বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২২ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
মাদকের রাজধানী গোদাগাড়ীর মাদক মাফিয়া শীষ মোহাম্মদ এখন রাজশাহী মহানগরীতে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করছে হেরোইনের কারবার। এমনই অভিযোগ উঠেছে নগরীর মানুষের মুখে মুখে। সম্প্রতি তিনি দাম্ভিকতা প্রকাশ করে বলেছেন, গোদাগাড়ী থানার ওসি আমাকে কিছুই বলবে না। তাছাড়া সেইরকম ক্ষমতাধর লোকজনের সাথে সম্পর্ক করেই রাজশাহী মহানগরীতে বসবাস করছি।
তারই ঘনিষ্টজনের কাছে সম্প্রতি এমন গাল গল্প দিয়েছেন, মাদকের রাজধানী গাদাগাড়ী উপজেলার শীর্ষ মাদক মাফিয়া “গড ফাদার” শীষ মোহাম্মদ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যক্তি বলেন, গোদাগাড়ী জেলা থেকে কেজি, কেজি হেরোইন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার হচ্ছে। নেপথ্যে থেকে মাদকের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে মাদক মাফিয়া শীষ মোহাম্মদ। একধিক মাদক ও অস্ত্র মামলার আসামী এই মাদক মাফিয়া। তিনি গোদাগাড়ী থানার তালিকাভূক্ত শীর্য মাদক কারকারি বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মহানগরীতে বসবাস করছে। রয়েছে একাধিক বাড়ি। সিটি ভবনের পাশে সানডায়াল কোচিং সেন্টারের গলিতে একটি ভবনে রয়েছে সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত আলিশান চেম্বার। সেই চেম্বারে বসে মদ পান করা আর কোটি কোটি টাকার হেরোইনের চালান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার ও নিয়ন্ত্রণ করাই শীষ মোহাম্মদের কারবার বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, তিনি কয়েকটি মোবাইলে একাধিক সিম কার্ড ব্যবহার করেন।
কথা বলার সময় বিভিন্ন কোর্ড ব্যবহার করেন। খুব কাছে থেকেও তার কথা কেউ বুঝতে পারবে না। গোদাগাড়ীর আর এক মাদক মাফিয়া শহীদুল ইসলাম ভোদড়। তারও একই কর্মকান্ড। ছিলেন শিদ্ধ ডিম ব্যবসায়ী। পরে হেরোইনের খুচরা কারবার। পরে পাইকারী কেজি কেজি হেরোইনের চালান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করে হয়েছেন হাজার কোটি টাকার মালিক। এরশাদ শিকদারের ন্যায় নির্মান করেছেন স্বর্ণ কোমল বাড়ী। কিনেছেন শত শত বিঘা জমি। রাজশাহীতেও রয়েছে একাধিক বাড়ি। প্রশাসনের সর্বচ্চো কর্তা-ব্যক্তিরা মাদক নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন সভা-সেমিনার করছেন। মাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন, জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছেন।
অপর দিকে মাদক কারবারিদের কর্মকান্ড তুলে ধরে সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করলেই প্রতিহিংসায় জ্বলে ওঠে মাদক কারবারি ও গড-ফাদাররা। মাদকের রাজধানী গোদাগাড়ীতে তালিকাভুক্ত ১৯৮ জন মাদক ব্যবসায়ী বীর দাপটে চলাচলা ও মাদকের কারবার চলালেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসন রয়েছে নিরব ! এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের। তারা বলেন, মাঝে মধ্যে ডিবি পুলিশ ও র্যাবের হাতে কেজি কেজি হোরোইনসহ মাদকের ছোট-বড় চালান আটকও হচ্ছে। তবে আটককৃতদের মধ্যে অধিকাংশই মাদক বহনকারী লেবার ও গডফাদাদের কর্মচারী। আর যেসব গডফাদাররা কোটি কোটি টাকার হেরোইন সহ বিভিন্ন মাদকের চালান নিয়ন্ত্রণ করছে তারা সব সময়ই থাকছে ধরা ছোয়ার বাইরে। পর্দার আড়ালে।গোদাগাড়ির উল্লেখ যোগ্য মাদকের ডিলার ও গডফাররা হলো: গোদাগাড়ী থানার জনৈক শহিদুল ইসলামের নাসির, বারুই পাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে হোসেন আলী, মাদারপুর গ্রামের আব্দুল গনি’র ছেলে গোলাম মোস্তফা টিয়া, ইসরাইলের ছেলে ইব্রাহীম, মহিশাল বাড়ি সাগর পাড়া গ্রামের নাজিমুল ইসলামের ছেলে রায়হান ওরফে ভন্ডল, মহিশাল বাড়ি সাগর পাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে সনি, মহিশাল বাড়ি সাগর পাড়া গ্রামের মৃত: আবুল হোসেনের ছেলে হেলাল উদ্দিন, একই এলাকার মৃত মুরশেদ ফাটার ছেলে সাদিকুল ইসলাম, তোফায়েল। জনৈক মোঃ মেকাইল, মোঃ গোলাম মোস্তফা, মোঃ সিরাজ, মোঃ আমিনুল ইসলাম বাবু , মোঃ আব্দুল করিম, মোঃ শফিকুল ইসলাম লুঠু, বিপ্লব , মইদুল ইসলাম ন্যাংড়া, মোসা: নুর নাহার, মোসা: মরিয়ম, মোসা: ফুরকান, হৃদয়, আরিফ, পিয়ারুল, রবি, আনারুল হাজী, জোহাক, জিয়া, সুইটি, ধুলা, মানিক, আব্দুল্লাহ, ভনডল, বিসু, সাগর, ইসাহাক, নাহিদ, টিপু, সোহেল।
গোদাগাড়ী থানার ৬নং মাটিকাটা ইউনিয়নের প্রেমতলী, পিরিজপুর, গোপালপুর, সোনাদিঘী, কালিদিঘী সহ পুরো এলাকার মাদক সিন্ডিকেটের মূল হোতা শফিউর রহমান শুভ, শুভোর আপন ভাই সনি, উভয়ের পিতা: আব্দুল হামিদ (সাবু) , নূরু মাঝি ও তাদের সহযোগী, সুজন, সোহাগ, মশিউর, সোহাগ-২, বাকি সহ ৭/৮জন। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ দিনের অভিযোগ গোদাগাড়ী উপজেলায় মশালবাড়িতে দিনরাত ২৪ ঘন্টাই চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। পুলিশ, ডিবি, র্যাব সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে। উদ্ধার করছে মাদক। তারপরও থেমে নেই মাদকের কারবার। কেই প্রকাশ্যে আবার কেউ গোপনে চালাচ্ছে মাদক কারবার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারীরা মাদক হাতে ধরেনা। যাবতীয় লেনদেন তারা তাদের লেবার এবং কর্মচারীদের দিয়ে করিয়ে থাকেন। ফলে তারা সব সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আর এ ভাবেই পর্দার আড়ালে থাকে মাদক নিয়ন্ত্রণকারি মাফিয়ারা হয়ে উঠেছেন বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক। এরা এতই প্রভাবশালী যে, তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলবে এমন কাউকে টর্চ লাইট জ্বালিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবেনা। জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর), মোঃ ইফতেখায়ের আলম বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স রয়েছে। ইতিমধেই থানা থেকে মাদক কারবারিদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযান চলছে। ছোট-বড় কোন মাদক কারবারিকেউ ছাড় দেয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে সকল তালিকাভুক্ত মাদক কারবারিদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে। “সমাজের সকল সামাজিক, অসাজিক, বৈধ, অবৈধ, জণগনের নিত্যদিনের ভোগান্তিসহ নানা বিষয় তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ করাই সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শত্রু হচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু পুলিশ ও অবৈধ মাদক সিন্ডিকেটের গড-ফাদাররা। সাংবাদিকরা জিবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন। আর অসাধু কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের আয় বাড়ে। চরম বাস্তবতা জেনেও হাল কাউকে না কাউকে তো ধরতেই হবে। আমি না হয় এই ঝুঁকিটা নিলাম। বাঁচবো কয়দিন। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যুব সমাজ, ছাত্র সমাজকে বাঁচাতে আমার কলম যুদ্ধ চলবেই। আজ যারা জিবনের ঝুঁকি নিয়ে এসকল মাদক মাফিয়াদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করছে। তাদের নিরাপত্তাও কম। তারপরও নীতি, নৈতিকতা বিসর্জন দেয়া মানব সভ্যতার কাজ হতে পারে না বলে আমি রাব্বানী ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি। সংবাদ প্রকাশে সাংবাদিক বদ্ধ পরিকর ও অঙ্গীকারবদ্ধ।