বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১১ পূর্বাহ্ন

News Headline :
ইউপি চেয়ারম্যানের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন মারিশ্যা-দীঘিনালা সড়কের মাটি সরে গিয়ে দূর্ভোগে জনগণের সেবা দেওয়ার জন্যই সরকার আমাকে পাঠিয়েছেঃ-নওগাঁর নবাগত ডিসি রাজশাহীতে শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে শুটার রুবেল পাবনায় সাংবাদিকের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত ও মতবিনিময় করলেন নবাগত জেলা প্রশাসক মধুপুরে বৈষম্যবিরোধী ও কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে  বিএনপির দোয়া  মাহফিল অনুষ্ঠিত  পাবনার হেমায়েতপুরে কারামুক্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংবর্ধনা ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের উদ্বোধন বাঘাইছড়িতে বিএনপির দুই নেতা বহিষ্কার ডোমারে সীরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিল অনুষ্ঠিত পাবনার সুজানগরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পথসভা অনুষ্ঠিত

রংপুর অঞ্চলে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

Reading Time: 3 minutes

@ বাড়ছে রোগ-বালাই,কাজ করছে ৫৪৪টি মেডিকেল টিম, @ পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় দুর্ভোগ বাড়ছে, @ হাট-বাজারে কমেছে মানুষের উপস্থিতি।

হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর ব্যুরো:
রংপুর নগরীসহ এ অঞ্চলে গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলছে মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। সঙ্গে রয়েছে কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়া। শীতের তীব্রতার সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নি¤œ আয়ের মানুষজন। এছাড়াও চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে নদী তীরবর্তি চরাঞ্চল ও প্রত্যান্ত এলাকাগুলোর মানুষের মাঝে। এমন শীতে বাড়ছে রোগ, সঙ্গে আগুন পোহাতে গিয়ে ঘটছে দগ্ধ হওয়ার ঘটনাও।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রংপুর অঞ্চলের মধ্যে গতকাল বুধবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা এত নিচে নামেনি। এ অবস্থা আরও দুই থেকে তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে মাঘের মাঝামাঝি শীতের তীব্রতা আরও বাড়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত এ অঞ্চলের শীতার্ত অসহায় ও দরিদ্র মানুষজন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় দুর্ভোগও বেড়েছে কয়েকগুণ। নদী তীরবর্তী ও ছিন্নমূল মানুষরা রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। যেন তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে শীতের প্রভাব পড়েছে। শীতের সকালে ছিন্নমূল আর গ্রামীণ মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের পাশাপাশি কুয়াশা বেশি হওয়ায় সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। এতে দূরপাল্লার পরিবহন চলছে ধীরগতিতে। নগরীসহ রংপুর অঞ্চলের রাস্তাঘাট, শপিং মল, হাট-বাজারগুলোতে মানুষজনের উপস্থিতি কমে গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই বাড়ির বাহিরে বের হচ্ছেন না।
এছাড়াও বিপাকে পড়েছেন ইরি-বোরোর চারা রোপণ নিয়ে কৃষকরা। কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না, যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের দিতে হচ্ছে বেশি টাকা। এতে সার, বীজ ও সেচের সঙ্গে কৃষি শ্রমিকের মজুরিতে হচ্ছে বাড়তি খরচ।রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দিনাজপুর এম রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সৈয়দপুর জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, শীতের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগের প্রকোপ। গত কয়েকদিনের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর পরিসংখ্যানও।নগরীর সাতমাথা এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন মনা ও মর্ডাণ মোড়ের আবু সুফিয়াল মুকুলসহ বেশ কয়েকজন জানান, তীব্র শীতের কারণে বিক্রি অনেক কমে গেছে। হাড়কাঁপানো শীতে জীবিকার প্রয়োজনে দোকান খুলে বসে থাকলেও তাতে তেমন লাভ হচ্ছে না। কারণ মানুষজন আসছে না।নগরীর শাপলা চত্বর এলাকার গৃহবধু রোজিনা বেগম বলেন, গত কয়েকদিন থেকে ঠান্ডায় তার ছোট মেয়ে ও তিনি সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। এমনকি চিকিৎসার জন্য এর মধ্যে সদর হাসপাতালেও গিয়েছিলেন।এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. তানভীর চৌধুরী বলেন, শীতজনিত রোগবালাই বিশেষ করে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক মানুষ। শীতজনিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রায় সহস্রাধিক শিশু গত ৭-৮ দিনে ভর্তি হয়েছে। শিশুরা কোল্ড ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এতে আতঙ্কের কিছু নেই।রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান জানান, শীতে অসুস্থ নারী, পুরুষ ও শিশুদের জরুরি চিকিৎসার জন্য রংপুর বিভাগের প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে মেডিকেল কাজ করছে। জরুরি সেবা দিতে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম রয়েছে। পুরো বিভাগে ৫৪৪টি টিম শীতকালীন রোগে আক্রান্ত শিশু, নারী ও বয়স্কদের সেবা প্রদান করছে। এছাড়াও একটি বিভাগীয় মনিটরিং টিম রয়েছে। এদিকে রংপুর জেলার জনসংখ্যা প্রায় ত্রিশ লক্ষাধিক, এর মধ্যে শীতার্ত মানুষের সংখ্যা পাঁচ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে শুধু রংপুর মহানগরীতেই বাস করে প্রায় ৭০ হাজার ভাসমান নারী-পুরুষ। এরা রেলস্টেশনের প্ল্যাটফরম, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতের বারান্দা আর ফুটপাতে রাত কাটায়। জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। একইভাবে জেলার আট উপজেলা বিশেষ করে তিস্তা, ঘাঘট, করতোয়া, যমুনেশ্বরী বিধৌত চরাঞ্চলে বসবাসকারী হাজার হাজার পরিবার শীতে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগ মানুষ এখনও শীতবস্ত্র পায়নি।এ ব্যাপারে রংপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোতাহার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে মাত্র ৫৯ হাজার কম্বল বরাদ্দ পেয়েছেন। এসব কম্বল রংপুরের আট উপজেলায় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। আরও শীতবস্ত্র চাওয়া হয়েছে। দুই-চার দিনের মধ্যে ৩০ হাজার পিস কম্বল এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com