বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ অপরাহ্ন

News Headline :
নালিতাবাড়ীতে ভারতীয় মদসহ যুবক আটক কুষ্টিয়ার নিখোজ ২ এএসআই এর লাশ পদ্মা নদী থেকে উদ্ধার এবার প্রকাশ্যে এলেন ইবি শিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারি গোদাগাড়ীতে বিপুল পরিমান গাঁজা-সহ গ্রেফতার মাদক কারবারী ডালিম আমরণ অনশনে রাবি আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা পুলিশ কর্মকর্তা বিজয়-উৎপলকে ধরলেই মিলবে কাজেম হত্যার উত্তর: দাবি চিকিৎসকদের সিরাজগঞ্জে ব্যবসায়ী হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে  বিক্ষোভ ও মানববন্ধন  দেশদ্রোহী খুনি হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করতে হবে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে–আহসান হাবিব লিংকন রংপুরে জমি লিখে না দেয়া মাকে বেধড়ক পেঠালো ছেলে ও ছেলের বউরা শ্রীবরদীতে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এতিম ও অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ

লোডশেডিং, বর্ধিত মূল্যে জ্বালানী তেল আর নয়

Reading Time: 3 minutes

রণেশ মৈত্র:-

প্রায় একমাসের বেশী হয়ে গেল বাংলাদেশ সরকার খোঁড়া অজুহাতে আকস্মিকভাবে রাতের বেলায় মাত্র এক ঘন্টার নোটিশে জ্বালানী তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করলো-একই সাথে বিদ্যুতের লোডশেডিং চালু করায় সৃষ্ট ভয়াবহ চাপে ভরা গ্রীষ্মকালে সকল গ্রাহককে বিনা নোটিশেই প্রায় পড়তে হয়েছে। আরও শংকাজনক ব্যাপার হলো এমন পরিস্থিতি আর কতকাল চালু থাকবে এখনও স্পষ্ট করে সরকার কিছু বলছেন না। ভাসা ভাসাভাবে একমাস পরেই বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়ে আসবে এমন কতা কোন কোন মন্ত্রী বললেও, মন্ত্রীদের কথায় আজ আর মানুষের তেমন একটা আস্থা নেই। তাঁরা লাগামহীন অবস্থায় যাঁর যা ইচ্ছা, তাই বলে চলেছেন। এ নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উষ্মা।
যা হোক, যদি এক মাস পরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সত্যিই স্বাভাবিক হয়-তবু যে দু’আড়াই মাস ধরে দেশব্যাপী লোডশেডিং চালানো হলো তার কারণে জাতীয় অর্থনীতি দৃশ্যত:ই মারাত্মক ধাক্কা খেয়েছে-যদিও সরকার তা মানতে আদৌ রাজীন নন।
হঠাৎ চিত্রপট পালটে গেল। ২২ আগষ্ট দুপুর পর নিবন্ধটি লিখতে শুরু করি কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ বোধ করায় লেখা বন্ধ রেখে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। হার্টের রোগী হওয়াতে এবং বয়োবৃদ্ধির কারণে চিকিৎসকেরা মাস কয়েক আগে এমন পরামর্শ দিয়েছেন।
সন্ধ্যার পর মন্ত্রীক একজন স্থানীয় সাংবাদিক এলেন। কথাবার্তা চললো অনেকক্ষণ। এরপর রাতের কাবার খেয়ে কিছুক্ষণ একটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ টেলিভিশনে দেখে শুয়ে পড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম। সকালে জেগে দেখি বেলা ৮টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠি। ব্যতিক্রম হলো। হাত মুখ ধুয়ে ভোরের চা খেয়ে টেলিভিশন খুলতেই চোখে পড়লো মন্ত্রীসভার নতুন সিদ্দান্তঃ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্য্যন্ত সরকারি আধাসরকারি ও স্থানীয় সরকার অফিস সমূহ খোলা থাকবে; ব্যাংক সমূহ কোলা থাকবে সকাল নয়টা থেকে বিকেল ৪টা পর্য্যন্ত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সাপ্তাহিক ছুটি একদিনের পরিবর্তে দুদিন (শুক্র ও শনিবার)।
সেচের সুবিধার জন্র মধ্যরাত থেকে গ্রামাঞ্চলে নিরবচ্চিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া নিশ্চিত করা হবে।
এ ছাড়া আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকায় রাত ৮টার মধ্যে দোকান পাট, ১১ টার মধ্যে রেস্তোঁরা, সিনেমাহল এবং ১২ টার মধ্যে ওষুধের দোকান বন্ধ করতে হবে।
অপরপক্ষে বিশ্বব্যাপী জ্বালানী তেলের দাম আর এক দফা কমার খবরও ২৩ আগষ্টের পত্রিকাসমূহে প্রকাশিত হয়েছে তার মুখেই বাংলাদেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং এর নতুন সিডিউল। আসলে বাংলাদেশে জ্বালানী তেলে দাম অবিশ্বাস্য হারে যেদিন থেকে বাড়ানো হলো-তার দু’একদিন পর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানী তেলের দাম কমতে সুরু করে আজ পর্য্যন্ত তা ধাপে ধাপে কমেই যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অব্যাহত থাকা সত্বেও এমনটি ঘটে চলেছে। তবে ওই যুদ্ধের গরম বাতাস তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে বাংলাদেশে।
একই চিত্র কিন্তু ভোজ্য তেলের ক্ষেতেও অব্যাহ ভাবে ঘটে চলেছে। এখানে ভোজ্যতেলের দাম পুনরায় লিটার প্রতি ২০ টাকা করে তবুও বৃদ্দি করার প্রস্তাব মিল মালিকেরা সরকারের কাছে পেশ করেছেন প্রায় মাস খানেক আগে। এ প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা যদিও প্রত্যাশিত ছিল কার্য্যত: কিন্তু তা ঘটে নি। সরকার কোন উচ্চ বাচ্য করছে না আদৌ। আর সরকার তারও আগে ভোজ্য তেলের মূল্য কমানোর যে আদেশ দিয়েছিল সে আদেশটি সে আদেশটি প্রায় দুমাস আগে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হলেও ভোজ্য তেলের ব্যবসায়ী সি-িকেট সরকারের সে নির্দেশ কার্য্যকর করে নি কিন্তু ওই ব্যবসায়ীরা সরকারি নির্দেশ অমান্য করে নিজেদের অর্থলোভ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা অব্যাহত রাখলেও তাদের বিরুদ্ধে আজতক কোন সরকারি পদক্ষেপ গৃহীত হয় নি। ফলে ওই সি-িকেটের সাহস সীমাহীন পর্য্যায়ে চলে গেছে।
অপরদিক জ্বালানী তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির যে ভয়াবহ পরিণতি বা প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন সমগ্র দেশবাসীকে হতে হয়েছে তা অবর্ণনীয়। এমন কোন পণ্য নেই যার মূল্য অবিশ্বাস্য হারে পাইকারী ও খুচরা উভয় পর্য্যায়ে ব্যবসায়ীরা বৃদ্ধি করে নি। এই মূল্যবৃদ্ধির দৌরাত্য এমনই যে তার ফলে সাধারণ হোটেল রেস্তোঁরার বিক্রী মারাত্মভাবে হ্রাস পেয়েছে অনেক হোটেল রেস্তোঁরা কর্মী ছাটাই করে দিয়েছে। পথিমধ্যস্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চায়ের দোকান, রেস্তোঁরা হোটেল প্রভৃতি যাদের খদ্দের ছিল হাজার হাজার দিন মজুর, রিকসা, স্কুটার, ভ্যান, বাস, ট্রাক প্রভৃতির চালক ও হেলপার-আজ আর তারা তেমন খদ্দের পাচ্ছে না কারণ তাদের রান্না করা ভাত, ডাল, মাছ, সবজ,ি ডিম, মাংস প্রভৃতি সব কিছুর দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে ওই ক্রেতাদের সংসার ব্যয় বিপুলভাবে বেড়ে গেলেও আয় আদৌ বাড়ে নি বরং কমেছে। এই চরম দুরবস্থার শুরু হয়েছে ২০২০ সালের মার্চ অর্থাৎ যখন থেকে করোনায় মৃত্যুর খবর প্রচারিত হতে থাকে। আজ একটানা আড়াই বছর পার হলো-কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির বিড়ম্বনা আদৌ কমে নি বরং ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ জানা গেল আবারও ভোজ্য তেলের দাম লিটার প্রতি ৭টাকা করে বাড়ানো হয়েছে যদিও বিশ্ব বাজারে কমছে।
গত ২২ আগষ্ট নতুন করে বিদ্যুতের লোডসেডিং এর তালিকা প্রকাশ করা হলো তাতে অতীতের এক ঘন্টার পরিবর্তে ১ সেপ্টেম্বর থেকে গড়ে জ্জ ঘন্টার লোডসেডিং এর খপ্পড়ে দেশবাসী পড়বেন এমন আশংকার বাস্তব ভিত্তি আছে।
এক ঘন্টা লোড শেডিং কি প্রত্যাহৃত?
যে বিষয়টি প্রাসঙ্গিক অথচ আদৌ স্পষ্ট করা হচ্ছে না তা হলো কয়েক সপ্তাহ যাবত প্রত্যহ এক ঘন্টা (কার্য্যত: জেলা-উপজেলায় ৮/১০ ঘন্টা অসংখ্য বিরতি সহ) লোডসেডিং চলছিল তার ব্যাপারে মন্ত্রীসভা কি সিদ্ধান্ত নিলেন। এটা কি ধঁঃড়সধঃরপধষষু প্রত্যাহৃত বলে গণ্য হবে না কি অনাদিকাল ধরে অব্যাহত থাকবে? জ্বালানী তেলের এবং ভোজ্য তেলের দাম বিশ্ববাজারে দফায় দফায় কমে এলেও দেশের বাজারে তা কমানোর নূন্যতম উদ্যোগও চোখে পড়ছে না।
যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না
বিদ্যুত কি শুধু অফিস আদালতেই পুড়ে থাকে? আমাদের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসভার সদস্যবৃন্দ, এম.পি. সচিব, অতিরক্ত ও সহকারী সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, আইজি পুলিশ, ডিআইজি পুলিশ, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রমুখের বিমাল বিশাল সরকারি ও পৈত্রিক বাসভবনে যে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুত দিবারাত্র ব্যবহার হচ্ছে সেখানে লোডসেডিং কঠোরভাবে বিস্তৃত না হওয়ায় বহু বিদ্যুত খরচ হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুত বিভাগের ঊর্ধতন থেকে নি¤œতম পর্য্যায়ের কর্মকর্তারা তাঁদের বাসভাবে যে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্রবহার করেন সেখানে রাশ টেনে এক ঘন্টার তথাকথিত লোডসেডিং অবিলম্বে প্রত্যাহার করে গ্রামাঞ্চলে রাত্রি ১২টার পরিবর্তে রাত্রি ৮ থেকে সকাল ৮ টা পর্য্যন্ত সেচের জন্য অব্যাহত বিদ্যুত সরবরাহের ব্যবস্থা করা হোক।

লেখক
রণেশ মৈত্র
সাংবাদিকতায় একুশে পদক প্রাপ্ত

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ি নয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com