বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৭ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর:
রংপুর অঞ্চলে ইঁদুরের হাত থেকে ফসল রক্ষায় ১১ লাখের বেশি ইঁদুর নিধন করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এ ইঁদুর নিধন করা হয়। এর ফলে রংপুর নগরীসহ এ অঞ্চলে আমনের বিপুল সংখ্যক ফসল রক্ষা পাবে। এতে খুশি আমন চাষীরাও। তবে চাষীরা এ নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে কৃষি বিভাগে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
চাষীরা বলছেন, রংপুর নগরীসহ এ অঞ্চলের ৫ জেলায় প্রতি বছরই আমন ধানের মৌসুমে হাজার হাজার মেট্রিক টন ফসল খেয়ে ফেলে ইঁদুর। এর ফলে উৎপাদিত ফসলের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ইঁদুরের পেটে চলে যায়। বিপুল পরিমান আমন ধান ইঁদুরের কারণে গোলায় তোলা সম্ভব হয় না। এতে লোকসান হয়। চলতি মৌসুমে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ১১ লাখ ৬০২টি ইঁদুর নিধন করায় স্বস্তি ফিরেছে। এবার হয়নো ফসল রক্ষা পাবে বলে তারা ধারণা করেন।
কৃষি বিভাগ জানায়, দেশে প্রতি বছর ইদুরের কারণে ১০-১২ লাখ টন খাদ্যশস্য নষ্ট হয়ে থাকে। ইঁদুর প্রতিদিন তার শরীরের ওজনের ১০ গুণ পর্যন্ত খাবার নষ্ট করতে পারে। এ ছাড়া মলমূত্র ও লোম আমাদের খাদ্যদ্রব্যের সাথে মিশে টাইফয়েড, জন্ডিস, চর্মরোগ, কৃমিরোগসহ ৩৩ প্রকারের রোগ ছড়ায়। মারাত্মক প্লেগ রোগের বাহকও এই ইঁঁদুর। ইঁদুর মাঠের ও ঘরের ফসল নষ্ট করা ছাড়াও বৈদ্যুতিক তার কেটে অগ্নিকান্ড ঘটায়, টেলিফোনের তার কেটে টেলিফোন অচল করে দেয়, কম্পিউটারসহ ঘরের কাপড়-চোপড়, কাগজপত্র কেটে নষ্ট করে। এ ছাড়া রাস্তা, বাঁধ, রেললাইনে গর্ত করার ফলে বন্যার সময় পানি ঢুকে রাস্তা, বাঁধ ও রেললাইন ভেঙে যায়।
এক জরিপ অনুযায়ী জানা গেছে, আমন ধানের শতকরা ৫-৭ ভাগ, গমের শতকরা ৪-১২ ভাগ, গোল আলুর শতকরা ৫-৭ ভাগ, আনারসে শতকরা ৬ – ৯ ভাগ এবং সেচ নালার ৭-১০ ভাগ পানি ইঁদুরের কারণে নষ্ট হয়ে থাকে। কোন স্থানে এক জোড়া ইঁদুর থাকলেই এক বছরে ৩০০০টি বংশধরের সৃষ্টি করতে পারে।
এবছর এখন পর্যন্ত রংপুরে ইঁদুর নিধনে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন পুরস্কার দেয়া হয়নি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সেরা ইঁদুর নিধনকারিদের পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় প্রায় ৬ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে রংপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি ইঁদুর নিধন হয়েছে। এখানে ৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৫২টি ইদুর নিধন করা হয়েছে। এছাড়া গাইবান্ধায় ৫৪ হাজার ৭৪০, কুড়িগ্রামে এক লাথ ২১ হাজার ৯১৩টি, লালমনিরহাটে ৩৪ হাজার ১৫১টি, নীলফামারীতে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৪৬টি ইদুর নিধন করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিভাগের লোকজন ইঁদুর নিধন অভিযান করেন।
নগরীর তামপাট এলাকার কৃষক নুর ইসলাম ও হুমায়ন রশীদ শাহিন বলেন, ইঁদুরের কারণে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ক্ষতি হয়। ফসল ও জমির ক্ষতি হয়। এতে লোকসান হয়।
মিঠাপুকুর উপজেলার লতিবপুরের কৃষক মজনু মন্ডল, খোড়াগাছের আবু সায়েম ও সদরের রামজীবন এলাকার মনজুরুল ইসলাম জানান, উৎপাদিত ফসলের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ইঁদুরের পেটে চলে যায়। বিপুল পরিমান আমন ধান ইঁদুরের কারণে গোলায় তোলা সম্ভব হয় না। ইঁদুর নিধন হওয়াতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
এব্যাপারে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শাহাদৎ হোসেন জানান, প্রতি বছরই মোট উৎপাদনের একটি উল্লেখ্যযোগ্য অংশ ইদুরের খেয়ে ফেলে। এবার ইঁদুর নিধন অভিযানের ফলে একটি অংশ ইঁদুরের হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে ধারণা করছি।