বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
বর্ষাকালে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি না হওয়ায় লিজবিহীন জলাশয়গুলোতে পাটজাগ দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এতে পাট প্রক্রিয়াজাত করণে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজশাহীর চাষিরা। এছাড়াও ইতোমধ্যে গত দুই দিনে বৃষ্টিপাতের ফলে খাল-বিল ও নদী-নালায় কিছুটা পানি জমতে শুরু করেছে। শ্রাবণের স্বরূপ বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে, পাট জাগ দেয়া চাষিদের জন্য আর কোনো সমস্যা হবে না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পবা উপজেলার ডাংগেরহাট সুইচ গেটের খাস জলাশয়, দর্শনপাড়া ইউনিয়নের বিল ধর্মাপুর এলাকার খাল-বিল, নওহাটা পৌর এলাকার দুয়ারি বারনই নদীর সুইচ গেটের খাস জলাশয়, ভূগরইল খাড়ি, বড়গাছী বিলে পার্শ্ববর্তী লিজবিহীন খাস পুকুরসহ বিভিন্ন এলাকার লিজবিহীন খাস পুকুর, খাল-বিল ও নদী-নালায় পাট জাগ দেয়া ও পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। অন্য বছরের তুলনায় বর্ষাকালে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাট জাগ দেয়া নিয়ে হতাশায় ছিলেন কৃষকেরা।
পাট চাষিদের কষ্টের কথা চিন্তা করে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল মাসিক সমন্বয় সভায় রাজশাহী অঞ্চলে লিজবিহীন খাস পুকুরসহ সরকারি জলাশয়গুলোতে পাটজাগ দেয়ার জন্য ঘোষণা দেন। এই সিদ্ধান্তের আলোকে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার পাটচাষিরা সরকারি খাস জলাশয়ে পাট জাগ দেয়ার সুযোগ লাভ করে।
পবা উপজেলার পাটচাষি সাজু জানান, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছি কিন্তু অতিরিক্ত খরায় পানির অভাবে পাটজাগ দেয়া নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। এলাকায় পাট জাগ দেয়ার জায়গার ভীষণ সংকট থাকলেও বিলের মধ্যে বেশ কয়েকটি খাস পুকুর ও ডোবা আছে, সেখানে পানি থাকে না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে এই খাস পুকুরে পাট জাগ দিয়েছি। সোমবার থেকে পাট থেকে আঁশ ছাড়ানো শুরু করেছি। এখানে পাট জাগ দিতে না পারলে আমাকে মাঠ থেকে ১০ মাইল দূরে বারনই নদীতে পাট নিয়ে যেতে হতো। সেক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি পড়তো।
নওহাটা বায়া এলাকার পাটচাষি সাইফুল ইসলাম জানান, সাত বিঘা জমির পাট ভোলাবাড়ী বিলের সরকারি খাড়িতে জাগ দিয়েছি। খাড়িটি জমির কাছাকাছি হওয়ায় পাট জাগ দিতে অনেক সুবিধা হয়েছে। গত এক সপ্তাহ থেকে ৫ বিঘা জমির পাটের আঁশ ছাড়ানো হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বাঁকি কাজ শেষ হবে।
এবিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ মোজদার হোসেন জানান, রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা অভ্যাসগতভাবে স্বাভাবিক পদ্ধতিতেই পাট জাগ দিয়ে থাকেন। পাট জাগ দেয়ার জন্য এখনও ১৫ থেকে ২০ দিন সময় আছে। রাজশাহী অঞ্চলে অনেক খাস পুকুর, ডোবা, খাল-বিল ও খাড়ি আছে, সেগুলো পাট জাগ দেয়ার জন্য কৃষকরা ব্যবহার করছেন। কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতের ফলে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে পাট পচনে কৃষকদের কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, আষাঢ় মাসে আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা পাটজাগ দেয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন। পাট চাষিদের কষ্টের কথা চিন্তা করে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মাসিক সমন্বয় মিটিংয়ে লিজবিহীন খাস পুকুরসহ সরকারি জলাশয়গুলোতে পাট জাগ দেয়ার ঘোষণা দেন। তাই রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা সরকারি খাস জলাশয়গুলোতে পাট জাগ দিচ্ছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, এবছর আষাঢ় মাসে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানির সংকটে পাট চাষিরা দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন। কৃষকদের পাট জাগ দেয়ার সুবিধার্থে লিজবিহীন জলাশয়গুলো ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা হয়। এর ফলে কৃষকদের সোনালী আঁশ পাট জাগ দেয়া সুবিধা হয়েছে।