শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩১ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
রাজশাহীতে একরাতেই দুই চিকিৎসক খুনের পর অন্য চিকিৎসকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যতটা দ্রæত সম্ভব তারা চেম্বারে রোগী দেখা শেষ করে বাসায় ফিরছেন। কেউ কেউ নিরাপত্তার স্বার্থে সঙ্গে ব্যক্তিগত লোকজনও রাখছেন। চলাচল করছেন সতর্কতার সাথে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে (বিএমএ) চিকিৎসকদের সাবধানে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। এদিকে দুই চিকিৎসক খুনের পর ছয় দিন অতিবাহিত হলেও এর রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। মাত্র চার ঘন্টার ব্যবধানে কারা, কেন দুই চিকিৎসককে খুন করল সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায়নি পুলিশ। ফলে নিহতদের পরিবার স্বজন ও সহকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ হতাশা বাড়ছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, খুনিদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। দ্রæতই তাদের ধরা পড়ার আশা করছেন তারা।
গত ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আরএমপির চন্দ্রিমা থানার কৃষ্টগঞ্জ বাজারের পল্লী চিকিৎসক এরশাদ আলী দুলালকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। রাত ৯টার দিকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে সিটিহাট এলাকায় তার রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে চেম্বার শেষ করে ফেরার পথে খুন হন যৌন ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম কাজেম আলী আহমদ। ডা. কাজেমের খুনিদের ধরতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল বিএমএ। খুনিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় সংগঠনটি নতুন কর্মসূচি শুরু করেছে। শনিবার (৪ নভেম্বর) এই একঘণ্টা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে সমাবেশ করেন চিকিৎসকেরা। রোববারও বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসকেরা।
বিএমএ রাজশাহীর সভাপতি ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘আমরা আরএমপির ঊর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বশরীরে দেখা করে একটা সময়সীমা দিয়েছিলাম। সেটা বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। এ জন্য আমাদের নতুন কর্মসূচি দিতে হয়েছে। এরপরও অগ্রগতি না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে।’
ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘আমাদের বসে থাকার সুযোগ নেই। আমাদের মধ্যে চরম ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একদিনে দুই চিকিৎসক খুন হওয়া তো স্বাভাবিক ঘটনা নয়, খুবই অস্বাভাবিক। কে, কখন, কীভাবে টার্গেটে পড়ে যাবেন তা তো বলা মুশকিল। এ জন্য বিভিন্ন সংস্থা, এমনকি পুলিশের পক্ষ থেকেও আমাদের সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। বিএমএ থেকেও বলা হয়েছে চিকিৎসকেরা নিজেরাই যেন নিজেদের নিরাপদে রাখেন।’
তিনি বলেন, ‘এখন দ্রæতই চেম্বার শেষ করে দিচ্ছেন অনেক চিকিৎসক। কেউ কেউ তো সন্ধ্যার পরেই বাসায় ফিরছেন। যাদের একটু দেরি হচ্ছে, তারা সঙ্গে ব্যক্তিগত লোক রাখছেন নিরাপত্তার কথা ভেবে। এ রকম ভীতিকর পরিস্থিতি আগে কখনও আমরা দেখিনি।’
ডা. কাজেম পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রাজশাহী শাখায় নিয়মিত রোগী দেখতেন। এখান থেকেই ফেরার পথেই তিনি খুন হন। পপুলারের রাজশাহী শাখা ব্যবস্থাপক ফরিদ মোহাম্মদ শামীম বলেন, ‘চিকিৎসকদের মাঝে ভীতি কাজ করছে তা ঠিক। তবে এখন অবরোধের কারণে এমনিতেই রোগী কম। রোগী কম হচ্ছে বলে তারা দ্রæতই বাসায় ফিরছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা এবং ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ দেখতে পেয়েছে, দুটি হত্যাকাÐে দুর্বৃত্তরা ছাই কালারের হায়েস মাইক্রোবাস নিয়ে এসেছিল। কাপড়ে তাদের মুখ ঢাকা ছিল। দুটি হত্যাকাÐ একইসূত্রে গাঁথা কি না-তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের পুলিশের মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই খুনের তদন্তের এখনও কোন আপডেট নেই। পুলিশ তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে। খুনের রহস্য উদঘাটন হবে। খুনিরাও ধরা পড়বে।’