বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা,পাবনা:
পাবনার বেড়া উপজেলার ৫৫নং টাংবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজিজুল হকের বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের ভিত্তিতে বেড়া উপজেলা শিক্ষা অফিস অভিযুক্ত শিক্ষককে রক্ষা করতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে শ্লীলতাহানির ঘটনা গোপন রেখে সুকৌশলে চরাঞ্চলের নতিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশন (স্বল্প মেয়াদে অন্য প্রতিষ্ঠানে প্রেষণ/বদলি/স্থানান্তর) প্রদান করেছেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন সরকার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রধান শিক্ষক ইয়াকুত আরা খাতুন লিখিত অভিযোগ তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ ও ভবানীপুর ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার কৃষ্ণ চন্দ্র সরেজমিন তদন্ত করেন। কিন্তু অদ্যাবদি উপজেলা শিক্ষা অফিসার তদন্ত প্রতিবেদন জেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট প্রেরণ করেননি।এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকা ইয়াকুত আরা খাতুন বলেন, তিনি ঘটনা নিজের চোখে দেখেনি- সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে শুনেছেন যে আজিজুল স্যার ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে মারার সময় স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়েছে। আজিজুল হকের যদি অতীতে এমন রিপোর্ট না থাকতো তাহলে আমি বিষয়টা সাধারণ ভাবে দেখতাম। কিন্তু তিনি পুর্বে যে সকল বিদ্যালয়ে চাকুরী করেছেন সবখানেই তিনি এমন কাজ করেছেন। এজন্য তাকে একাধিকবার বদলী করা হয়েছে। আমি চাই অপরাধের কঠিন শাস্তি হোক।এই বিষয়ে নাটিয়াবাড়ি ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ মুঠোফোনে বলেন, মানবিক কারণে সহকারী শিক্ষক আজিজুল হককে নতিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশন প্রদান করা হয়েছে এবং তাকে সতর্ক করা হয়েছে। আগামীতে সে এরূপ কাজ করলে তাকে বহিস্কার করা হবে। কার নির্দেশে ডেপুটেশন করা হয়েছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসের নির্দেশনায় ডেপুটেশন করা হয়েছে।অথচ তিনি এখন পর্যন্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত আকারে প্রতিবেদনই জমা দেননি। আর এ বিষয়ে মুঠোফোনে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি আরও বলেন, ডেপুটেশন কোনো শাস্তি নয়, এটি জনস্বার্থে কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম থাকলে- শিক্ষক বেশি থাকলে জনস্বার্থে ডেপুটেশন করা হয়ে থাকে।স্থানীয় সচেতনমহল ও অভিভাবকেরা ও এই অঞ্চলের সচেতন শিক্ষকদের অভিযোগ, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে।উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন সরকার মুঠোফোনে জানান, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ ও ভবানীপুর ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার কৃষ্ণ চন্দ্র সরেজমিন তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।তারা লিখিত তদন্ত প্রতিবেদন দিলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করা হবে।জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টা সর্ম্পকে আমি অবহিত নয়। যদি কেউ এরকম অপকর্ম করে থাকে তদন্ত করে আমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।অভিযুক্ত শিক্ষক আজিজুল হকের সাথে এই বিষয়ে জানতে তাকে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।স্থানীয় সচেতনমহল ও অভিভাবকেরা বলেন, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও স্বেচ্চাচারিতায় শিক্ষার মানের চরম অবনতি হয়েছে। বিদ্যালয়ে ৩/৪ বছর কোন ম্যানেজিং কমিটি নাই। প্রধান শিক্ষক অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়মিত কমিটি গঠন না করে অবৈধভাবে এডহক কমিটি গঠন করে বিভিন্ন খাতে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাট করে খাচ্ছে। এডহক কমিটির মেয়াদ ৬ মাসের বেশি থাকার কোন বিধান নাই। তার এই সকল অপকর্মের সহযোগি হিসাবে তিনি আজিজুল হককে ক্লাস রুটিনে ৫ম শ্রেণির পরপর ২টা বিষয় দেন এবং একই ক্লাসে তাকে ১ ঘন্টা প্রাইভেট পড়ানোর অনুমতি দেন। স্কুল ছুটির পরেও সন্ধ্যা পর্যন্ত তার প্রাইভেট বাণিজ্য চলতো। দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক আগের বিদ্যালয়গুলিতেও এমন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নেওয়ায় এলাকাবাসীর চাপের মুখে বিদ্যালয় থেকে বদলী হয়েছেন।অভিভাবকেরা আরও বলেন, পিতা-মাতার পরেই সন্তানের জন্য নিরাপদ ও আদর্শের জায়গা হলো বিদ্যালয় ও শিক্ষক। আদর্শ বিদ্যালয়ে একজন চরিত্রহীন, লম্পটের জায়গা হতে পারে না। আমাদের সন্তানেরা এই বর্বর লম্পট শিক্ষকের কাছে নিরাপদ নয়। এমন নৈতিকতাহীন দুঃশ্চরিত্রের শিক্ষককে আইনেও আওতায় এনে চাকুরীচ্যুতসহ দৃষ্ট্রান্তমুলক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি। যাতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেউ ঘটাতে না পারে।