সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৬ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
আরো আছে-ভোটের মাঠে টাকা বিতরণ বড় চ্যালেঞ্জ বললেন মাহি
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
টানা তিনবারের সংসদ সদস্য সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সমালোচনা, বিতর্ক এসব থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে গেলেও নানা বিতর্কের মধ্যে তার জনপ্রিয়তায় টান পড়েছে। সেই প্রভাবই লক্ষ্য করা যাচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণায়। শাহরিয়ার আলম তার নির্বাচনি এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মিদের উপেক্ষা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই উপেক্ষা তৃণমূলের নেতাকর্মিদের ক্ষুব্ধ করেছে। আর এতেই প্রচারণায় এগিয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক। আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশও আছে তার সাথে। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে টানা চতুর্থবার আসনটিতে নির্বাচন করছেন শাহরিয়ার আলম। গত তিনবার জয়ী হলেও এবার সেখানে তার জয়ে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা রাহেনুল হক রায়হান। তার প্রতীক কাঁচি। তার বাড়ি চারঘাট উপজেলার শালুয়া ইউনিয়নে।
১৫ বছর রাজশাহী-৬ আসনে প্রভাবের সঙ্গে রাজনীতি করলেও এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের নির্বাচনি এলাকায় ‘বহিরাগত তকমা’ লেগেছে শাহরিয়ার আলমের গায়ে। এলাকায় কম যাতায়াতও তাকে ভোটের মাঠে অনেকটা পিছিয়ে রেখেছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক রায়হানের পক্ষে নেমেছেন আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা এবং স্থানীয় সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা। তারা এই নির্বাচনি নৌকা ছেড়ে কাঁচির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সিনিয়র নেতা ও স্থানীয়দের এমন বিভক্তির ফলে ভোটযুদ্ধে নৌকাকে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্ব›িদ্বতার মুখে ফেলেছে কাঁচি। ভোটকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতাদের দ্বিধাবিভক্ত অবস্থানের ফলে দুই প্রার্থীর অফিস ভাঙচুর ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে পিটিয়ে আহত করার ঘটনাও ঘটেছে। তাতে নির্বাচনে কেন্দ্র করে নৌকা ও কাঁচির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কাও করছেন স্থানীয় ভোটাররা।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, চারঘাট উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে দ্বিধাবিভক্তি কাজ করছে। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক অনেকটা গোছানো প্রচারণা চালালেও শাহরিয়ার আলমের কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাহেনুল হকের সাথে রয়েছেন দুই উপজেলার দুই ভাইস চেয়ারম্যান, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বাঘা পৌর মেয়র আক্কাস আলী, বাঘা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মোকাদ্দেস, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাঘার পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজ উদ্দিন কাঁচি প্রতীকের রাহেনুল হকের পক্ষে পুরো নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। এছাড়াও চারঘাট উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বিপ্লব, নারী ভাইস চেয়ারম্যান তাজমিরা খাতুন, ইউসুফপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল আলম রতন, ভায়ালক্ষীপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শওকত আলী বুলবুল, সরদহ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মতিউর রহমান তপন, পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলামসহ অনেকেই নৌকা ছেড়ে কাঁচির পক্ষে মাঠে নেমেছেন।
শাহরিয়ার আলমের পক্ষে কাজ করছেন, চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম, আড়ানী পৌর মেয়র মুক্তার আলী, চারঘাট পৌর মেয়র একরামুল হকসহ বেশ কিছু ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত চারঘাট পৌরসভার মেয়র একরামুল হক একরাম বলেন, নৌকা হেরে যাওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। তিনি বলেন, যারা প্রতিমন্ত্রীর কাছে সুবিধা পায়নি তারা বিরোধিতা করছেন এখন। তার দাবি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা উগ্রতা দেখাচ্ছে, প্রচারণায় এগিয়ে আছে, এটা সত্য। তাই নৌকার অবস্থা খারাপ মনে হচ্ছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক রায়হান বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য তার নিজস্ব বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ। এলাকার মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছে। এই পরিবর্তন করার কারণে আমি প্রার্থী হয়েছি। যদি কোনো সমস্যা না হয় তাহলে ভোটের মাঠে আমাকে হারাতে পারবে না। আওয়ামী লীগের বিশাল একটি অংশ আছে আমার পক্ষে। এছাড়াও আছে সাধারণ মানুষ। আমি জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। এ আসনে তিনটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪০ হাজার ৫২৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ৫২৭ জন এবং নারী ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯৯ জন। তৃতীয় লিঙ্গেও ১জন।
এই আসন থেকে নির্বাচন করছেন আরও চার প্রার্থী। তারা হলেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মনোনিত প্রার্থী জুলফিকার মান্নান জামী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামসুদ্দিন রিন্টু ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মহসিন আলী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) অধ্যক্ষ আবদুস সামাদ। তবে শাহরিয়ার আলম ও রাহেনুল হক বাদে অন্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা দেখা যাচ্ছে না।
ভোটের মাঠে টাকা বিতরণ বড় চ্যালেঞ্জ বললেন মাহি
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকার মাহিয়া মাহি মন্তব্য করে বলেন, জমিদার সাহেবের টাকা বিতরণ ভোটের মাঠে বড় চ্যালেঞ্জ।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহীর তানোর উপজেলার মন্ডুমালা বাজারে নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ১৭ দফার ইশতেহার ঘোষণা করেন মাহিয়া মাহি।
মাহিয়া মাহি ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, জমিদারের লোকেরা টাকা দিলে নিয়ে নিবেন। কিন্তু ভোটটা ট্রাক প্রতীকে দিবেন। জমিদার সম্মোধন করে তিনি আরও বলেন, জমিদারের অত্যাচার থেকে তানোর-গোদাগাড়ীবাসীকে মুক্ত করার জন্যই তিনি নির্বাচনে নেমেছেন। জয় কিংবা পরাজয়, যেটাই আসুক না কেন, নির্বাচন শেষেও এলাকার মানুষের পাশে থাকবেন ও দ্বারে দ্বারে যাবেন বলেও আশ্বাস দেন তিনি।