বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১৮ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
জুয়েল ইসলাম, তারাগঞ্জ রংপুর:
দীর্ঘদিন ধরে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের ভীমপুর শাইলবাড়ি মাদ্রাসা সংলগ্ন ১২টি গ্রামের সাধারণ মানুষ চিকলী নদীর উপর নিজেদের উদ্যোগে বাড়ি বাড়ি চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করে আসছিল। কিন্তু এবছরের ভরা বর্ষায় বাঁশের সাঁকোটির মধ্যাংশ নদীর স্রোতে ভেঙে পড়ে।
এতে ওই ১২ গ্রামের সাধারণ মানুষদের আলমপুর ইউপিসহ উপজেলা সদরে আসতে বিকল্প রাস্তা হিসাবে বদরগঞ্জ উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের ধোলাইঘাট হয়ে তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে তাদের ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা সদরে আসতে একদিকে যেমন তাদের সময় অপচয় হচ্ছে অন্যদিকে অর্থেরও অপচয় হচ্ছে। এতে চরম দূর্ভোগে পড়েছে ওই ১২ গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীরাসহ কয়েক হাজার মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বাঁশের সাঁকো দিয়ে তৈরি সেতুটি ২০১৬ সালে ভয়াবহ বন্যার কারণে ভেঙ্গে পড়েছিল। ফলস্বরূপ বন্যার পানি উক্ত গ্রামে প্রবেশ করে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের বন্যায় উক্ত সাঁকোটি আবারও ভেঙে গেলে স্থানীয় জনসাধারণ তাদের নিউ উদ্যোগে ও নিজ অর্থায়নে সাঁকোটি নির্মাণ করেন। বন্যার জলাবদ্ধতা হ্রাস পেলে স্থানীয় লোকেরা স্বেচ্ছাসেবী শ্রমের ভিত্তিতে অর্থ ও বাঁশ সংগ্রহ করে সেখানে একটি নতুন সাঁকো তৈরি করেন। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ঝুকি নিয়ে এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করে আসছিল। সাঁকোটি ভেঙে পড়ায় ভীমপুর বাজার, তেঁতুলতলা, চিকলীর হাট এবং তারাগঞ্জের বাজারে হাজার হাজার কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সহজে বিক্রি করতে পারছে না। অতিরিক্ত দামে এই পণ্যগুলো বিক্রি করতে তাদের দীর্ঘ প্রায় ৫ (পাঁচ) কিলোমিটার পথ পারি দিতে হচ্ছে। এতে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে ব্যয় করতে হয় অতিরিক্ত অর্থ।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল হামিদ সরকার, আব্দুস সাত্তার, আবু আইয়ুব, আবু সাঈদসহ আরও অনেকে জানান, আমাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করার জন্য গেলে অতিরিক্ত খরচ পড়ে। ফলে জনসাধারণ আমাদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে চান না। বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করি। এখানে যদি একটি সেঁতু হয় তাহলে হামার ইলার (আমাদের) যাতায়াত খরচ কম পড়বে এবং খুব সহজে তা বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারব। ভীমপুর দর্জিপাড়ার মসজিদের একাধিক মুসল্লি বলেন, সেঁতু না থাকার কারণে আমাদের মসজিদটিও ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে এবং গ্রামটি নদীগর্ভে তলিয়ে যাবে বলে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
সাঁকোটির ছবি তুলতে গেলে এগিয়ে আসেন রফিকুল ইসলাম, হোসেন আলী, জুয়েল মিয়া, রোকেয়া বেগম, জসিম উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন। তারা বলেন, এখানে প্রতি বছর হামরা গ্রামের মানুষগুলো সবারে বাড়ি বাড়ি যেয়া চান্দা তুলি সাঁকো বানাই। কিন্তু নদীর সোতে সাঁকোর নিচের খুঁটি ভাঙ্গি চলি যাওয়াতে সাঁকো ভাঙ্গি পড়ি যায়। এটে যদি সরকার একনা ব্রীজ বানে দেইল হয় তাইলে হামার খুব উপকার হইল হয়।
সেখানে উপস্থিত আবুল হোসেন (৫৫) বলেন, বাবা, তোমার পেপার খানত এ্যানা নেকি (লিখে) দিয়া দেখো তো এটে একখান ব্রীজ বানে দিবার পান যদি তাহলে হামার গুলার খুব উপকার হইল হয়। এটে সাঁকো তো ভাঙ্গে নাই মোর খালি মনে হয় হামার গুলার কপাল ভাংছে। মোর কোন জায়গা জমি নাই। শাইলবাড়ি মাদ্রাসার জমিত বাড়ি করি আছুং। মোর একটা বেটা নদীর ওই পাড়োত দর্জ্জিপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পত ঘর পাইছে। বেটাটা ওটে কোনায় থাকে। নদীটা পার হইলে মুই একনা ছাওয়াটার কাছোত যাবার পাও। নাতী নাতনীগুলাক খুব দেইখার মন চায়। কিন্তু মুই যাইম কেমন করি। এটে তো একনা ব্রীজ হয়েই না, গ্রামের মানুষগুলা যে সাঁকোখান বানাইছে সেখানও ভাঙ্গি গেইছে। বেটার কাছোত যাবার চাইলে কমকরি ৫ কি.মি ঘুরি যাবার নাগে। সেই তকনে মুই যাবারে পাওছোন না।
আলমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন বলেন, ‘শাইলবাড়ি ঘাটে পাকা সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। বাঁশের সাকোটি ভেঙে পড়ায় দর্জিপাড়া, মহেশখোলা, খ্যানপাড়, শাইলবাড়ি, ডাঙাপাড়া, নলুয়ারডাঙ্গা, কোরানীপাড়া, ভীমপুর, প্রামানিকপাড়া, মৌলভীপাড়া, বানিয়াপাড়াসহ ১২টি গ্রামের ১০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দ না থাকায় বাঁশের সাঁকোটি সংস্কার করতে পারছি না।
উপজেলা প্রকৌশলী আহম্মেদ হায়দার জামান বলেন, বেশ কয়েকটি ঘাটে ব্রীজ নির্মাণের জন্য গত বছরই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঢাকায় পাঠিয়েছি। যার মধ্যে শাইলবাড়ির ওই ঘাটটিও আছে। এখনও বরাদ্দ মেলেনি। বরাদ্দ পেলেই ওই স্থানে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।