শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন

News Headline :
সিরাজগঞ্জে ইজিবাইক চালককে হত্যা করে গাড়ি ছিনতাই আটক দুই কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার পাবনা জেলার ১৯৬তম জন্মদিন উপলক্ষে কাগজে গ্রাফিতি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বাজারের আগুন: ত্রিশালের কাঁচাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আকাশছোঁয়া বিপাকে সাধারণ মানুষ কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের সতর্ক বার্তা পাবনা র‌্যাবের অভিযানে ৪টি হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী গ্রেফতার নওগাঁ সোসাইটির নীতিমালা ভঙ্গ করে প্রতিপক্ষের ঘর দখলের অভিযোগ অপরাধী ও দুষ্টু লোকদের স্থান বিএনপিতে হবে না বলে তারেক রহমান স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন: কেন্দ্রীয় যুবদল সম্পাদক নয়ন পাবনায় সংবাদ প্রকাশের জেরে ওসির ইন্ধনে সাংবাদিকের খোজে সন্ত্রাসীরা মতিহারে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী সোহেল গ্রেফতার

রাজশাহীতে পাড়ার মোড়ে মুদি দোকানী থেকে হাজার কেটি টাকার মালিক হুন্ডি মুকুল

পাড়ার মোড়ে মুদি দোকানী থেকে হাজার কেটি টাকার মালিক হুন্ডি মুকুল

Reading Time: 3 minutes

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজশাহী:
পাড়ার মোড়ে মুদি দোকানী থেকে এখন হাজার কোটি টাকার মালিক মোখলেসুর রহমান মুকুল ওরফে হুন্ডি মুকুল। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রানালয়ে তালিকা ভূক্ত হুন্ডি ব্যবসায়ী। চড়েন বিলাস বিহুল ৪টি গাড়িতে। রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা মোড়ে ৭তলা ভবনে রয়েছে আলিশান চেম্বার। ওই ভবনেই হুন্ডি মুকুলের রয়েছে টর্চার সেল। বিগত সরকারের আমলে বিারোধীদলের কেউ তার মনোনিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট করার চেষ্টা করলে ওই ভবনের ৭তলায় টর্চার সেলে ঢুকিয়ে নির্যাতন করতো হুন্ডি মুকুল ও তার পোষা সন্ত্রাসী বাহিনী। রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান আসাদের ঘনিষ্ঠ এই হুন্ডি মুকুল।
মুকুলের ঠিকাদারী ব্যবসার মোঃ গোলাম সারোয়ার জানান, মুকুলের রাজশাহীতে রয়েছে শত শত বিঘা জমি, বাড়ি ফ্ল্যাট ও প্লট। সৌদি আরব, ঢাকা-সহ দেশে ও বাইরে রয়েছে একাধীক ফ্ল্যাট ও প্লট। তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানার মামলা নং- ৩৯, তাং- ২০/০৪/২০২১, ধারা ৪(২) মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তার শালা ও ম্যনেজার আসামী। মুকুলের হাতে জিম্মি তার সকল ঠিকাদার পার্টনার।
৫ আগস্টের সাবেক আওয়ামী সরকারের পতনের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে মেয়র লিটন ও এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ। এরপর থেকে তাকে আর রাজশাহী শহরে দেখা যায়নি। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী ভারতে পালিয়েছেন হুন্ডি মুকুল।
হুন্ডি মুকুলের রাজশাহী এবং ঢাকায় চারটি বাড়ি আছে। এ ছাড়া কাশিয়াডাঙ্গায় শত কোটি টাকা মূল্যের সাত তলা ভবন আছে। আছে ইসি চধৎধফড়-সহ ৪টি দামি গাড়ি এবং অন্তত ৪০ বিঘা জমি। এর মধ্যে রাজশাহী শহরেই আছে অন্তত ২০ বিঘা। যার আনুমানিক মূল্য ২০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া রাজশাহী সিটি বাইপাস গরুর হাটেও আছে মুকুলের বড় অঙ্কের শেয়ার। শুধু দেশেই নয়, বাইরে সৌদি আরবেও আছে মুকুলের হোটেল ব্যবসা। সেখানে দুটি আবাসিক হোটেল কিনেছেন। একটি মক্কায়, অন্যটি মদিনায়। সৌদি আরবে হোটেল কেনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। তবে মাস তিনেক পর আবারও এলাকায় ফিরে আসেন। এরপর নাম লেখান ঠিকাদারি ব্যবসায়। সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুকুল রাজশাহী সিটি করপোরেশনে অন্তত ৪০০ কোটি টাকার কাজ বাগিয়েছেন গত তিন বছরে। এর মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহীর বন্ধগেট-সিটি বাইপাস রোডের কাজটি করেছেন তিনি। দেশের অন্য জেলাগুলোতেও আছে তাঁর নেটওয়ার্ক। শুধু সিটি মেয়র নন, মাস চারেক আগে মুকুল রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান আসাদকে একটি গাড়ি দেন। অভিযোগ আছে, পবা ও গোদাগাড়ীর দুটি বালুঘাট কম মূল্যে পাইয়ে দেওয়ার জন্য ওই গাড়িটি উপহার দিয়েছিলেন এমপি আসাদকে। যদিও আসাদের দাবি, গাড়িটি তিনি কিনেছিলেন। ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের স্পেশাল ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট শাখা রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে গড়ে ওঠা হুন্ডি ও মাদক কারবারিদের একটি তালিকা করে। ওই তালিকায় থাকা চোরাকারবারি ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মুকুল। তাঁর সঙ্গে ভারতের অন্যতম চোরাকারবারি এনামুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এনামুলের ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে মুকুলের বিরুদ্ধে। কয়েক দফায় ভারতীয় নাগরিক এনামুলের লোকজন মুকুলকে খুঁজতে রাজশাহী আসেন। ভারত সরকার একসময় নগদ টাকা ধরপাকড় শুরু করলে এনামুল ১হাজার কোটি রুপি পাঠিয়েছিলেন মুকুলের কাছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অর্ধেক এনামুলকে ফেরত দেন। বাকিটা নিজের কাছে রেখে দেন মুকুল। সেই পুঁজিতে মুকুল এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। ২০১৮ সালে করা দেশের হুন্ডি ব্যবসায়ীদের তালিকায় দ্বিতীয় নামটি ছিল মুকুলের। আমদানি-রপ্তানির জন্য মুন এন্টারপ্রাইজের নামে মুকুল বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মুকুলের তেমন কিছুই ছিল না।
গত ৪ ও ৫ আগস্ট রাজশাহীজুড়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ককটেলের বিষ্ফোরণ ঘটিয়েছে, জনগণের জানমালের ব্যপক ক্ষতিসাধন করেছে এবং বোয়ালিয়া থানা এলাকায় অগ্নেয়অস্ত্র উচিয়ে নির্বিচারে ছাত্র-জনতার উপর গুলি ছুড়েছে ও দেশীয় অস্ত্র দ্বারা কুপিয়েছে। এতে আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মহানগরীর দামকুড়া থানা এলাকার ছাত্রদল সভাপতি বাদী হয়ে হুন্ডু মুকুল-সহ আওয়ামী লীগের একাধীক নেতা ও শতাধীক আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কয়েক দফা মোখলেসুর রহমান মুকুলকে কল করা হলেও তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে এ্যাডিশনাল পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম), জানান, মুকুলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী, মানিলন্ডারিং, অবৈধ কর্মকান্ডের অভিযোগ অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাকে গ্রেফতারে মাঠে কাজ করছে পুলিশ-সহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। নাগালের মধ্যে পেলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com