শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৯ অপরাহ্ন

News Headline :
কুষ্টিয়ার নিখোজ ২ এএসআই এর লাশ পদ্মা নদী থেকে উদ্ধার এবার প্রকাশ্যে এলেন ইবি শিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারি গোদাগাড়ীতে বিপুল পরিমান গাঁজা-সহ গ্রেফতার মাদক কারবারী ডালিম আমরণ অনশনে রাবি আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা পুলিশ কর্মকর্তা বিজয়-উৎপলকে ধরলেই মিলবে কাজেম হত্যার উত্তর: দাবি চিকিৎসকদের সিরাজগঞ্জে ব্যবসায়ী হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে  বিক্ষোভ ও মানববন্ধন  দেশদ্রোহী খুনি হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করতে হবে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে–আহসান হাবিব লিংকন রংপুরে জমি লিখে না দেয়া মাকে বেধড়ক পেঠালো ছেলে ও ছেলের বউরা শ্রীবরদীতে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এতিম ও অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ মান্দায় মসজিদ উন্নয়ন প্রকল্পের সাড়ে ৩শো গাছ উপড়ে ও ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগ

রাজশাহী চিনিকলে ৬ বছরে লোকশান ৪৫৪ কোটি টাকা

Reading Time: 3 minutes

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
অন্যান্য ফসল আবাদে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকদের আখচাষে অনাগ্রহ, বাজারদরের চেয়ে আখের উৎপাদন খরচ বেশি, গুড় উৎপাদনকারীদের কাছে আখ সরবরাহ, জনবল সংকট, যন্ত্রাংশ পুরোনো হওয়ায় কার্যক্ষমতা কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত রাজশাহী চিনিকল।
২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ছয় বছরে রাজশাহী চিনিকলের লোকসান হয়েছে ৪৫৪ কোটি ১৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। অব্যাহত লোকসানের কারণে বেহাল রাষ্ট্রয়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানটি। রাজশাহী সুগার মিলসে রয়েছে মোট নয়টি সাব জোন। এর মধ্যে পশ্চিমে কাশিয়াডাঙ্গা, নওদাপাড়া, মিলস গেট ক ও মিলস গেট খ জোনে উৎপাদন একেবারেই স্বল্প। কারণ এসব অঞ্চলে অতিরিক্ত নগরায়ণ হওয়ায় আখের চাষযোগ্য জমি কমেছে। এর ফলে উৎপাদনও কম। অন্যদিকে পুঠিয়া, নন্দনগাছী, সরদহ, চারঘাট ও আড়ানীতে উৎপাদন বেশ ভালো। সে ক্ষেত্রে মিলের মোট চাহিদা এ পাঁচটি সাব জোন থেকেই পূরণ করা হয়।
গত ছয় বছরে চিনিকলের উৎপাদন ও আয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সর্বশেষ ২০২২-২৩ মৌসুমে ২৬ হাজার ৪৫ মেট্রিক টন আখ মাড়াই থেকে চিনি উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩৫৬ টন। এ ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ ৮৩ কোটি ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। পরে উৎপাদন হওয়া চিনি ও চিটা গুঁড় বিক্রিসহ সব মিলিয়ে আয় হয়েছে ২০ কোটি ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। ফলে এই মৌসুমেও প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয় ৬৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০১৭-১৮ মৌসুমে প্রতিষ্ঠানটিকে লোকসান গুনতে হয় ৭৪ কোটি ৪৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ৮৩ কোটি ৭৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২০১৯-২০ সালে ৮৮ কোটি ৬১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। ২০২০-২১ মৌসুমে ৮১ কোটি ২১ লাখ ১১ হাজার টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৩ কোটি ৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। চিনিকলের সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিবছর বিপুল লোকসান গুনতে হওয়ায় দেশের ১৬টি চিনিকলের মধ্যে ছয়টি ২০২০ সালে বন্ধ করে দেয় সরকার। সে সময় রাজশাহী চিনিকলও বন্ধের গুঞ্জন ওঠে। এতে চাষিদের সরবরাহের জন্য নিয়ে আসা সার, বীজ, কীটনাশকসহ অন্যান্য কৃষিজাত উপকরণগুলো রাজশাহী থেকে অন্য চিনিকলে পাঠানো হয়। চাষিরা জমিতে দীর্ঘমেয়াদি আখের বদলে অন্য স্বল্পমেয়াদি ফসল চাষে ঝুঁকে পড়েন। আবার উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় অনেকে আখের জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করেন। ফলে জমির স্বল্পতা ও আখ সংকটের কারণে গত তিন বছরে চিনির উৎপাদন নেমে আসে চার ভাগের এক ভাগে। গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিয়োগ বন্ধ থাকায় সৃষ্টি হয়েছে জনবল সংকট। দুই হাজার পদের প্রায় ১ হাজার ৬শ পদই শূন্য রয়েছে। মাত্র ৪’শ জনবল দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে, রাজশাহী চিনিকলে বর্তমানে প্রতিকেজি চিনি উৎপাদনে খরচ ৪০৫ টাকা ৬৮ পয়সা। কিন্তু সেই চিনি মাত্র ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারদরের চেয়ে উৎপাদন খরচ চারগুণ হওয়ায় গত কয়েক বছরে কয়েকশ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে ভবিষ্যতে রাজশাহী চিনিকলের সুদিন ফিরবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আখ থেকে মুনাফা কম পাওয়ায় চাষিরা অন্য লাভজনক চাষে ঝুঁকছেন। কেননা, আখ দীর্ঘ ১২ থেকে ১৪ মাস জমিতে থাকে। এ সময়ের মধ্যে চাষিরা দুই থেকে তিনটি ফসল চাষ করতে পারেন। এতে আখচাষের জমিও কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া আখের উৎপাদন খরচ যে হারে বাড়ছে, দাম সে হারে না বাড়ায় লোকসানের মুখে পড়ছে প্রতিষ্ঠানটি।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, জমি কমলেও চিনকল কর্তৃপক্ষের তদারকি ও সুপরামর্শে চাষিরা আখের পরিচর্যা করায়, পড়ে যাওয়া ঠেকাতে বেঁধে রাখায়, সঠিক সময়ে সার-কীটনাশক প্রয়োগ ও স্প্রে করায় ফলন বেড়েছে। গত ২০২২-২৩ মৌসুমে যেখানে ৪ হাজার ৩৬ একর জমিতে মাত্র ২৬ হাজার ৪৫ টন আখ চাষ হয়েছে, সেখানে চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৫৪০ একর জমি থেকে প্রায় ৪২ হাজার টন আখ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া আখের দাম ১৮০ টাকা মণ থেকে বৃদ্ধি করে ২২০ টাকা করেছে সরকার। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা আবারও আখ চাষে ফিরছেন। ফলে ২০২৩-২০২৪ মৌসুমে ৬ হাজার ৫’শ একর জমিতে আখচাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এতে ২০২৪-২০২৫ আখ মাড়াই মৌসুমে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার টন। রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখবে বলে আশা করা হচ্ছে। রাজশাহী চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার বলেন, ‘চিনিকলকে লোকসান থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যেতে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে সেই রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে লাভের মুখ দেখবে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকারখানাটি।’ প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক করতে রোডম্যাপ তথা বিকল্প উপায় জানিয়ে তিনি বলেন, আখ মাড়াই মৌসুম ছাড়া চিনিকলগুলো বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। সেই সময়ে এখানে আমের জুস ফ্যাক্টরি, ডিস্টিলারি তথা অ্যালকোহল ফ্যাক্টরি, পার্টেক্স বোর্ড ফ্যাক্টরি, কো-জেনারেশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ নানা পণ্য উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি ১৯৬৫ সাল থেকে সেবা দিয়ে যাওয়া চিনিকলের পুরোনো যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করে আধুনিকায়ন করা হলে একই পরিমাণ আখে অধিক পরিমাণ চিনি উৎপাদন সম্ভব হবে। আখ চাষে চাষিদের আগ্রহী করার ক্ষেত্রে সময়মতো মূল্য পরিশোধ করাও জরুরি বলে মনে করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com