মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
শাহরিয়ার মিল্টন ,শেরপুর :
বনাঞ্চল ঘেরা শেরপুরের তিনটি উপজেলার ৬০টি গ্রামের হাজারো প্রান্তিক নারী ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, ছাগলের দুধ সহজে হজম হয় এবং এর মাংস উন্নত মানের প্রাণিজ আমিষের উৎস। এ ছাড়া এর ব্যাপক চাহিদার দিক বিবেচনায় পাহাড়ি গ্রাম্য নারীরা আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে ছাগল পালন করে আসছেন।
শ্রীবরদীর হারিয়াকোনা গ্রামে আদিবাসী নারী দিনা রানী চিরানের বলেন, আমাদের আয়ের কোনো পথ ছিল না। দেড় বছর আগে চারটা যমুনা পাড়ি ছাগলের বাচ্চা কিনি। তিনটা ছাগী ও একটি খাসি। এখন আমার ২০ টি ছাগল। আমি মাসে একটা করে ছাগল ১৫-২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারি। এই আয় দিয়ে সংসার চলে। দিনা রানী চিরান আরও বলেন, ছাগলগুলো দিনে বনের লতাপাতা আর ঘাস খায়। রাতে থাকে ঘরে। কোনো খরচ হয় না। ঘরে এলে কিছু খাবার দেই। পাইকাররা আমার খামার থেকে ছাগল কিনে নিয়ে যান। ছাগলের খামার করে সাফল্য পেয়েছেন আরেক আদিবাসী নারী বাসনা রানী কোচ। বাড়ি বাবেলাকোনা গ্রামে। তার ভাই দুই বছর আগে যমুনা পাড়ি দুটি ছাগলের বাচ্চা কিনে দেন তাকে। এখন তার খামারে ২৬টি ছাগল। প্রতি মাসে দুটি করে ছাগল বিক্রি করেন। তার এখন মাসে আয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। বাসনা রানী কোচ বলেন, আমার খামারে ৫০টি ছাগল ছিল। অর্ধেক বিক্রি করে সংসারের কাজে লাগিয়েছি। এরপরও প্রতি মাসে দুইটা করে ছাগল বিক্রি করতে পারি। তিনি আরও বলেন, পাঁচ বছর আগে স্বামী মারা যায়। সংসারের বোঝা আমার কাঁধে পড়ে। ছেলেমেয়ে নিয়ে দুঃসহ জীবন কাটিয়েছি। এখন ছাগলের খামার দিয়ে সংসার চালাই। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ দেই।
জেলার সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী উপজেলার পাহাড়ি এলাকা হারিয়াকোনা, বাবেলাকোনা, দার্শিকোনা, চান্দাপাড়া, বকুলতলা, রাঙাজান, খারামোরা, খ্রিষ্টানপাড়া, চুকচুকি, রাজার পাহাড়, ঝিনাইগাতীর কাংশা, ধানশাইল, নলকুড়া, হাতিবান্ধা, নালিতাবাড়ীর পোড়াগাঁও, রামচন্দ্রকুড়া, কাকরকান্দি রূপনারায়নকুড়া, মরিচপুরান ও কলসপাড় ইউনিয়নের আওতাভুক্ত অন্তত ৬০টি গ্রামের হাজারো প্রান্তিক নারী ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ঝিনাইগাতীর একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক আব্দুল আউয়াল বলেন, ওইসব গ্রামের আশপাশের পাহাড়ে উঁচুনিচু টিলা ভ‚মির বিস্তীর্ণ এলাকায় রয়েছে প্রচুর ঘাস আর লতাপাতা। পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী প্রান্তিক নারীরা একসময় কর্মসংস্থানের অভাবে খুবই কষ্টে দিন কাটাত। কয়েক বছর যাবত এই অঞ্চলের আদিবাসী অনেক নারীও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে যমুনা পাড়ি জাতের ছাগলের খামার করেছেন। অল্প দিনেই অনেকে সাফল্য পেয়েছেন। ঝিনাইগাতীর হলদি গ্রামের কৃষক ময়নাল মিয়া ও আকবর হোসেন বলেন, ছাগলের দুধ সহজে হজম হয় এবং এর মাংস উন্নত মানের প্রাণিজ আমিষের উৎস। এ ছাড়া এর ব্যাপক চাহিদার দিক বিবেচনায় পাহাড়ি গ্রাম্য নারীরা আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে ছাগল পালন করে আসছেন। প্রাণী বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক আতাহার আলী বলেন, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ছাগলের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় অর্থনীতিতে ছাগলের গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে ছাগল পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারছে। তিনি আরও বলেন, ছাগলের চামড়া উন্নত মানের, যা রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। অন্যান্য শিল্পের উপকরণ হিসেবে এর শিং দাঁত, খুর ও হাড় থেকে জিলাটিন আঠা, গহনা, চিরুনি, বোতাম, ছাতা ও ছুরির বাট তৈরি করা যায়। এ ছাড়া এর রক্ত সংগ্রহ করে শুকিয়ে হাঁস-মুরগি খাদ্য তৈরি করা যায়। পাশাপাশি এর ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে সারজিক্যাল সুতো, টেনিস, রেকেট সট্রিং, মিউজিক্যাল সট্রিং প্রভৃতি তৈরি করা যায়। শ্রীবরদী উপজেলা পশুসম্পদ ও ভেটেনারি হাসপাতালের উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম সম্রাট বলেন, আমরা প্রতিটি খামারে নিয়মিত টিকা দেই। এছাড়া বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়।