শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা,রংপুর:
কৃষি নির্ভর এলাকা হিসেবে পরিচিত রংপুর অঞ্চলে এখন চলছে আমন ধানের ভরা মৌসুম। আমন চারা লাগানোসহ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করতে দেখো গেছে কৃষকদের। অথচ এই ভরা মৌসুমে টিএসপি, এমওপি এবং ডিএপি সারের তীব্র সংকটে পড়েছে কৃষকরা। তারা চাহিদা অনুযায়ী সার না পাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন।কৃষকরা বলছেন, ভরা মৌসুমে জমিতে পর্যাপ্ত সার না দিলে ফসলের গাছও দূর্বল হয়ে যাবে। এতে ফলন বিপর্যয়ের আশংকা করছেন তারা। তারা অভিযোগ করে বলেন, সার না পাওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে খোলা বাজার থেকে দ্বিগুন দামে সার সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এতে আমন উৎপাদনে বাড়তি খরচ হচ্ছে। তারা দ্রæত সারের সংকট নিরসনে উর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।তবে ডিলাররা জানান, পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়ায় তারা কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেনা। এতে তাদের কোন হাত নেই।রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রংপুর জেলায় আমন ধানের চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিলো ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭শ ৫০ হেক্টর। ইতিমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে।ডিলার ও সার ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার পর্যাপ্ত সার সরবরাহ নিশ্চিত করলেও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের চাহিদার তুলনায় কম সার বরাদ্দ দেয়ার সুপারিশ করায় তারা কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ করতে পারছেনা। প্রতি বস্তা টিএসপি সার ১৩শ ৫০ টাকা, এমওপি বা পটাশ সার ১ হাজার এবং ডিএপি সার ১ হাজার ৫০ টাকা সরকারী মুল্য নির্ধারন করে দেয়া হলেও বরাদ্দ কম পাওয়ায় কৃষকদের চাহিদা পূরণ করতে পারছেনা। তারা জানান, রংপুর জেলায় বিসিআইসির সার ডিলার রয়েছে ১০৬জন অন্যদিকে বিএডিসির সার ডিলার আছে ১শ ৮২ জন।এদিকে বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি জুন মাসে একজন ডিলারকে টিএসপি সার বরাদ্দ দেয়া হয়নি এমওপি সার দেয়া হয়েছে ৫৭ বস্তা আর ডিএপি সার দেয়া হয়েছে মাত্র ৬৫ বস্তা। অন্যদিকে চলতি আগষ্ট মাসে টিএসপি সার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রতিজন ডিলারকে ৬৩ বস্তা এমওপি ১০৮ বস্তা এবং ডিওপি সার দেয়া হয়েছে ১০৮ বস্তা।নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কয়েকজন সার ডিলার বলেন, একজন ডিলারের অধিনে একটি ইউনিয়ন পড়ে। প্রতিটি ইউনিয়নে কমপক্ষে ২০টি গ্রাম রয়েছে। যেভাবে সার বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তাতে করে কৃষক প্রতি বরাদ্দ বস্তা নয় কেজিতেও পড়েনা। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন কৃষকদের সারের পেছনে দৌড়াতে হবেনা সারই কৃষকদের পেছনে দৌড়াবে। কিন্তু বাস্তবে শষ্য ভান্ডার বলে পরিচিত রংপুরে উল্টোটা হচ্ছে। কৃষকদের যে চাহিদা তার চার ভাগের একভাগও সার বরাদ্দ মিলছেনা।কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, বিসিআইসির ডিলারদের প্রত্যেকের দোকান বা গোডাউন রয়েছে কিন্তু বিএডিসির ১শ ৮২ জন সার ডিলার থাকলেও তাদের অনেকেরেই দোকান বা গোডাউন নেই। ফলে তাদের সারের জন্য হন্য হয়ে খুঁজতে হচ্ছে। কিন্তু কাঙ্খিত সার পাওয়া যাচ্ছেনা। সার ডিলারদের কাছে সার না পেয়ে খোলা বাজার থেকে দ্বিগুন দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে চাষাবাদের খরচও বেড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। তারা আমনসহ অন্যান্য ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।সরেজমিনে নগরীর তামপাট এলাকার কৃষক নুরুল ইসলাম, ইছার আলী ও নজিরেরহাট এলাকার একরামুৃল হক জানান, তারা আমন চাষ করেছেন। এখন জমিতে টিএসপি ও ও পটাশ বা এমওপি ও ডিএপি সার দেয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু সারের দোকান গুলোতে গেলে সার পাওয়া যাচ্ছে না। ডিলাররা পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়াসহ নানা অযুহাত দেখাচ্ছেন।মিঠাপুকুর উপজেলার লতিবপুর এলাকার মজনু মন্ডল ও কাফ্রিখাল শ্যামপুর এলাকার মোখলেছার রহমান অভিযোগ করলেন, ভরা মৌসুমে জমিতে পর্যাপ্ত টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি সার দেয়া না গেলে আমন ধানের ফলন কম হবে সেই সাথে আমন ধানের গাছ দুর্বল হয়ে পড়বে। তারা আমনের পাশাপাশি সবজিও করেছেন। এতে লোকসানের আশংকা করছেন।এব্যাপারে রংপুর বিসিআইসি সারডিলার এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক মোতাহার হোসেন মওলা জানিয়েছেন, সার সংকটের জন্য রংপুর কৃষি সমম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালককেই পরোক্ষভাবে দায়ি। উনি রংপুরে যোগদানের পর থেকে গত দু বছর ধরে সারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষকরা চাহিদামত সার পাচ্ছে না। তিনি বলেন, রংপুর জেলার জন্য আমন ধান চাষে সারের চাহিদা কম দেখাচ্ছেন ফলে বরাদ্দও মিলছে কম। বরং বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তিনি বরাদ্দ কম দেখাচ্ছেন বলে তার ধারনা।রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান বলেন, রংপুরে আমন মৌসুম চলছে। তিনি রংপুরে সারের সংকট নেই বলে দাবি করে বলেন, চাহিদার বাইরে সার দেয়ার প্রয়োজন নেই। মনিটরিং টিম মাঠে কাজ করছে। তিনি সার ডিলারদের অভিযোগ সর্ম্পকে বলেন, তাদের অভিযোগের সত্যতা নেই।