শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৯ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর অকৃত্রিম সুহৃদ, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কলকাতায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৭ আগস্ট) রাতে কলকাতার বেঙ্গল ক্লাবে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সংঘের আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বাংলাদেশ-ভারত দুটি দেশ একে অন্যের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এখানে মাঝখানে কিছু খেলা হয়েছিল। যেটি ছিল বাংলাদেশের জন্য আত্মাঘাতি খেলা। ৭৫ পরবর্তী শাসক যারা ছিলেন, সেনা ছাউনি থেকে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান বলি, এরশাদ বলি, খালেদা জিয়ার চারদলীয় জোট বলি-এই সময় মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে, ব্যবসা করে, তারা এই সময়ে ভারতকে অস্থির করে রাখবার জন্য পাকিস্তানের প্রেসক্রিপশনে, তাদের অনুরোধে-পরামর্শে বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহার করতে দিয়েছিল পার্বত এলাকায়। যাতে মিজোরাম, মনিপুর, ত্রিপুরা,আসাম, মেঘালয়-সেভেন সিস্টার্স ডিস্ট্রাব হয়। আমাদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা বাংলাদেশকে আবার ওই পাকিস্তানের পথে নিয়ে যাচ্ছিল। ভারতের সাথে একটা সাংঘর্ষিক অবস্থা রাখতে চেয়েছিল। এতে লাভ টা কী? আমরা তো পরিস্কার বুঝতে পেরেছি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যত মধুর সম্পর্ক, ততই দুই দেশের উন্নতি।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে ছুটে বেরিয়েছেন।কখনো নৌকায়, কখনো রেলে, কখনো গাড়িতে, কোথাও কোথাও পদযাত্রা-এভাবে ছুটে বেরিয়ে তিনি জনগণকে এক জায়গায় করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা আসেন। ক্ষমতার আসার পূর্বে দেশে ফিরে আসার পর ১৫/১৬টি বছর তাঁর সুখের বছর ছিল না। নানাভাবে তাঁকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি তো দমে যাওয়ার মানুষ নন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে। বঙ্গবন্ধু সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করেননি। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। সেই জন্য বিশ্বব্যাংক না করে দেওয়ার পরেও তিনি বললেন, পদ্মা সেতু হবে, আমরা করবো। তিনি সাহস করে ধরলেন, পদ্মা সেতু হয়ে গেল। বঙ্গবন্ধু তো এটিই চেয়েছিলেন, দেশ উপরের দিকে যাবে, মানুষ ভালো থাকবে, চিকিৎসা পাবে, শিক্ষা পাবে, সড়ক যোগাযোগ, রেল যোগাযোগ-সব কিছু ভালো মতো চলবে। তাইতো হচ্ছে এখন। উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছি আমরা। খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়েছে। ডলারের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। দেশে জ্বালানীর দাম বাড়ানো হয়েছে। জ্বালানী ব্যয় কমাতে বিদ্যুতের লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এটাকে নিয়ে যারা আন্দোলন করতে যাচ্ছে, তারা অতীতেও বিভিন্ন ইস্যু খুঁজে বের করে আন্দোলন করতে চেয়েছে, মানুষ তাদের গ্রহণ করেননি। এবারও তারা পারবে না। রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের নাগরিকরা আকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। আমাদের দেশের এক কোটি শরনার্থীকে জায়গা দিয়েছেন। পুরো পশ্চিমবাংলা, আসাম, ত্রিপুরা বাংলাদেশকে ঘিরে যে প্রদেশগুলো আছে, এতো আকুণ্ঠভাবে সমর্থন দিয়েছিলেন যে নিজেদের বাড়ি-ঘরে পর্যন্ত থাকতে দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন আমাদের ঘরে থাকবেন, খাওয়া-দাওয়াও আমাদের সাথে করবেন। এই রকম হাজার হাজার বাড়িতে বাংলাদেশের মানুষ থেকেছে। নয় মাস থেকেছে, খেয়েছে আর মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেনিং নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু যে ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন, সেই ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতীয় চার নেতা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। ভারতীয়রা যে যেখানে ছিলেন, সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। অবশ্যই তাদের তখন অগ্রণী ছিলেন তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। রাসিক মেয়র আরো বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে নৌ যোগাযোগ নানা দিক দিয়ে শুরু হয়েছে। অনেকগুলো রুটে ট্রেন যোগাযোগ চালু হয়েছে। ঢাকার সাথে তো বিমান যোগাযোগ আছে। রাজশাহী থেকে কলকাতা পর্যন্ত বিমান যোগাযোগ চালুর কাজও চলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী যে সাতটি নৌ রুট স্বাক্ষর করেছিলেন, তার একটি রাজশাহীর সাথে। ভারতের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে রাজশাহী হয়ে পাকশি হয়ে আরিচা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত নৌ রুটটি আমরা চালু করতে চাচ্ছি। এটি নিয়ে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে মিটিং হয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী কিছুদিন আগে রাজশাহী গিয়েছিলেন। ঢাকায় নৌ পরিবহন মন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন রুটটি চালু করার জন্য। এই রুটটি চালু হলে পাথর, ফ্লাই এশ সহ বিভিন্ন মালামাল ভারত থেকে স্বল্প খরচে আমদানি করা যাবে। ফিরতি পথে বাংলাদেশ থেকেও মালামালি নিয়ে যাওয়া যাবে। এই রুটটি চালুর কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। আমি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও বলেছি। কলকাতায় আপনারা যারা আছেন, তারাও এটি নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সংঘের কার্যকরী সভাপতি শিশির কুমার বাজোরিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস ও আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। সভায় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেনী সহ অন্যান্য অতিথি ও অংশগ্রহণকারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কে.পি. বসু মেমোরিয়াল হলে বয়স্ক, নিরন্তর শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগের আয়োজিত ‘রোল অফ কমিউনিকেশন ইন মিউনিসিপ্যাল এডমিনিস্ট্রেশন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উক্ত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. সান্ত¡ন চট্টোপাধ্যায়। সেমিনারে কি-নোট উপস্থাপন করেন নির্মাণ প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. পার্থ প্রতিম বিশ্বাস। সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিম ও ভিডিওগ্রাফি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. দেবজ্যোতি চন্দ ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেনী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উক্ত প্রাপ্তবয়স্ক এবং অব্যাহত বিভাগের অধ্যাপক ড. পার্থ সরাথি চক্রবর্তী। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উক্ত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. অভিষেক দাস।