বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন

News Headline :
মানববন্ধনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন শ্যামনগরে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে সড়কে ভ্যান চালকের মৃত্যু রাজশাহীর মোহনপুরে মদ পানে ৩ জনের মৃত্যু, গ্রেফতার ২ রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র সাতটি থানার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা যানজট নিরসন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে আরএমপি’র মতবিনিময় সভা শ্যামনগরে এবার কৃষকরা আমন ধানের আশানুরুপ ফলন পেয়েছে পাবনায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত ১জন আহত শাজাহানপুরে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত মান্দায় বিল উন্মুক্তের দাবিতে জেলেদের সংবাদ সম্মেলন সভাপতির স্বৈরাচারী আচরন স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিতে পাবনা শহর সমাজ সেবা কার্যালয়ের কার্যক্রম স্থবির

প্রতিবন্ধি নাতীসহ রাস্তার ধারে দেড় যুগ, কেউ খোঁজ রাখেনা ছকিনা বেওয়ার

Reading Time: 2 minutes

হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর :

৯০ বছর বয়স ছুঁই ছুঁই করছে বিধবা ছকিনা বেওয়ার। স্বামীকে হারিয়েছেন প্রায় ৪০ বছর আগে। ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তান সবাই মারা গেছে। পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই তাঁর। তাই, কেউ খোঁজ রাখেনা বিধবা ছকিনা বেওয়ার। জীবনের শেষ সময়ে এসে খুব ভাল নেই তিনি। শরিরে বল নেই, টিকমত চলতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্যতা ভর করেছে তার শরীরে। চিকিৎসা খরচতো দুরের কথা, নেই থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্তোর। খেয়ে না খেয়ে দিনপার করছেন তিনি। মানুষের বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে জীবন চলে তাঁর।
নেই মাথা গোজার ঠাই, রাস্তার ধারে খুপড়ি ঘর তুলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন ধরে এই ঘরেই বসবাস করছেন তিনি। ভাঙ্গা পুরাতুন টিন দিয়ে তৈরী তার ঘরটি। হাজারো ফুটো দিয়ে বর্ষায় পানি ঝরে, শীতে প্রবাহিত হয় কনকনে হিমেল হাওয়া। এভাবেই কষ্টে কাটছে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী বালারহাট ইউনিয়নের কয়েরমারী গ্রামের বিধবা ছকিনা বেওয়া জীবন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মিঠাপুকুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পুর্ব-উত্তরে অবস্থিত বালারহাট ইউনিয়নের। এই বালারহাট ইউনিয়ন পরিষদ হতে এক কিলোমিটার দক্ষিণে খালেক মোড়। সেখান হতে পূর্বদিকের গ্রামটি কয়েরমারী। গ্রামের প্রবেশ পথেই রাস্তার ধারে ছকিনা বেওয়ার পুরোনো টিনের ঘর। সেখানে প্রতিবন্ধি নাতী চেংটু মিয়াসহ বসবাস তাঁর। পাশাপাশি লাগোয়া দু’টি ঘর। একটিতে ছকিনা বেওয়া অন্যটিতে চেংটু’র বাস। সেখানে নেই থাকার পরিবেশ। টিনগুলো অনেক পুরাতন, শতাধিক ফুটো। ঘরের ভেতর রয়েছে একটি চৌকি। তার উপর কাঁথা বিছিয়ে রাত্রীযাপন করেন তারা। নেই খাওয়ার ব্যবস্থা। অন্যের বাড়িতে ভিক্ষা করে সেটুকু পায়, সেটুকু দিয়ে চলে দাদি-নাতির দিন। বেশিরভাগ সময় না খেয়ে দিনপার করেন তারা।
কয়েরমারী গ্রামের ছয়ফুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের কেউ নেই। থাকার জায়গা ছিল না। প্রায় দেড় যুগ আগে আমি রাস্তার ধারে ঘর তুলে দিয়েছি। সেখানে থাকেন তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অনেক বলেছি, তাদের একটি ঘর দেওয়ার জন্য। একের পর এক চেয়ারম্যান বদল হয়েছে কিন্তু, ঘর পায়নি তারা।’
আরেক গ্রামবাসী দুলা মিয়া বলেন, ‘দুইজন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে কষ্ট করে রাস্তায় বসবাস করছেন। কেউ দেখার নেই। আমরা একাধিকবার চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে গেছি, কাজ হয়নি। তাকে একটি ঘর দিলে শেষ বয়সে একটু শান্তিতে মরতে পারবে।’
গ্রামের তরুন সংগঠক স্বাধীন আহমেদ বলেন, ‘তারা মানুষের বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে খায়। আমরা গ্রামের ছেলেরা মিলে তাদেরকে মাঝে মাঝে সাহায্য করি। তারপরও অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয়। তিনি আরও বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী গৃহহীন পরিবারকে ঘর প্রদান করছেন। আমি এই অসহায় দু’জন মানুষের পক্ষে সরকারের কাছে দাবি- তাদেরকে যেন ঘর দেওয়া হয়।’
বিধবা ছকিনা বেওয়া বলেন, ‘বাবা মুই গরীর মানুষ। মানুষের বাড়িত চায়া-নিয়া খাও। যখন কেও দেয়না, তখন না খায়া থাকো। মোর বাড়ি নাই। রাস্তাত মানুষ ঘর তুলি দিছে, ওটি থাকো। মুই আর কতদিন বাঁচিম, মরব্যার আগে নয়া ঘরোত থাকপ্যার চাও।’
ছকিনা বেওয়ার নাতি প্রতিবন্ধি চেংটু মিয়া বলেন,‘ মুই মানুষের বাড়িত মাঝে মধ্যে কাম করো। তারা কিছু খাবার দেয়, সেগল্যায় খাও। বেশিভাগ সময় না খায়া থাকো।’
বালারহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত রতন বলেন,‘আমি খোঁজ-খবর নিয়ে বিষয়টি দেখব। যদি প্রাপ্য হয়ে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com