বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩১ অপরাহ্ন

News Headline :
কুষ্টিয়ার নিখোজ ২ এএসআই এর লাশ পদ্মা নদী থেকে উদ্ধার এবার প্রকাশ্যে এলেন ইবি শিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারি গোদাগাড়ীতে বিপুল পরিমান গাঁজা-সহ গ্রেফতার মাদক কারবারী ডালিম আমরণ অনশনে রাবি আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা পুলিশ কর্মকর্তা বিজয়-উৎপলকে ধরলেই মিলবে কাজেম হত্যার উত্তর: দাবি চিকিৎসকদের সিরাজগঞ্জে ব্যবসায়ী হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে  বিক্ষোভ ও মানববন্ধন  দেশদ্রোহী খুনি হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করতে হবে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে–আহসান হাবিব লিংকন রংপুরে জমি লিখে না দেয়া মাকে বেধড়ক পেঠালো ছেলে ও ছেলের বউরা শ্রীবরদীতে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এতিম ও অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ মান্দায় মসজিদ উন্নয়ন প্রকল্পের সাড়ে ৩শো গাছ উপড়ে ও ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগ

মাদকের রাজধানী গোদাগাড়ীর সক্রিয় তালিকাভুক্ত মাদক কারবারিরা ধারা ছোয়ার বাইরে

Reading Time: 4 minutes

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:

রাজশাহী গোদাগাড়ীর তালিকাভুক্ত ১৯৮ জন মাদক কারবারী বীর দাপটে চলাচলা করলেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসন রয়েছে নিরব।
উল্লেখযোগ্য মাদকের ডিলার ও গডফাররা হলো: গোদাগাড়ী থানার শহিদুল ইসলামের ছেলে নাসির। একই থানার বারুই পাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে হোসেন আলী, মাদারপুর গ্রামের আব্দুল গনি’র ছেলে গোলাম মোস্তফা টিয়া, ইসরাইলের ছেলে ইবরাহীম মহিশাল বাড়ি সাগর পাড়া গ্রামের নাজিমুল ইসলামের ছেলে রায়হান ওরফে ভ-ল, মহিশাল বাড়ি সাগর পাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে সনি, মহিশাল বাড়ি সাগর পাড়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে হেলাল উদ্দিন, একই এলাকার মৃত মুরশেদ ফাটার ছেলে সাদিকুল ইসলাম। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পথগুলো দিয়ে ব্যাপকহারে দেশে অনুপ্রবেশ করছে হেরোইন, ফেনসিডিল, দামি মদসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। ফলে ধ্বংসের দারপ্রান্তে যুব সমাজ। প্রতিদিনই এসব মাদকদ্রব্য মাদক চোরাকারবারিরা ভারত থেকে চোরাই পথে এনে মাদক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুরো রাজশাহীর মাদকসেবীদের চাহিদা পূরুণ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম ছাত্র সমাজ, যুব সমাজ, উঠতি বয়সি যুবতী, কিশোর, কিশোরী থেকে শুরু করে মাদকের ভয়ঙ্কর ছোবল থেকে রেহাই পাচ্ছেনা কোন শ্রেণীর মানুষ। নেশার টাকা যোগাড় করতে চুরি, ছিনতাই, ব্ল্যকমেইল, প্রতারতা সহ সমাজে ধর্ষণ ও খুনের মতো জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার যুবক ও কিশোররা। ফলে মাদকের লাগাম টেনে ধরার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সমাজের বিশিষ্ট জনেরা।
তারা বলেন, বিভিন্ন সভা সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বক্তব্যে বলেন, সমাজ থেকে মাদক নিমূল করা একবারেই সম্ভব নয়। তবে নিয়ন্ত্রণ করতে কাছ করছে প্রশাসন। বাস্তবে পাড়া মহল্লার দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা হবে মাদক নিয়ন্ত্রনের বাইরেই চলে গেছে। ডিবি পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করে মাদক যতটুকু আটক করে তাই ঢের। এদিকে পিছিয়ে নেই রাজশাহী মহানগরীর উপকন্ঠ আন্ধার কোঠা, হরিপুর, কাশিয়াডাঙ্গা, মতিহার থানা অঞ্চল। এ সকল এলাকায় হাত বাড়ালেই মিলে সকল ধরনের নেশা। তাছাড়া এই সব অঞ্চলে মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের কোন উল্লেখযোগ্য অভিযান নেই বললেও ভুল হবে না। বরং তথ্য দিলে মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায় তাদের। অজ্ঞাত কারনে মাদক ও মাদক কারবারী ধরতেও অনিহা দেখায় পুলিশ। আরএমপি’র এমনও থানা আছে যে থানার পুলিশ মাদক পল্লিগুলিতে অভিযান করে না। শুধু তাই নয় মাদক স্পটগুলিতে পুলিশ গেলে রাগ করেন ওসি সাহেব। এ নিয়ে খোদ থানা পুলিশের মধ্যেও রয়েছে অন্তোষ আর চাপা ক্ষোভ।
কাটাখালি থানা অঞ্চলে যে সকল মাদক পাড়া রয়েছে। সেখানে পুলিশ আবার চেকপোষ্ট বসিয়ে মোটরসাইকেল থামিয়ে মাথা পিছিু ১’শ টাকা হারে চাঁদা আদায় করে পুলিশ। ফলে রাজশাহী শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন গড়ে হাজার খানিক যুবক কিশোর এসব মাদক পল্লিগুলোতে গিয়ে নিরাপদে মাদক সেবন করতে পারে। অবাক হচ্ছেন! এটাই বাস্তবতা। যাইহোক মাদক পাচারের সবচেয়ে নিরাপদ রুটগুলো হলো গোদগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়া দহ, মানিকচক, কানাপাড়া, চাঁপাইনবাবগজ্ঞ সদর উপজেলার কোদালকাটি, আলাতুলি, ঝাইলাপাড়া, ক্লাবঘাট প্রভৃতি এলাকা। ভারত থেকে হেরোইন, ফেনসিডিল, মদসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য পাচার করে নিয়ে আসে নিজ বাড়ীতে কিংবা টাকার বিনিময়ে অন্যের বাড়ীতে রাখেন, সেগুলো কোন স্কুল, কলেজ, মাদ্রসা পড়–য়া ছাত্রছাত্রী, গরুর রাখাল, সুন্দরী কিশোরী, গৃহবধূর মাধ্যমে পদ্মা নদীর এপারে গোদাগাড়ী পৌরসভার সিএন্ডবি, গড়ের মাঠ, মাদারপুর, হাটপাড়া, রেলওয়ে বাজার, কুঠিপাড়া, শিবসাগর, বারুইপাড়া প্রভৃতি এলাকার বাসাবাড়ীতে রেখে রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, চিটাগাং, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়ে থাকে। মাদকদ্রব্য পাচার, ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত রয়েছে শত শত নানা ধরনের মানুষ। মাদকদ্রব্য ও চোরাচালানি পণ্য পাচার ক্রয়-বিক্রয় তাদের একমাত্র পেশা। বেসরকারী এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত ২৫ বছরে গোদাগাড়ী উপজেলাসহ পৌরসভা এলাকার ৫ শতাধিক ব্যক্তি মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন এবং লাখপতি হয়েছেন কয়েক হাজার। তাদের অবস্থান এখন সমাজের শীর্ষে স্থানে। কেউ কেউ কালো টাকার ছড়াছড়ি করে নির্বাচনে প্রভাব খাটিয়ে হয়েছেন চেয়ারম্যান, মেয়র, মেম্বার, কাউন্সিলার, রাজনৈতিক দলের তথাকথিত প্রভাবশালী নেতা, কথিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। সংগত কারণে তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাদকদ্রব্য সেবন করে অকালে মারা গেছে, শাতাধিক মাদকসেবী। আর মৃত্যুর প্রহর গুনছেন হাজার হাজার মাদকসেবী। লন্ডভন্ড বিকৃতি মানুষিকতা নিয়ে গড়ে উঠছে মাদকাশক্ত, কিশোর, কিশোরী, যুবক, যুবতী। এদের মধ্যে না থাকছে আদর্শ নিতী নৈতিকতা, না থাকছে আবেগ বিবেক। কোন কথা নাই যে কোন মূল্যে টাকা চাই। আর এজন্য মা, বাবা, ভাই, বোন কেউ তাদের নির্যাতের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এইসব চোরকারবারীর গডফাদারেরা নিয়োগ করেছেন শত শত এজেন্ট। উপজেলার খেয়াঘাট ছাড়াও তারা ব্যবহার করছেন প্রাইভেট নৌকা, কার, মাইক্রোবাস, হোন্ডা, মোবাইল ফোন, ভারতীয় সিম এবং তাদের ভারতীয় এজেন্টদের নিকট রয়েছে বাংলাদেশী সিম যাতে সহজে অল্প খরচে সহজে কথা বলা যায়। ওই সব মাদক চোরা কারবারীর গডফাদারেরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মোবাইল সিম ব্যবহার করে থাকেন। অনেক সময় বিজিবি চঁঁাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা সীমান্তবর্তী আলাতুলি, কোদলকাটি এবং রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সীমান্ত ডি.এম.সি চর আষাড়িয়াদহ প্রভৃতি এলাকায় কেজি কেজি হেরোইন, হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল আসামিসহ আটক করেন থানায় মাদক আইনে মামলা দেন। ওই সব মাদক সম্্রাটদের মাদকের মালিক হিসেবে আসামি করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মাদক বহনকারি লেবারদের সাজা হয়। গড ফাদাররা খালাস পায়। পরে গডফাদাররা উচ্চ আদালতে গিয়ে লেবারের জামিনে মুক্তি করায়। এক সময় খালাসও হয় তারা। মাদক ব্যবসায়ীরা সব সময় অসৎ জনপ্রতিনিধি, অসৎ রাজনৈতিক নেতা, পাতিনেতাদের হাত করে চালার চেষ্টা করে। প্রশাসনের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করতে অনেক সময় নিজেকে ক্ষমতাশীন দলের লোক, বিভিন্ন মহলে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেন। গোদাগাড়ী পৌরসভা ও উপজেলায় ভাল ভাল জায়গায় আলাতুলি, কোদালকাটি, চর আষাড়িয়াদহ এলাকার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা মাটি কিনে রাজকীয় বাড়ী তৈরি করেছেন এবং প্রধান প্রধান বাজারে দোকান কিনে কথিত মোবাইল দোকান, গার্মেন্টস, জুতা স্যান্ডেলের দোকান করেছেন। কিন্তু ওই সব দোকানে মূলত মালিক কোন সময় আসেন না। অন্য লোক দিয়ে সারা বছর চালানো হয়। ওই সব কথিত দোকান ও বাড়ীর আড়ালে চালানো মাদক ব্যবসা। আবার অনেকেই সুখি নগরী হিসেবে খ্যাত রাজশাহী মহানগরীতে দামি বিল্ডিং, নজরকাড়া শোরুম, এসি চেম্বার নিয়ে আয়েশি জিবন যাপন করছেন। নেপথ্যে কোটি কোটি টাকার মাদকের চালান পাচার করাচ্ছেন লোক দিয়ে।
একাধিক স্থানীয়রা জানান, এসকল চোরাচালানী, মাদক স¤্রাটরেরা দেশ, জাতি, সমাজের শত্রু। এদের বয়ঙ্কর থাবা থেকে দেশ ও দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম যুবসমাজ বাঁচাতে হলে যে কোন মূল্যে মাদক চোরাকারবার বন্ধ করতে হবে।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি মোঃ কামরুল ইসলাম জানান। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যত শক্তিশালী হোক না কেন মাদক কারবারিদের ছাড় দেওয়া হবে না।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com