বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৪ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
প্রকৃতিতে শীতের আগমন বার্তা জানান দিচ্ছে। বাঙালির শীতের দিনের অন্যতম আকর্ষণ খেজুর গুড়ের তৈরি পিঠা-পায়েস। প্রাচীন কাল থেকে রাজশাহী নগরীর উপকন্ঠ গ্রামাঞ্চলগুলিতে খেজুর রসের যশ ছিল। দিন বদলের সাথে এ এলাকা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। শুধু পরিবর্তন হয়নি খেজুরের রস সংগ্রহ এবং গুড়-পাটালি তৈরির পদ্ধতি।
জানা যায়, এ বছর রাজশাহীতে প্রায় শতাধিক গাছী গ্রামাঅঞ্চলগুলিতে খেজুর রস সংগ্রহ করে। ইতিমধ্যেই তারা গ্রামগুলোতে রস সংগ্রহের ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শীত মৌসুমের আগমনে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার গাছিরা গাছ মালিকদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন।
তারা প্রথমে খেজুর গাছের মাথা পরিষ্কার করেন। এরপর শুরু হয় রস সংগ্রহ। চিরাচরিত সনাতন পদ্ধতিতে মাটির কলসে রাতভর রস সংগ্রহ করা হয়। ভোরের সূর্য ওঠার আগে গাছিরা রস ভর্তি মাটির কলস গাছ থেকে নামিয়ে পরে মাটির হাড়িতে কিংবা টিনের বড় হাড়িতে জ্বালিয়ে গুড়-পাটালি তৈরি করে।কাটাখাখালী থানাধিন কাপাসিয়া গ্রামের আরিফ জানান, উপজেলাসহ বিভিন্ন গ্রামগুলোতে ইতোমধ্যে গাছিরা খেজুর রস সংগ্রহ করে নতুন খেজুর গুড়-পাটালি তৈরি করে বাজারজাত করছেন। গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ থেকে সু-মধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হবে গুড়-পাটালি তৈরির উৎসব। গ্রামে গ্রামে খেজুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা, পায়েস, মুড়ি ও নানা রকমের মুখরোচক খাবার তৈরি করার ধুম পড়বে। সকালে এবং সন্ধ্যায় কাঁচা রস খেতে খুবই মজাদার। রসে ভেজা কাচি পোড়া পিঠার (চিতই পিঠা) স্বাদই আলাদা। দানা গুড়ের সুমিষ্ট গন্ধেই যেন অর্ধ ভোজন। রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি নেই। পাটালি গুড়ের মধ্যে নারিকেল কোরা, তিল ভাজা মিশালে আরো সুস্বাদু লাগে।শীত মৌসুমে যা তৈরি হয় তা রীতিমত কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যায়। আবহমান কাল থেকে তাই বাংলায় নবান্নের উৎসব পালনে খেজুর গুড়ের কদর বেশি। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে গাছিরা গাছ পরিষ্কার বা তোলা চাচার উপকরণ গাছি দা, দড়ি তৈরি সহ ভাঁড় (মাটির ঠিলে) ক্রয় ও রস জ্বালানো জায়গা ঠিক করাসহ বিভিন্ন কাজে রয়েছে ব্যতিব্যস্ত।পুঠিয়া উপজেলার কয়েকজন গাছি জানান, গাছ কাটা, রস জ্বালানো ও গুড়, পাটালি তৈরির উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার গত বছরের তুলনায় গুড়-পাটালির দাম দ্বিগুণ হবে। এ বছর তারা এলাকায় ৪০০টি গাছ মালিকদের সাড়ে তিন কেজি করে গুড় দেয়ার মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ করেছেন। রাজশাহী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীর উপকন্ঠ গ্রামাঞ্চল ও উপজেলা এলাকাগুলিতে খেজুর রস খুব মিষ্টি মধুর, তাছাড়া রস থেকে খেজুরের পাটালী গুড় তৈরি করা হয়। যা দিয়ে উত্তর জনপদের মানুষ বিভিন্ন পিঠাপুলি তৈরি করে থাকেন।