শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৮ অপরাহ্ন

News Headline :
সিরাজগঞ্জে ইজিবাইক চালককে হত্যা করে গাড়ি ছিনতাই আটক দুই কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার পাবনা জেলার ১৯৬তম জন্মদিন উপলক্ষে কাগজে গ্রাফিতি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বাজারের আগুন: ত্রিশালের কাঁচাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আকাশছোঁয়া বিপাকে সাধারণ মানুষ কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের সতর্ক বার্তা পাবনা র‌্যাবের অভিযানে ৪টি হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী গ্রেফতার নওগাঁ সোসাইটির নীতিমালা ভঙ্গ করে প্রতিপক্ষের ঘর দখলের অভিযোগ অপরাধী ও দুষ্টু লোকদের স্থান বিএনপিতে হবে না বলে তারেক রহমান স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন: কেন্দ্রীয় যুবদল সম্পাদক নয়ন পাবনায় সংবাদ প্রকাশের জেরে ওসির ইন্ধনে সাংবাদিকের খোজে সন্ত্রাসীরা মতিহারে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী সোহেল গ্রেফতার

ভিয়েতনামী নারকেল গাছে ৬ বছরেও ফল আসেনি

Reading Time: 3 minutes

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রাজশাহী হর্টিকালচার সেন্টার থেকে প্রতিটি ৫০০ টাকা দরে ভিয়েতনামী জাতের ডাবগাছের চারা কিনে বাগান করেছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের চাষি বজলুল হক ও তার ছেলে আতাউর রহমান। তিন বিঘা জমিতে ১৮৯টি নারকেল গাছের চারা রোপণ করে বাগান করেছিলেন তারা।
রোপণের কয়েক দিনের মাথায় ৩০টি নারকেল গাছ মারা যায়। এরপরে তারা একই দামে ৩০টি ডাবগাছ কিনে আবার রোপণ করেন। সেই সময় হর্টিকালচার সেন্টার থেকে বজলুল হককে জানায়, গাছে তিন বছরে ডাব আসবে। এই কথায় তিনি নারকেল বাগান করেছিলেন। কিন্তু নারকেলগাছ রোপণের ছয় বছরেও ঠিকমতো ডাব আসেনি তার গাছে। এতে তিনি হতাশ। কারণ জমি লিজ নিয়ে বাগান করে ছয় বছরে তার খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। কিন্তু তার বাগানে বর্তমানে ৩০ শতাংশের কম গাছে ডাব এসেছে। আতাউর রহমান বলেন, এবছর সর্বোচ্চ ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে একটি ডাব। এমন অবস্থায় ডাবের দাম শুনে শুধু আফসোস করেছি আমি। আমার বাগানের সব গাছগুলোতে ১০টি করেও ডাব আসলেও অনেক টাকার ডাব বিক্রি করতে পারতাম। ডাব বিক্রি করে বাগানে খরচ হওয়া অনন্ত কিছু টাকা হলেও উঠে আসতো। বজলুল হক বলেন, একটানা ছয় বছর পরিশ্রম দিয়ে গাছগুলো বড় করেছি। অনেকটাই শিশুর মতো যতœ করে বড় করে তুলেছি। হর্টিকালচার সেন্টার থেকে বলেছিল, গাছের বয়স তিন বছর হলে ডাব ধরবে। ডাব ধরেছে কিন্তু কয়েকটা গাছে। সব গাছে ডাব আসেনি। কবে আসবে কে জানে। গাছগুলো বড় হয়ে গেছে। এখন কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না। না পারছি কাটতে, না পারছি কিছু করতে। কিন্তু প্রতিবছরই সার কীটনাশক বাবদ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে ডাব বাগানে। কিন্তু গাছে ডাব আসছে না। ভিয়েতননামী ডাবেরগাছ নিয়ে অভিযোগ করে বজলুল হকের ছেলে আতাউর রহমান বলেন, ভিয়েতনামী বলে আমাদের এক জাতের ডাবের গাছ দেওয়া হয়নি। এখানেও প্রতারণা করা হয়েছে। কয়েক ধরনের ডাবের গাছ দেওয়া হয়েছে। একসময়ে ডাবগাছগুলো লাগালেও কোনটির উচ্চতায় চার থেকে পাঁচ ফুট আবার কোনটি ১০ থেকে ১২ ফুট। আমার ধারণা যে নারকেলগাছগুলো ছোট সেগুলো ভিয়েতনামী জাতের ডাবগাছ। কিন্তু বড় গাছগুলো অন্য জাতের। তবে ছোট বড় কোন গাছেই কাঙ্খিত ডাব আসেনি। ডাব না এলেও প্রতি বছরই খরচের পাল্লা ভারি হচ্ছে তাদের। সরেজমিনে ডাব বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, ভিয়েতনামী জাতের হলেও বিভিন্ন আকারের ডাবগাছ রয়েছে বজলুল হকের বাগানে। কিন্তু গাছগুলো উচ্চতায় খাটো হওয়ার কথা ছিল। গাছগুলোর মধ্যে ৫০ থেকে ৫৫টিতে ছোট ছোট ডাব দেখা গেছে। সেই গাছগুলোতে গত দুই বছর থেকে কয়েকটি করে ডাব আসছে। তবে বাগানের বেশিরভাগ গাছেই ফাঁকা। আতাউর রহমান দাবি করে বলেন, এগুলো বিদেশী জাতের ডাবের গাছ। হর্টিকালচার সেন্টারের দেওয়া পরামর্শে পরিচর্যা করা হয়েছে। তবুও কাঙ্খিত ডাব ধরেনি গাছে। এই জমিতে ভিয়েতনামী জাতের গাছ রোপণ না করে দেশি জাতের ডাবগাছ রোপণ করা হলে ছয় বছরে কম করে হলেও ৭০ শতাংশ গাছে ডাব আসতো। কিন্তু ভিয়েতনামী জাতের ডাবের চারা রোপণ করে গত বছর ২৫০টি ডাব পাওয়া গেছে। ঠিকঠাক ভাবে গাছে ডাব আসলে হাজারেরও বেশি ডাব পাওয়া যেত। কিন্তু ডাব নেই বাগানে। শুধু খরচই হচ্ছে।
আতাউর রহমান বলেন, হর্টিকালচার সেন্টার থেকে বলেছিল তিন বছরে ডাব ধরবে। তিন বছরে মাত্র কয়েকটি গাছে ডাব ধরেছে। ডাব ধরবে ধরবে করে ধরেনি। এখানে ছোট গাছগুলোতে কয়েকটা ধরলেও বড় গাছগুলোতে ডাব ধরেনি। পুরো বাগানের ১৮৯টি গাছের মধ্যে মাত্র ৪০ থেকে ৪৫টি গাছে ডাব এসেছে। গত বছর ৩০টা ও তার আগের বছর ২০ গাছে ডাব এসেছিল। গত বছর পেয়েছি ২৫০টি। এখানে হাজার হাজার ডাব হওয়ার কথা। একটা গাছে ২০০ করে ডাব আসলে ৪০ হাজার ডাব হয়। সেখানে মাত্র ২০০ থেকে ২৫০টি ডাব হচ্ছে। বড় গাছগুলোতে ডাব আসেনি।
তিনি বলেন, গাছগুলো তৈরি করতে অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। এছাড়া সার কিটনাশক বাবদ প্রতি বছরে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়। গাছগুলাতে ডাব না আসার বিষয়ে হর্টিকালচার সেন্টারে যোগাযোগ করা হলে তারা বিভিন্ন সার-বিষ দিতে বলে। সেগুলো দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। গাছগুলো কাটলে তো আরও লোকসানে পড়ে যাব। এখনও দুই বছর দেখি। গাছগুলো আরও বড় হোক। রাজশাহী হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত¡বিদ কাজী ইফফাত তামান্না বলেন, ভিয়েতনামী জাতের ডাব গাছে ডাব পেতে হলে পরিচর্যার বিকল্প নেই। গাছে প্রতিদিন পানি দিতে হবে। বছরে চার বার সার দিতে হবে। এগুলো না করতে পারলে গাছে ডাব আসতে দেরি হবে। বাগানের মালিক হয়তো পরিচর্যা করেনি বা করতে পারেনি। তাই কাঙ্খিত ডাব পাননি।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, গাছগুলো নিয়ে আসার আগে রিসার্চ করার দরকার ছিল। মাটি ও অবহাওয়া অনেক ব্যাপার থাকে। এখন দেখা যাচ্ছে কোনটি লম্বা, কোনটি খাট। আবার আড়াই থেকে তিন বছরে ডাব ধরার কথা বললেও গাছে ডাব কম আসে। এছাড়া গাছের রোগ বালাই বেশি। ভিয়েতনামী জাতের ডাবের গাছ থেকে কাঙ্খিত ডাব পাওয়া যাচ্ছে না। ডাবগাছে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। রাজশাহীতে এমনিতে পানি কম হয়। এর প্রভাব রয়েছে। এছাড়া নিয়মিত সার দিতে হয়। পরিচর্যায় ঘাটতি হলে ডাব কম আসবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com