সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
ঈশ্বরদী, পাবনা প্রতিনিধি
পাবনার ঈশ্বরদীর প্রধান অর্থকারী ফসল লিচুর ভরা মৌসুমে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা থাকায় গাছেই নষ্ট হচ্ছে শামসুল হক (৫৫) নামের এক অসহায় কৃষকের লাখ টাকার টসটসে পাকা লিচু। ১৫টি গাছের পাকা লিচু ওই কৃষকের চোখের সামনে প্রতিদিনই ঝরে নষ্ট হচ্ছে। নিরবে দেখা ছাড়া তাঁর যেন কোন উপায় নেই। ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর মধ্যপাড়া গ্রামের এই ঘটনাটি এখন স্থানীয় এলাকাবাসীর মুখে মুখে। ভাইদের মধ্যে দ্ব›দ্ব থাকায় লিচু পাড়া নিয়ে সংঘর্ষের আশংকায় পুলিশের পক্ষ থেকে এমন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে জানান ঈশ্বরদী থানার ওসি আসাদুজ্জামান। গতকাল রবিবার ওই বাগানে গিয়ে দেখা যায়, পাকা লিচু অবিরত ঝরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
অভিযোগ সুত্রে ক্ষতিগ্রস্থ লিচু চাষী শামসুল হক জানান, ২০০০ সালে তার পিতা মহিউদ্দিন প্রামানিক মারা যাওয়ার পর তারা তিন ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তাদের সমস্ত জমিজমা ভাগ বাটোয়ারা করা হয়। সেই ভাগ বাটোয়ারা অনুযায়ী শামসুল হক প্রায় ৫৯ শতাংশ জমি ও কিছু লিচুর গাছ পান। সেই জমিতে তিনি আরও কিছু লিচুর গাছ রোপন করে বড় করেন। প্রায় ২০ বছর ধরে ভোগ দখল করে থাকা ওই জমির ২২ শতাংশ তিনি দুই জনের কাছে বিক্রি করেন। বাকি জমিতে শামসুল হকের বসত ভিটা ও ১৫টা লিচুর গাছ রয়েছে। অসহায় শামসুল হক নিঃসন্তান হওয়ায় তার অন্য দুই ভাই ও বোনেরা ষড়যন্ত্র করে তার সমস্ত জমিজমা দখলে নিতে উঠেপড়ে লাগে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে গত ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যার সময় শামসুল হক জয়নগর বোর্ড অফিস মোড় থেকে বাড়ি ফেরার পথে ভাগ্নি হিমু (২৪), ভাতিজা শিশির (২৩), ভাই এনামুল হক (৬০) ও আসাদুল হক (৫৮) একত্রিত হয়ে তার পথরোধ করে নানা ধরণের অশ্লীল গালিগালাজ দিতে থাকে। একপর্যায়ে শামসুল হক তাদের গালি দিতে নিষেধ করলে তারা যৌথ ভাবে তাকে মারপিট করে। একপর্যায়ে ভাগ্নি হিমু তার কাছে থাকা পিস্তল দিয়ে মামা শামসুল হকের ডান পানে গুলি করে। সে সময় ভাতিজা শিশির তার চাচার পকেট থেকে ৩০,৫০০ টাকা জোর পূর্বক ছিনিয়ে নেয়। সেই ঘটনায় শামসুল হক বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২৪, তাং-১৬.১২.২০২০ইং। এই ঘটনায় আসামীরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে এসে মামলার বাদি অসহায় শামসুল হককে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। অসহায় শামসুল হক অভিযোগ করেন, তাকে পিস্তল দিয়ে গুলি করে গুরুতর আহত করা হলেও আজ পর্যন্ত সেই পিস্তল ও গুলি উদ্ধারে কার্যকর কোন ভূমিকা পালন করেনি ঈশ্বরদী থানা পুলিশ। সেই মামলাটি তুলে নিতে মামলার বাদি শামসুল হককে নানাভাবে হুমকি-ধামকি অব্যাহত রেখেছে আসামীরা। সেই ঘটনার জের ধরেই লিচু চাষী শামসুল হকের সাথে আবারও বিরোধ শুরু করে ওই আসামীরা। তারা অযাচিত ভাবে শামসুল হকের লিচু বাগান দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। গত ২৫ মে সেই ঘটনার বিবরণ দিয়ে শামসুল হক ঈশ্বরদী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। আসামীরাও একটি মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়ে শামসুল হকের বিরুদ্ধে থানায় একটি পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন। মুলত: সেই অভিযোগে প্রেক্ষিতে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ শামসুল হককে লিচু পাড়তে নিষেধ করে। যার ফলে লিচুর ভরা মৌসুম হওয়া সত্বেও লিচু পেকে টসটসে হলেও তা ভাংতে না পাড়ায় লিচু ঝরে নষ্ট হচ্ছে। এতে লিচু চাষী শামসুল হকের প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলেও দাবী করেন তিনি। ক্ষতিগ্রস্থ লিচু চাষী শামসুল হক অভিযোগ করেন, আমার গাছের লিচু আমি পারবো এটাই নিয়ম, কিন্তু মিথ্যা অভিযোগে পুলিশ আমার বাগানের পাকা লিচু পাড়া বন্ধ করে দিয়েছে এটা অন্যায়। আমি তদন্তপূর্বক সকলের সহযোগীতা কামনা করছি।
এবিষয়ে ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, “লিচু পড়ে নষ্ট হলে আমার কিছু যায় আসে না”। ওই বাগানের লিচু পাড়তে যে যাবে তাকেই গ্রেফতার করা হবে।