শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৫ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
নাঈম ইসলাম বাঙালি, তাড়াইল ‘কিশোরগঞ্জ:
বন্যায় তলিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে জলাবদ্ধতা ও কাদা পানি লেগে থাকায় কিশোরগঞ্জ তাড়াইল উপজেলার রাউতি গ্রামে টেকেরবাড়ীর সংযোগ সড়কের নিত্য অবস্থার বেহাল দশা। কোথায় মানুষ গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরবে! সেখানে রীতিমতো রিক্সা, সাইকেল নিয়েও বাড়ি ফেরা দুষ্কর। তবুও কোনো মতো ঠেলে ধাক্কায় রিক্সা, ভ্যানযোগে নিত্যপ্রয়োজনীয় ধান,সার ইত্যাদি আনা নেয়া যেতো।কিন্তু এখন আর সেই সুযোগটুকুও নেই। হাজী সাহেবের বাড়ীর পশ্চিমে গত বন্যায় রাস্তার মাঝ বরাবর ভেঙে যায়। এরপর থেমে যায় এলাকার মানুষদের স্বাভাবিক চলাফেরা। চলাচলের আর কোনো রাস্তাই বাকি থাকলো না। একান্ত প্রয়োজনে কেউ যদি যাতায়াত করতো!তাহলে তাদেরকে আরেকজনের বসত বাড়ির আঙিনা মাড়িয়ে যেতে হতো। কিন্তু, বাড়ীর উঠান দিয়ে পথচারীদের চলাচল। সেটা স্বাভাবিক কত মেনে নেয়া যায়? একসময় অতিষ্ঠ হয়ে বাড়িওয়ালা তার বাড়ীর আঙিনায় কাঁটা দেয়া শুরু করে। মানুষজন চরম বিপাকে পড়ে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে এলাকাবাসী বার বার ধর্না দেয়। চেয়ারম্যান সাহেব কয়েকটা ডেট করে অবশেষে একদিন পরিদর্শনে আসেন। মেম্বার সাহেব আসেন। উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব আসেন।৷ টিউনঃ সাহেব আসেন। আশার বানী শুনিয়ে যান। কিন্তু, কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারেন নি। অবশেষে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী বাঁশ দিয়ে ছোট করে একটা সাঁকো তৈরী করেন। যা দিয়ে একজন পার হতে গেলে অন্যজনকে দাড়িয়ে থাকতে হয়। তবুও নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেই কোনো হৃদয়মান ব্যক্তির । হবে হবে গান শুনিয়ে আজ প্রায় ৩-৪ মাস চলছে। আর কত অপেক্ষার প্রহর গুণবে জনগণ। চারিদিকে যখন উন্নয়নের এতো জয়জয়কার ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে,তখন উন্নতির মহাসড়কে এসে এমন একটি সংবাদ যেন বানোয়াট কোনো গল্প অথবা উদাস ব্যক্তির অলিক কোনো কল্পনা মনে হবে আপনাদের কাছে। না, এটা কোনো রুপকথার গল্প অথবা,উদাস ব্যক্তির কল্পনায় আঁকা ছকের কোনো সারমর্ম নয়। এটা বর্তমান সময়ের উন্নতির মহাসড়কে অনুন্নতির একটি বাস্তব স্থির চিত্র। টেকের বাড়ী ০২ নং রাউতি ইউনিয়নের অন্তর্গত একটি এলাকা ( তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ)। শত বছরের পুরোনো এই এলাকায় প্রায় দুইশত ভোটার আছে।এখানে বাস করে প্রায় পঞ্চাশ টি পরিবার। এই অবহেলিত জনপদে মানবেতর জীবন যাপন করছে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, সাধারণ কৃষকরা, স্কুল কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ঝরে পড়ছে শত শত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা যেন নিভু নিভু জ্বলতে থাকা আলোর প্রদিপটা প্রতিনিয়ত নিভেই চলেছে। শত,শত বছর ধরে একই অবস্থা। লাগেনি কোনো উন্নতির ছোঁয়া। এ যেন,অভিভাবক শুন্য এক বিচ্ছিন্ন জনপদ! টেকের বাড়ি থেকে রাউতি প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ।আধুনিকতার এই যুগে এসে দেড় কিলোমিটার পথ বাধ্যতামূলকভাবে পায়ে হেঁটে ক্লাস ধরা কতটুকু কষ্টের! তা সচেতন নাগরিক মাত্রই বুঝতে পারেন।তার মধ্যে বৃষ্টির দিনে কাদা পানির ছিঁটা! যেন, অনেক কষ্টে প্রতিযোগিতায় জেতে। কিন্তু টাইম মেন্টিং না করার কারনে নিশ্চিত পুরুষ্কার মিস করা। একই এলাকার বাসিন্দা মুহাম্মদ শাহেদুল হক বলেন, এই রাস্তার কারনে কত যে বিশ্বাস ভঙ্গ হচ্ছে, কত স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে, কত শত জীবনের বাঁক ঘুরে যাচ্ছে তার কোনো হিসাব নেই। টেকের বাড়ি বাসীর এই দূরাবস্থা দেখার মতো কেউ নেই। টেকের বাড়ি বাসীর আছে শুধু চোখের জল। প্রতিনিয়ত তারা নীরবে,নিভৃতে কেঁদে চলছে। কবে শেষ হবে টেকের বাড়ি বাসীর এই ভোগান্তি? কবে লাঘব হবে তাদের এই দূরাবস্থা, দূর্দশা? কী জবাব দিবেন সম্মানিত মেম্বার সাহেব। কী জবাব দিবেন? উন্নতরুচিশীল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাহেব। কী জবাব দিবেন?দাপুটে উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব। কী জবাব দিবেন? সংসদ কাপানো, মাননীয় এমপি মহোদয়? এই কষ্টের দায় আপনারা কি এড়াতে পারবেন? আপনাদের কাছে আছে কি কোনো জবাব? আপনাদের জবাবের অপেক্ষা আমরা করছি না। কারন, আমরা জানি আমাদের এই কথার দ্বারা আপনাদের ঘুম ভাঙবে না। তারপরও বলছি কর্ণকুহর ভেদ করে যদি একটা কথা পৌঁছে যায়! সেটার অপেক্ষায়।