রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫০ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর:
@ কীটনাশক ছিটিয়েও পাচ্ছে না ফল
রংপুরে আমন রোপা ধান ক্ষেতে মাজরা পোকা ও গোড়ানি পচা রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পোকার আক্রমণে ধানের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। একদিকে মজুরি খরচসহ তেল ও সারের মূল্য বৃদ্ধি, তার ওপর ধানে পোকা ও পচন ধরায় কপালে হাত উঠেছে কৃষকদের। তারা এবার ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশংকা করছেন।
সরেজমিনে রংপুর নগরীর তামপাট, কেরানীরহাট, দর্শনা, তপোধন, মাহিগঞ্জসহ গঙ্গাচড়া, পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমণ।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আর কয়েকদিন পরে গাছে ধান আসার কথা। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পোকার আক্রমণ। ধানগাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে বাদামি রং ধারণ করছে। ফসলের মাঠজুড়ে এখন শুধু পোকা আর পোকা। এছাড়াও গোড়ানি পচন রোগও লক্ষ্য দেখা দিয়েছে। পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষায় বাজারে পাওয়া কীটনাশক জমিতে ছিটিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। একারণে এবার রোপা আমনের ফলন বিপর্যয়ের আশংকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। কৃষকরা আরোও জানান, সময় মতো পোকা দমন করতে না পারলে এবার রোপা আমন উৎপাদন ব্যাহত হবে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় ৬ লাখ ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। এরমধ্যে রংপুর নগরীসহ জেলায় এক লাখ ৬৬ হাজার ৬৩৬ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়। এই পাঁচ জেলায় এবার ১৮ লাখ মেট্রিক টন আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের বাবুপাড়া গ্রামের কৃষক ভুবেশ্বর রায় ও কুড়িবিশ্বা গ্রামের আব্দুল হালিম জানান, তাদের প্রায় তিন বিঘা জমিতে পোকা আক্রমণ করেছে। কীটনাশক স্প্রে করেও এই পোকা দমন করা যাচ্ছে না। এ যাবত তিনবার কীটনাশক স্প্রে করা হয়েছে। প্রতিবার স্প্রে করতে বিঘা প্রতি প্রায় সাত-আটশ’ টাকা করে খরচ হচ্ছে।
নগরীর তামপাট এলাকার কৃষক নুর ইসলাম ও মিলন মিয়া বলেন, ডিজেল ও ইউরিয়া সারের দাম বাড়ায়, আবাদের খরচও বেড়েছে। সেচ দিতে গিয়ে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। কম উৎপাদন ও লোকসানের আশঙ্কায় দিন কাটছে তাদের। সরকারি সহযোগিতা না পেলে বিপদে পড়বেন তারা।
গঙ্গাচড়ার কৃষক জিতেন চন্দ্র রায়, দুলাল মিয়া ও কাউনিয়া উপজেলার বরুয়ারহাট গ্রামের হারুন মিয়া, খোকনসহ বেশ কয়েক কৃষক জানান, তাদের জমিতে পোকা ও পচন রোগের আক্রমণের কথা। তারা বলেন, সুদে ঋণ নিয়ে এবার আমন ধান চাষ করেছেন অনেকে। ধান বের হতে না হতেই পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এই পোকা ধান গাছের পাতা খেয়ে বিবর্ণ করে ফেলছে।
রংপুর সদরের জানকী ধাপেরহাট এলাকার মনজুরুল ইসলাম, শ্যামপুরের আব্দুল্ল্যাহ সুজন ও গঙ্গাচড়ার ছিল্লানির বাজার এলাকার মোজাম্মেল হক জানান, ধানের শিষ না আসতেই আমন ক্ষেতে পোকা ও পচন রোগ দেখা দেওয়ায় আমরা হতাশ। কীটনাশক প্রয়োগের পোকার আক্রমণ কিছুটা কমেছে। তবে ক্ষেত সম্পূর্ণভাবে মাজরা পোকা মুক্ত হয়নি। গোড়ানি পচা রোগে কোনো ওষুধ কাজ করছে না। যদি এই রোগ দূর না করা যায়, তবে ধানের ফলন নিয়ে হতাশায় পড়তে হবে।’
গঙ্গাচড়া উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি ধান ক্ষেতে মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এছাড়া কৃষকরা ধান ক্ষেতে কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার সময় মতো না করার কারণে পোকার আক্রমণ হচ্ছে। পোকা দমনে কৃষকদের অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, ধানগাছের হলুদ বর্ণ রোধে ও পোকার আক্রমণ থেকে ধানগাছ রক্ষায় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও পোকা দমনে ধান ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিতকরনে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।