শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৪ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা,রংপুর:
রংপুরকে বলা হয় দেশের প্রথম আলু উৎপাদনকারী এলাকা। শুধু আলু নয় কৃষি নির্ভর অঞ্চল হিসেবেও পরিচিত রয়েছে। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আলু চাষ হয় এখানে। যা চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। তবে বেশি উৎপাদন হলেও শুধুমাত্র পর্যাপ্ত সংরক্ষণের অভাবে বছর শেষে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ছে আলুর। যে আলু মৌসুমের শুরুতে ১০টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো তা এখন বাজারে ৫০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন অনুযায়ী অপর্যাপ্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও সংরক্ষণ ব্যয় বাড়ায় প্রভাব পড়েছে আলুর দামেও এমনটা ধারণা করা হচ্ছে। এনিয়ে ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।তারা বলছেন, একশ্রেণির ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে করে তাদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। অথচ সরকারি ভাবে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে না। আলু সিন্ডিকেটের সাথে জড়িতরা ফায়দা লুটছেন।তবে ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকরা বলছেন, সংরক্ষণ ব্যয় বাড়ায় দামের ওপর তা প্রভাব ফেলছে বলে তারা মনে করেন।রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর রংপুর অঞ্চলের রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফারী ও লালমনিরহা জেলায় আলুর আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৭৩ হাজার ২৭ হেক্টরে। আলু উৎপাদন হয়েছে ২৬ লাখ ৮৪ হাজার টন। হেক্টরে গড় উৎপাদন ২৭ মেট্রিক টনের বেশি। এসব আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগার আছে ৭০ টি। যেখানে আলু সংরক্ষণ করা যায় মাত্র ৬ লাখ ৬০ হাজার টন। রংপুরে এবার যে পরিমাণ আলুর আবাদ হয়েছে তাতে সারা বছরের খাবারের চাহিদা, বীজ আর রপ্তানিকৃত আলু বাদ দিয়ে ১৬ লাখ ১২ হাজার টন আলু উদ্বৃত্ত থাকে। তবে পর্যপ্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় মৌসুমের শুরুতে বিক্রি করতে বাধ্য হয় কৃষকেরা। পরে নানা কারণে আলুর দাম বাড়তে থাকে।নগরীর তামপাট এলাকার নুরুল ইসলাম বলেন, তিনি এবার ৭ একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। এর মধ্যে কার্ডিনাল ও স্টারিক্স জাতের আলু বেশি ছিল। মৌসুমের শুরুতে ৩ একর জমির আলু ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। আর ৪ একর জমির আলু স্থানীয় দুটি হিমাগারে রেখেছেন। হিমাগার ভাড়া, বস্তা, উৎপাদন খরচসহ আমার ২৩ টাকা পড়েছে। বিক্রি করেছি ২৬ টাকা দরে। এতে লাভ কম হয়েছে।দর্শনা বনগ্রাম এলাকার মোহাম্মদ জিন্নাহ আলী নামের এক কৃষক বলেন, এমনিতেই হিমাগারে জায়গা কম। তার ওপর এবার বেশি ভাড়া থাকায় আলুতে লাভ কম হয়েছে।মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ এলাকার কৃষক জাভেদ আলী বলেন, ‘আগে ৯০ কেজির বস্তা হিমাগারে রাখতে খরচ পড়ত ২৫০ টাকা। এখন ৫০ কেজির আলুর বস্তা হিমাগারে রাখা হয় ৩০০ টাকায়। ৫০ টাকার খালি বস্তা এখন ৮০ টাকা, ক্যারিং খরচ, লেবার খরচ দ্বিগুণ। এজন্য জমিতেই আলু বিক্রি করে ফেলেছি।কয়েকজন কৃষক বলেন, এবার ১০ টাকা যে আলু ক্ষেত থেকে তুলে বিক্রি করছি সেই আলু ৫০ টাকায় কিনে খেতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত আলু সংরক্ষাণাগার থাকলে আলু বেশি রাখা যেতো। এতে বাজারেও আলুর দাম কম হতো।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, হিমাগারে যে আলু সংরক্ষণে থাকে তার চার ভাগের একভাগ চাষির আর তিন ভাগ ব্যবসায়ীর। চাষির আলু ইতিমধ্যে বিক্রি শেষ। বর্তমানে হিমাগারগুলোতে যে আলু আছে তা ব্যবসায়ীরা বের করছেন না। তাঁরা এক ধরনের সিন্ডিকেট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছেন। এতে সাধারণ ক্রেতা ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।এব্যাপারে রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক (সংরক্ষণ ও বিপণন উন্নয়ন) আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, এবারে রংপুরে অহিমায়িত ৪৫টি মডেল ঘরে আলু রাখা হয়েছিল। কৃষকেরা ২ লাখ ১০ হাজার থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করেছে। সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা গেলে আলু হিমাগারে রাখার সংকট কেটে যাবে। তিনি আলু রপ্তানি বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।