঘা প্রতি এক লাখ বিশ হাজার টাকা বিক্রি করেছি ।এবার গাজরের বাম্পার ফলনের সম্বাবনা রয়েছে । কৃষি অফিসাররা আমাদের সহযোগীতা করলে ফলন আরো ভালো হবে । উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার সমতল জমিতে গাজর আবাদ হয়ে আসছে। এখানকার বেলে দোঁ-আঁশ মাটি গাজর চাষের জন্য ভীষণ উপযোগী। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, লাভজনক ও পুষ্টিকর সবজি হওয়ায় ঈশ্বরদীতে প্রতিবছর গাজরের আবাদ বাড়ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে গাজর চাষে কৃষকদের সব রকম সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। এ বছর ঈশ্বরদী উপজেলার ৮৫০ হেক্টর জমিতে গাজরের চাষাবাদ হচ্ছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৮৫৬ হেক্টর । চাহিদা থাকা ও দাম ভালো পাওয়ায় প্রতিবছর গাজরের আবাদ হয় ।গাজর বাজারে উঠলে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি গাজর বিক্রয় হয়। এবারে গাজর’র ৪০ মেট্রিক টন ফলনের আশা করা যাচ্ছে । উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যে লক্ষীকুন্ডা, সাহাপুর ও সলিমপুর ইউনিয়নে গাজরের আবাদের পরিমাণ বেশি। বাকী চার ইউনিয়নে আবাদ কম।