রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৩ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
শেখ ইমন,ঝিনাইদহ:
ঝিনাইদহের শৈলকুপার কবিরপুরে খোন্দকার প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারের পর বৃষ্টি খাতুন নামে এক প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. আলমগীর হোসেন কে প্রধান করে ৩সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটির অন্য ২ সদস্য হলেন ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতালের ডাক্তার মিজানুর রহমান ও সদর হাসপাতালের ডাক্তার মেহেদী হসান।
শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আল মামুন জানান, ৫কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আজ থেকে তদন্ত শুরু করেছে। সকালে কবিরপুরের খোন্দকার প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করছে তদন্ত কমিটি।
প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহের শৈলকুপায় খোন্দকার প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজারের পর বৃষ্টি খাতুন নামের এক প্রসূতির মৃত্যু ঘটে। শনিবার দুপুরের দিকে কবিরপুরের খোন্দকার প্রাইভেট হাসপাতালে প্রসূতির মৃত্যুর এই ঘটনার পর পালিয়ে যায় ক্লিনিকের মালিক ফজলুর রহমান ও ম্যানেজার সাইদুল ইসলাম। কয়েকঘন্টা ধরে ক্লিনিকে শুধু রোগী ছাড়া ছিলেন না কেউ। এরপর সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয় ।
ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারের ত্রæটিপূর্ণ চিকিৎসা ও অবহেলা জনিত কারণে এমন করুণ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বলে নিহত প্রসূতির স্বজন ও এলাকাবাসীর অভিযোগ।
নিহত প্রসূতি বৃষ্টি খাতুনের স্বামী মাসুম বিশ্বাস ও স্বজনরা অভিযোগ করে আসছে, ডাক্তার ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর চিকিৎসাজনিত ত্রæটির কারণেই তার স্ত্রীর মৃত্যু ঘটেছে। অবশ্য এই সিজারিয়ান অপারেশনের ডাক্তার কনক হুসাইন দাবি করেন হঠাৎ খিঁচুনি বা একলামসিয়া জনিত কারণে প্রসূতির মৃত্যু ঘটে। তিনি শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার। এদিকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে টাকায় মিমাংসা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে । এলাকার একটি চক্র, পুলিশ, কথিত সাংবাদিক সহ স্থানীয়দের হাতে মোটা অংকের টাকা ঢালা হয়েছে।
ক্লিনিকের নাম ঝুলিয়েই ব্যবসা:
এদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শৈলকুপার কোন ক্লিনিকেই নেই ২৪ঘন্টার সার্বক্ষনিক ডাক্তার। এমন কি নিয়োগপ্রাপ্তÍ কোন ডিপ্লোমা নার্সও নেই। নেই লাইসেন্স নবায়ন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ওটির যন্ত্রপাতি সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও অপর্যাপ্ত। এছাড়া প্রত্যেকটি ক্লিনিকে বেড সংখ্যা অতিরিক্ত ।
শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কে পূঁজি করে উপজেলা শহরে কমপক্ষে ৭টি ক্লিনিক সেবার নামে অবৈধ ও রমরমা ব্যবসা চালিয়ে আসছে। ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজিতে চিকিৎসার নামে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। রোগীরা প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। সরকারি স্বাস্থ্যনীতির তোয়াক্কা না করে এসব প্রতিষ্ঠান চিকিৎসার নামে রোগীদের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে ।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নামমাত্র প্যাথলজি ল্যাব, মানসম্পন্ন ওটি রুম না থাকা, পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকা, লোকবল না থাকা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকা, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধের ব্যবহারসহ রোগীদের সু-চিকিৎসার নামে এক ধরনের প্রতারণা করা হচ্ছে।
শৈলকুপায় প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসাসেবা পরিণত হয়েছে মুনাফা লোটা ব্যবসায়। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর বেশির ভাগই ধার ধারে না সেবার মান বা নীতিনৈতিকতার। অবৈধ কৌশলে, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রোগীদের পকেট কাটায় এই খাত এতই লাভজনক হয়ে উঠেছে যে অন্য খাতের ব্যবসায়ীরাও পুরনো ব্যবসা বাদ দিয়ে নেমে গেছেন হাসপাতাল ও ক্লিনিক প্রতিষ্ঠায়।
এদিকে শৈলকুপায় প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকানা থেকে শুরু করে পরিচালনার ক্ষেত্রেও কোনো না কোনো পর্যায়ে চিকিৎসকদের সংশ্লিষ্টতাই বেশি। খুব কমসংখ্যক হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে, যার মালিকানা, পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে চিকিৎসক নেই।