বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৭ অপরাহ্ন

News Headline :
ঐতিহ্যবাহী পাবনা প্রেস ক্লাবের অনিয়ম রংপুরে হারাগাছে ভূয়া আত্মীয় পরিচয় দিয়ে মামলাকারীর মামলা প্রত্যাহার ও জড়িতকে গ্রেফতারের দাবি প্রবাসী যুবকের সাথে প্রতারণা করে অর্ধযুগের কষ্টার্জিত আয় আত্মসাতের অভিযোগ এক নারীর বিরুদ্ধে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলো যমুনা রেলওয়ে সেতু পোষ্য কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে নয়-ছয়; রাবিতে ফের আন্দোলনের প্রস্তুতি রাজশাহীতে পারিবারিক পুষ্টি বাগানে স্বাবলম্বী হচ্ছে গ্রামীণ প্রান্তিক নারীরা পাবনা প্রেসক্লাবের অনিয়ম তদন্তে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠন মহানগরীতে স্বর্ণের দোকানে চুরির অভিযোগে জনতার হাতে আটক নারীকে পুলিশে সোপর্দ পাঁচ শতাধিক নবীন শিক্ষার্থীকে বরণ করলো হাবিপ্রবি ছাত্রশিবির মানুষকে যারা কষ্ট দেয় তাদেরকে পরিহার করুন : এ.কে.এম. আমিনুল হক

রাজশাহীর বাজারে নকলের ভীড়ে আসল প্রসাধনী উধাও

Reading Time: 3 minutes

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:

নিত্যপণ্যের কথা বললে সাবান, শ্যাম্পু, ক্রীম, লোশন, পাউডার প্রসাধনী সামগ্রীর নামও চলে আসে এর মাঝে। কিন্তু বর্তমানে সেই প্রসাধনী বাজারে নকলের ছড়াছড়ি। সকল পণ্যেরই নকল দিয়ে সাজানো থাকছে ছোট বড় সব প্রসাধনী দোকানগুলো। দেখে বোঝার উপায় নেই আসল-নকলের পার্থক্য।
শরীরে ও ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত পণ্য মানসম্পন্ন না হলে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তবে বর্তমানে বাজারে শরীরে ব্যবহৃত সব ধরণের প্রসাধনী পণ্যেই রয়েছে ভেজাল। বিশ্বজুড়ে নামকরা প্রায় সব ব্র্যান্ডের প্রসাধনী সামগ্রীর নকল পণ্য দিয়ে সাজানো হচ্ছে ছোট-বড় সব প্রসাধনী দোকানগুলো। পণ্যগুলো দেখে আসল নকল পার্থক্য বোঝা দায় হয়ে পড়ছে ক্রেতাদের। সাবান, শ্যাম্পু, ময়েশ্চারাইজার, লোশন, কেশতেল, মেহেদি, ফাউন্ডেশন, লিপস্টিক, বডি স্প্রেসহ সবধরনের পণ্যেরই মিলছে নকল। নকল পণ্যগুলোর প্যাকেটে আসল আমদানিকারকের স্টিকারের মতো হুবহু স্টিকারও লাগানো রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্নের তারিখ এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের ছাপ। এসব দেখে যে কেউই আসল নকল চেনার ক্ষেত্রে পড়ে যান বিপাকে। ভোক্তাদের বিপুল চাহিদাকে পুঁজি করে কতিপয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নকল ও মানহীন প্রসাধনী সামগ্রী বাজারজাত করছে। অনৈতিক মুনাফা হাতিয়ে নেওয়ার সাথে শিশুসহ সব বয়সী মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে বিরাট ক্ষতির মুখে। ফুটপাত থেকে শুরু করে বাজারের বড় নামীদামী দোকানগুলোতেও সরবরাহ করা হচ্ছে এসব ভেজাল ও নকল সামগ্রী। রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার আরডিএ মার্কেট, সামনের ফুটপাতের দোকান, নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন বাজার ও দোকানে ঘুরে দেখা যায় এই অবস্থা। সেইসাথে গ্রাম-গঞ্জে ফেরি করেও বিক্রি করা হচ্ছে ক্ষতিকর এসব প্রসাধনী। হ্যাভক, ফগসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বডি স্প্রের দাম ১৮০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। যেখানে আসলগুলোর দাম ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। নামকরা বিভিন্ন বিদেশী কোম্পানির যেসব পণ্যের দাম ১৯০০ থেকে ২৩০০ এর মধ্যে নগরীর আরডিএ মার্কেটে সেসব পণ্যের দাম ৫৫০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।
ফিট মি ফাউন্ডেশন (মেকআপ সামগ্রী) বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায় যার আসলটির মূল্য প্রায় ১৮০০ টাকা। আবার একই পণ্য বিভিন্ন দামেও বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন কোনোটি উন্নতমানের, কোনোটি তেমন ভালো নয়। আবার এর মাঝে দেশী, চায়নার পার্থক্যও রয়েছে। ক্রেতার সামর্থ্য ও চাহিদা অনুযায়ী তারা একই পণ্য বিভিন্ন মূল্যের দেখান। এই বিষয়ে আরডিএ মার্কেটের প্রসাধনী দোকানে বাজার করতে আসা মাকসুদা বলেন, ‘আসল নকল বুঝা এখন দায়। লেভেল, প্যাকেজিং সব একই করে ফেলে কিভাবে বুঝবো আসল নাকি নকল কিনছি। তাছাড়া বাজারে এখন সবকিছুর দাম বেশি। তাছাড়া দাম বেশি হলেও যে আসল পণ্যই দিচ্ছে তারও সত্যতা নেই। বিক্রেতারা লাভের আশায় নকল পণ্যকে আসল বলেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’ তবে এই বিষয়ে বিক্রেতাদের দাবী ক্রেতারা জেনে শুনেই রেপ্লিকা পণ্য কিনছেন কম দামে বেশি পণ্য পাওয়ায়। আসল দামী পণ্য দেখালেও ক্রেতারা সেই পণ্য কম দামে খুঁজেন। তাই ব্যবসা রক্ষার্থে তাদের এসব রেপ্লিকা পণ্য আনতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরডিএ মার্কেটের এক বিক্রেতা বলেন, ‘বেশি দামে কে কিনতে চায়, সবাই তো খুঁজে কম দামে। আমরা কম দামে বিদেশী আসল পণ্য কিভাবে দিব। তাই চায়না পণ্য রাখি। এতে যদি আমরা দোষী হই, সমান দোষী ক্রেতারাও। তারাও জেনে বুঝে ক্রয় করে।
তিনি আরো বলেন, ‘রেপ্লিকা অনেক পণ্য আসলে চীনের কেমিক্যাল দিয়ে এদেশেই তৈরি হচ্ছে সেগুলো আমরা চায়না বলেই তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করি। যারা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ডের আসল পণ্য দামের জন্য নিতে পারছেন না তারা একই ব্র্যান্ডের চায়না পণ্য নিয়ে থাকেন।’এসব প্রসাধনী ব্যবহারে ক্ষতিকর দিকগুলো বিষয়ে রাজশাহীর চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৌফিক তাওফি বলেন, ‘নকল ও ভেজাল প্রসাধনীতে দেওয়া বিষাক্ত দ্রব্য রক্তের সাথে মিশে নানা ব্যাধির সৃষ্টি করে। এগুলো ব্যবহারের ফলে প্রথমে ত্বকে র‌্যাশের দেখা দেয়। পরে ধীরে ধীরে তা চামড়ায় ক্যান্সার ছাড়াও নানা ধরনের জটিল রোগ তৈরি করে। এসব পণ্যসামগ্রী ব্যবহারে নিজেদের সচেতনতার বিকল্প নেই।’বাজারে নকল প্রসাধনী সামগ্রীর বিক্রির বিক্রির বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘পণ্যের মান যাচাই ও বাজার তদারকির জন্য আমরা প্রতিনিয়ত বাজারগুলোতে অভিযান চালাচ্ছি। এধরণের নকল পণ্য বিক্রয় দেখা মাত্রই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠান ও বিক্রয়কর্মীর বিরুদ্ধে। তাদের যথাযথ সাজার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়াও কেউ নির্দিষ্ট অভিযোগ করলে তা তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জরিমানা করা হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com