বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর ব্যুরো:
ফটো সাংবাদিক মমিনুল ইসলাম রিপন। ৪৫ বছর বয়সি রিপনের ফটো সাংবাদিকতার বয়স ২৫ বছর। এই দীর্র্ঘ সময়ে প্রতিটি ঈদে স্বশরীরে মাঠে থেকে নানা এ্যঙ্গেলে তুলেছেন ঈদের জামাতসহ ঈদ-উৎসবের হাজারো ছবি। কিন্তু এবার তিনি ছবি তোলা তো দুরের কথা, ঈদের নামাজেই অংশ নিতে পারেননি। ক্যামেরার ট্রিগারে রাখতে পারেন নি হাত, ক্যানভাসে রাখতে পারেননি চোখ। কারণ তার একটি চোখ ইতোমধ্যেই হারিয়েছে দৃষ্টি শক্তি। আরেকটিও হারানোর দ্বারপ্রান্তে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন জরুরী ভিত্তিতে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন ও উন্নত চিকিৎসা করাতে না পারলে যে কোন মুহুর্তে অন্য চোখটিও হারিয়ে ফেলবে দৃষ্টি শক্তি।
সাংবাদিক রিপন রংপুরমহানগরীসহ আশেপাশে জেলাগুলোর সব থেকে পরিচিত সাংবাদিক মুখ। প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ। তিস্তার পানিবন্দি প্রান্তজন থেকে মন্ত্রীর রুম, সবখানেই মুগ্ধপদচারণা ফটো সাংবাদিক রিপনের। ঈদ-উৎসবসহ বাঙ্গাঙ্গীর প্রতিটি উৎসব; ২১ ফেব্রুয়ারী, ২৬ মার্চ থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর বাঙ্গালীর প্রতিটি ঐতিহাসিক দিন; মিছিল সমাবেশ থেকে শুরু করে দুর্ঘটনার ছবি তুলেছেন তিনি। ছবি তুলেছেন মন্ত্রী, এমপি, সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে হাজার হাজার সিকোয়েন্সের। কাকডাকা ভোরে শুরু, মধ্যরাতে শেষ। যেখানেই ঘটনা, সেখানেই রিপনের হাস্যোজ্বল উপস্থিতি। সম-বয়সি থেকে ছোট-বড় সবার সাথেই দারুণ এক ছেলে মানুষি কানেকশন। তার তোলা স্টিল ছবি শুধু নিজের কর্মক্ষেত্র দৈনিক পরিবেশ, উত্তরবাংলা কিংবা এফএনএস নয়, রংপুরের অনেক রিপোর্টারের অনলাইন ও পত্রিকার খোড়াক মেলে। তার তোলা ছবি স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছে। তিনি শুধু একজন ফটো সাংবাদিকই নন। একজন দক্ষ ও পরিচ্ছন্ন সংগঠক। বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন রংপুরের সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচিত সদস্য তিনি। যিনি সংগঠনের সদস্যদের জন্য ঈদ, পার্বন আসলেই দ্বারে দ্বারে ঘুরে ব্যবস্থা করতেন সেলামীর। অথচ আজ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র ঈদ-উল আযহার নামাজটাই পড়তে পারলেন না তিনি। তুলতে পারলেন না ছবি। দেখা মিললো না তার হাস্যেজ্বল উপস্থিতি। সবার প্রশ্ন রিপন ভাই কোথায়। এবার সংগঠনের সদস্যদের জন্যও কিছুই করতে পারেন নি তিনি।
ফটো সাংবাদিক মমিনুল ইসলাম রিপনের স্ত্রী কোহিনুর ইসলাম জানান, বাম চোখে রেটিনা সমস্যা দেখা দিলে তাকে গত ৯ মে রংপুর মহানগরীর গ্লোবাল আই এন্ড হেলথ কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসক ডা. আব্দুল হান্নান তার বাম চোখ অপারেশন করান ওইদিন। ১ দিনের মাথায় ১০ মে ওই চোখে ইনফেকশন শুরু হয়। চিকিৎসক হান্নানের পরামর্শে তাকে নেয়া হয় ঢাকার ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইন্সটিটিউট এন্ড হসপিটালে। ১৪ মে সেখানকার চিকিৎসক ফারহানা ইয়াসমিন তার ইনফেকশন হওয়া চোখে অপারেশন করে পুঁজ বের করেন। কিন্তু ততক্ষণে নিভে যায় চোখের দৃষ্টিশক্তি। ওই ইনফেকশন ডান চোখকেও মারাত্বকভাবে ভাবে প্রভাব ফেলে। এখন ডান চোখটিও নিভে যাওয়ার পথে।
রিপনের চিকিৎসক ঢাকার ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইন্সটিটিউট এন্ড হসপিটালের সার্জন ডা. ফারহানা ইয়াসমিন জানান, ইনফেকশনের কারণে পূজ হওয়ায় তার বাম চোখটি সম্পুর্নভাবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। যাতে কর্ণিয়া সংযোজন ছাড়া আর দেখার কোন উপায় নেই। অন্যদিকে বাম চোখটিরও ৭৫ ভাগ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে বউন্নত চিকিৎসা করানো না গেলে বাম চোখটিও দৃষ্টি শক্তি হারাবে। তিনি জরুরী ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসা এবং কর্ণিয়া প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন। দুই কন্যা সন্তানের জনক রিপনের বাড়ি রংপুর মহানগরীর কামারপাড়ায়। ঈদ-উল-আজহার দিন বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) বেলা সাড়ে ১১ টায় বাসায় গিয়ে দেখা গেলো ফটো সাংবাদিক মমিনুল ইসলাম রিপন শুয়ে আছেন খাটে, চোখে কালো চশমা। চোখ দিয়ে দেখতে না পারায় কথা বলেই পরিচয় হতে হলো। পরিচয়ের মধ্যে তার চোখ দিয়ে গড়াতে থাকলো পানি, সে পানি চুয়ে চুয়ে ভিজতে থাকলো বালিশ-বিছানা।
গড়িয়ে পরা চোখের পানি মুছতে মুছতে সাংবাদিক রিপন জানালেন, আমি চোখ দিয়ে দেখতে চাই। আমি নিজে আবারও ক্যামেরার ক্যানভাসে চোখ রেখে ফোকাস অটো ফোকাস করে, জুম ইন-আউট করে, আলো কমা-বাড়া করে ছবি তুলতে চাই। ট্রিগ্রারে আঙ্গুল রাখতে চাই। আমি হাসতে চাই, আগের মতো মাঠে যেতে চাই, ঘটনাস্থলে যেতে চাই। সবার সাথে ছেলেমি করতে চাই, ইয়ার্কি করতে চাই। একসাথে খুনসুটি কাটতে চাই। আবারও নিজের তোলা ছবি সবার আগে সবার মেইলে দিতে চাই। নিজের তোলা ছবি আমি প্রতিযোগিতায় সাবমিট করতে চাই। এসব বলতে বলতে তার কণ্ঠ ভারি হয়ে উঠতে থাকে। এক সমুদ্র হতাশা নিয়ে রিপন বলতে থাকলেন- আমি কি আবারও আগের মতো হতো পারবো, চোখ দিয়ে দেখতে পারবো, এই আশা কি পূরণ হবে না আমার। এই প্রশ্ন রেখে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠলেন ফটো সাংবাদিক রিপন। যেন সেই কান্নার জল ছিটিয়ে গেলো সকল গণমাধ্যমে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চোখের উন্নত চিকিৎসার জন্য ইংল্যান্ড এবং আমেরিকা সব থেকে ভালো। সেখানে কর্ণিয়া প্রতিস্থাপনসহ চিকিৎসা করাতে গেলে ২০ লাখেরও বেশি টাকা প্রয়োজন। যা কোনভাবেই জোগান দেয়া সম্ভব নয় সাংবাদিক রিপনের।
এই অবস্থায় তার পরিবার, রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুব রহমান এবং রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের আহবায়ক দ্যা ইনডিপেনডেন্টের জেষ্ঠ্য সাংবাদিক আবদুস সাহেদ মন্টু এবং সদস্য সচিব একুশে টেলিভিশন, সংবাদ ও বাংলা ট্রিবিউনের বিভাগীয় প্রতিনিধি লিয়াকত আলী বাদল রংপুরের সকল গণমাধ্যম কর্মীদের পক্ষ থেকে সাংবাদিক রিপনের উন্নত চিকিৎসা সহায়তায় সরকার ও বিত্ববানদের কাছে আহবান জানিয়েছেন। তাকে সহযোগিতা করা যাবে ০১৭১৬-৮২৪৭৬০ (বিকাশ ও নগদ) ছাড়াও চলতি হিসাব নম্বর-০১০০২২১৫১৮৩১৯ জনতা ব্যাংক, আলমনগর শাখা, রংপুর একাউন্টে।