মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
রাজশাহীর ব্যস্ততম সড়কের পাশেই ঢাকাগামী বাস কাউন্টার। সড়কের পাশেই যাত্রী ওঠানামা করায় যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। শুধু যাত্রী ওঠানামাই নয়, রাস্তায় যাত্রীবাহী বাস ধোয়ামোছার কাজও করা হয়। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল। তারপরও সড়কে যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে যানজট তৈরি হচ্ছে। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কারণে দীর্ঘ ১৯ বছরেও রাজশাহীতে এমন অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। ফলে যানজট থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর।
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, রাজশাহী নগরীর যানজট নিরসন ও উন্নত পরিবহন সেবা নিশ্চিতে ১৯ বছর আগে নির্মাণ করা হয় আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। নগরীর নওদাপাড়ায় সাত কোটি ১৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এ টার্মিনাল নির্মাণ করে। যেখানে একসঙ্গে প্রায় ৫০০ বাস পার্কিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে।
বাস চলাচল সহজ করতে সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ভদ্রা মোড় রেলক্রসিং থেকে পারিজাত লেক হয়ে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণ করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। এতে ব্যয় হয় ৬৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। তবে কোটি কোটি টাকা খরচ করেও বাস কাউন্টারগুলো নিয়ে যাওয়া যায়নি টার্মিনালে। ফলে নগরীর তালাইমারী, ভদ্রা, রেলস্টেশন, রেলগেট ও গ্রেটার রোডসহ বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী কাউন্টার থেকে যাত্রী ওঠানামা করছে। এতে রেলস্টেশনের প্রবেশমুখে যানজট তৈরি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসীরা। ভোগান্তি দূর করতে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে একটি যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভিন্ন পক্ষের প্রধান ও প্রতিনিধিদের সম্মতিতে শিরোইল বাসস্ট্যান্ড থেকে সব বাস নওদাপাড়ায় সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে ১ নভেম্বর থেকে নওদাপাড়া আন্তঃজেলা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে সব রুটের বাস চলাচলের কথা থাকলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। শহরের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক রাজশাহী রেলগেট থেকে ভদ্রা মোড়। সরেজমিন দেখা গেছে, রেলগেট থেকে শুভ পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি বাস। আবার ঢাকা টার্মিনাল থেকে দোসর মন্ডলের মোড় পর্যন্ত ঢাকা কোচে দখল করে আছে রাস্তার দুপাশ। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। রাস্তার এক পাশেই কাউন্টার হওয়ায় রাস্তা দখল করে বাসে যাত্রী ওঠানামার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। মাত্র কয়েক গজ দূরত্বে মহানগর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থাকলেও তা ব্যবহার করছে না বাস মালিক সমিতি।
রাজশাহী নগরীর রেলগেট এলাকা থেকে ‘চাঁপাই, চাঁপাই’ বলে যাত্রী ডাকছিলেন হেদায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এখান থেকেই সারাবছর যাত্রীরা গিয়ে অভ্যস্ত। যাত্রীদের টার্মিনালে যেতে ২০-৩০ টাকা ভাড়ার প্রয়োজন হয়। তাই তারা যেতেও চান না। এখানেই যাত্রীদের টিকিট কেটে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়।’ রাজশাহী নগরীর শিরোইল এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বাসের যত্রতত্র পার্কিংয়ের জন্যই যানজট হচ্ছে। আমাদের অফিসে যেতে হয় অন্তত ২০ মিনিট হাতে রেখে। যেখানে পুরো রাজশাহী শহরই প্রায় ২০ মিটিটে ঘুরে আসা যায়। রাত কি দিন সবসময়ই যানজট লেগে থাকে।’ এ বিষয়ে একতা ট্রান্সপোর্টের উত্তরাঞ্চলের প্রধান শরিফুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘বাস টার্মিনালের পরিবেশ এবং ব্যবস্থাপনা ঠিক নেই। এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই সেখানে পানি জমে যায়। গাড়ি আটকে যাবে। শুধু তাই নয়, আমরা যদি রাতে সেখানে যাত্রী নামিয়ে দেই তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন।’ তিনি বলেন, আমাদের টার্মিনালে যেতে কোনো বাধা নেই। তবে আগে টার্মিনাল ঠিক হতে হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রæপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো বলেন, টার্মিনাল শুরুর পর থেকেই কিছু কাজ বাকি আছে। এছাড়া ঢাকাগামী কাউন্টারগুলো এখনো বরাদ্দ না দিয়ে মানুষকে ভাড়া দিয়েছে আরডিএ। পরিবেশ ও মান উন্নয়ন সবকিছু ঠিক করা হলেই গাড়িগুলো সেখানে চলে যাবে। কিন্তু সংস্কার কাজ এখনো শেষ হয়নি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) চেয়ারম্যান জিয়াউল হকের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।