রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৯ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা।
বন্ধুর মোটরসাইকেল নিয়ে বেড়াতে যান আব্দুস সামাদ ওরফে সম্রাট (২৮)। মোটরসাইকেলটি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে মেরামত করতে দুই হাজার টাকা খরচ হয় তার বন্ধু আজাদ হোসেন (২২) এর। তার মধ্যে আজাদকে এক হাজার টাকা দেন সম্রাট। আর বাকি এক হাজার টাকা পাওনা নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। তারই এক পর্যায়ে পাওনা এক হাজার টাকা না দিয়ে বন্ধু আজাদকে হত্যা করেন সম্রাট।
পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া এলাকার রাজমিস্ত্রি আজাদ হোসেন (২২) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও অভিযুক্ত সম্রাটকে গ্রেপ্তার করে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
রোববার (১৭ মার্চ) সকালে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মাসুদ আলম। এর আগে শনিবার (১৬ মার্চ) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিহত আজাদ পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে এবং গ্রেপ্তারকৃত আব্দুস সামাদ ওরফে সম্রাট একইগ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে।
প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, গত ১১ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আজাদ তার ডিসকভারী মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুজি করে তার সন্ধান না পেয়ে ১২ মার্চ বিকেলে পাবনা সদর থানায় নিখোঁজ জিডি করেন তার পিতা আব্দুল হাকিম। জিডি নং-৮৩৫, তাং-১২/০৩/২০২৪।
খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে ১৩ মার্চ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিখোঁজ আজাদের ক্ষত বিক্ষত মৃতদেহ দাপুনিয়া ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের মোশাররফ চেয়ারম্যান এর খামারের পাশে লিচু বাগানে পাওয়া যায়। পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের পিতা আব্দুল হাকিম বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন।
এরপর ঘটনা তদন্তে মাঠে নামে সদর থানা ও ডিবি পুলিশের যৌথ একটি টিম। তারা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে অভিযুক্ত আব্দুস সামাদ ওরফে সম্রাটকে শনিবার দুপুরে তার নিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আজাদ হত্যার কথা স্বীকার করেন সম্রাট। পুলিশকে সম্রাট জানায়, তাহারা পরষ্পর ঘনিষ্ট বন্ধু এবং একসাথে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। এক মাস আগে আজাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল নিয়ে বেড়াতে গিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে মোটরসাইকেল মেরামত বাবদ দুই হাজার টাকা খরচ হয় আজাদের। তার মধ্যে এক হাজার টাকা দেন সম্রাট। বাকি এক হাজার টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই বন্ধুর মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। সেই থেকে অভিযুক্ত সম্রাট কিভাবে তার বন্ধু আজাদকে হত্যা করবে তার সুযোগ খুঁজতে থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় সম্রাট কৌশলে গত ১১ মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার বন্ধু আজাদকে ডেকে নিয়ে মোশাররফ চেয়ারম্যানের খামারের পাশে লিচু বাগানে যায়। সেখানে কথা-বার্তার একপর্যায়ে সম্রাট তার কাছে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে আজাদের গলায় ও চোখের নিচে আঘাত করে। পরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ টেনে হিঁচড়ে ঘটনাস্থলে থাকা সীম গাছের শুকনা লতাপাতার নিচে ঢেকে রাখে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাকু ঘটনাস্থলের পাশে ধান ক্ষেতে ফেলে দেয়। নিহত আজাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবংতার গায়ে থাকা রক্তমাখা জ্যাকেট নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। যাবার সময় আজাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পথিমধ্যে ছয়ঘড়িয়া গ্রামের একটি পুকুরে ফেলে দেয়।
এছাড়া আজাদের রক্তমাখা জ্যাকেট এবং মোটরসাইকেলের ডিজিটাল নম্বর প্লেট সম্রাট তার শোবার ঘরে রেখে মোটরসাইকেল নিয়ে নাটোরের লালপুর উপজেলার মোহরকয়া গ্রামে জনৈক ফারুক শেখের বাড়িতে রেখে আসেন সম্রাট। গ্রেপ্তারের পর আব্দুস সামাদ ওরফে সম্রাটের স্বীকারোক্তি মোতাবেক তাকে সাথে নিয়ে নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, মোটরসাইকেল, পরিহিত রক্তমাখা জ্যাকেট ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু জব্দ করে পুলিশ।
এ ঘটনায় হত্যার দায় স্বীকার করে শনিবার বিকেলে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন সম্রাট। পরে তাকে সদর থানার মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।